চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। চাঁদার ভিত্তিতে ইচ্ছামতো দোকানপাট করায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকত হারিয়েছে তার প্রকৃত শ্রী। শুধু তাই নয়, অনুমতি ছাড়াই চলছে নানা যানবাহন। দখলে সংকীর্ণ হয়ে গেছে সরকারিভাবে নির্মিত দর্শনার্থীদের হাঁটাচলার পথও।
যত্রতত্র দোকানপাট, হয়রানি, বাড়তি অর্থ আদায়সহ নানা কারণে সৈকত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকরা। তবে দেরিতে হলেও বাণিজ্য নগরীর অন্যতম এ পর্যটন স্পট রক্ষায় এগিয়ে এসেছে জেলা প্রশাসন ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি। দখলদার উচ্ছেদসহ নান্দনিক পতেঙ্গাকে ফিরিয়ে আনতে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি।
জেলা প্রশাসক ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সমকালকে বলেন, পতেঙ্গার সৌন্দর্য ম্লান করে দখলদাররা ইচ্ছামতো নানা স্থাপনা করেছে। এতে পর্যটকরা সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নান্দনিক এ সৈকতে কোনো অনিয়ম-চাঁদাবাজি চলবে না।
তিনি বলেন, অবৈধদের ব্যাপারে প্রশাসন জিরো টলারেন্স। ব্যবসা করতে হলে নিয়মের মধ্যে আসতে হবে। সাময়িক পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। অবৈধ দোকান অন্যত্র পুনর্বাসন করা হবে। আশা করছি, দখলমুক্ত হয়ে দ্রুতই সৈকত আগের চেহারায় ফিরে যাবে।
জানা গেছে, সাগর পাড়ের সৌন্দর্য বর্ধনের অংশ হিসেবে পতেঙ্গা সৈকতের চারপাশে লাগানো হয় নানা জাতের কয়েক হাজার গাছ। বাগানের পাশাপাশি সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগে নির্মাণ করা হয় দর্শনার্থীদের বসার স্থান। তবে এসব নষ্ট করে এখানে অবৈধভাবে করা হয়েছে ঝিনুক, কসমেটিকস, চা, আচার, চকলেট, খাবার দোকানসহ নানা স্থাপনা। রং-বেরঙের ছাতা টানানোয় হঠাৎ কেউ গেলে মনেই হবে না দোকানগুলো অবৈধ।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, ‘প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় যে যেভাবে পেরেছে, জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা করেছে। ফলে পতেঙ্গা সৈকত হারিয়েছে তার নান্দনিকতা। আগের মতো আসছেন না পর্যটক। দখলদার উচ্ছেদ করে সরকারি জায়গা উদ্ধার করা প্রশাসনের প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তিনি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল মালেক জানান, ডিসি পার্ক থেকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত পুরো এলাকা বিশ্বমানের পর্যটন জোন হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। এর জন্য সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্যুরিস্ট পুলিশের অফিস নির্মাণ, সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। থাকবে ইউনিফর্মধারী পরিচ্ছন্নতা কর্মী, পর্যাপ্ত শৌচাগার, চেঞ্জিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া। সেবামূল্য ও বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ ছাড়াও নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসান বলেন, ‘পর্যটক আকৃষ্ট করতে সৈকতের দোকানগুলো সরিয়ে কান্ট্রি সাইডে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির নির্দিষ্ট ম্যাপ অনুযায়ী স্থানান্তর করা হবে। ইতোমধ্যে কয়েকবার পরিদর্শন করা হয়েছে। অবৈধদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সৈকত এলাকায় অস্থায়ী অফিস করা হচ্ছে।’