প্রকল্পের উপযোগিতা যাচাই না করেই নির্মিত শত কোটি টাকার সরকারি ভবন পড়ে আছে বছরের পর বছর। আবার কিছু ভবন বিনা অনুমতিতে তৈরির সময় কর্তৃপক্ষের টনক নড়লে বন্ধ রাখা হয় নির্মাণ কাজ। রাজধানীতে সরকারি এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে যেন শুধুই পকেট ভারি হচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু চক্রের।
রাজধানীতে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেশ কিছু ভবন খালি পড়ে আছে।

১৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঢাকা জেলা পরিষদের ২০ তলা ভবন খালি পড়ে আছে সাত বছরের বেশি সময় ধরে। এমনকি অনিয়ম ঢাকতে গায়েব হয়েছে সব নথি। জেলা প্রশাসকের কাছে একাধিকবার ধরনা দিয়েও মেলেনি কথা বলার সুযোগ।
মিরপুর ৬ নম্বরে নির্মিত বেশ কিছু বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার সাড়ে ৩ বছর পরও খালি ২৫০টিরও বেশি ফ্ল্যাট।
এর মধ্যে আলোচিত ঠিকাদার কোম্পানি জি কে বিল্ডার্স নির্মিত ৮ নম্বর ভবনটি পুরোটাই খালি। কারণ খুঁজতে গেলে অনুমতি মেলেনি ভেতরে প্রবেশের।
২০২২ সালে উদ্বোধনের পর, কথা থাকলেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এখনও পুরোপুরি স্থানান্তর হয়নি। যদিও কর্তৃপক্ষের দাবি, বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেয়া হয়েছে। তবে বাইরে থেকে সাইনবোর্ড দেখা যায় মাত্র দুটি। চেষ্টা করে এখানেও মেলেনি ভেতরে গিয়ে সত্যতা যাচাইয়ের অনুমতি।
অনুমতি নিতে দায়িত্বে থাকা জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের পরিচালক মো. ওয়াহিদুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি।
ঠিক পাশেই থাকা ডাক ভবনেও এখনও খালি পড়ে আছে প্রায় ৫৩ হাজার স্কয়ার ফিট জায়গা। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সময় মতো নির্মাণকাজ শেষ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বুঝিয়েও দিয়েছে। জনগণের রাজস্বের টাকার এমন অপচয় অচিরেই দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে এর উপযোগিতা যাচাই না করে বাস্তবায়নের ফলেই এমনিভাবে অপচয় হচ্ছে দেশের টাকা, যার প্রভাব অন্যান্য জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের ওপর পড়ছে। এ নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনকে আরও কঠোর হতে হবে।
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব সময় সংবাদকে বলেন,
এসব দুর্বাত্তায়ন প্রকল্পের কারণে সরকারের অনেক জনকল্যাণমূলক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ছে। নির্মোহ সমীক্ষার মাধ্যমে প্রকল্পের যথাযথ নিরূপণ ছাড়া প্রকল্পগুলো করতে দেয়া উচিত নয়। ইতোমধ্যে যারা করেছে, তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। এখন এ প্রকল্পগুলোর মূল্যায়ন করে কীভাবে এগুলো বাস্তবমুখী কার্যকর করা যায়, সেই কাজটা করতে হবে।
উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাওয়া এই দেশের প্রতিটি প্রকল্প যেন হয় জনবান্ধন, কেউ যেন নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য দেশের সম্পদ নষ্ট না করতে পারে এমনটাই চাওয়া সংশ্লিষ্টদের।