
মাহমুদুল হাসান:টাঙ্গাইল প্রতিনিধি;
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।আজ রোববার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টায় নির্বাচন কমিশনে (ইসি) এসে সিইসির কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন লতিফ সিদ্দিকী। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বলেন তিনি।
রোববার সিইসি কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন,নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই।যারা আমার সমর্থক তাদেরকে পুলিশ প্রতিনিয়ত টেলিফোন করে ভয় দেখাচ্ছে। এর পরে ইলেকশন করা যায় নাকি?আমার কারণে আমার নেতা কর্মীরা মার খাবে তা আমি মেনে নিতে পারবো না। তাই আমি নিজ থেকেই নির্বাচন থেকে সরে যাচ্ছি।
লিখিত বক্তব্যে লতিফ সিদ্দিক বলেন, ‘অত্যন্ত ভরাক্রান্ত হৃদয়ে জানাচ্ছি যে, আমি ১৩৩ টাঙ্গাইল-৪ জাতীয় সংসদ আসনে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলাম। কিন্তু পরিস্থিতি এতই ভয়াবহ যে নির্বাচন করার পরিবেশ নেই। নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় রাজনৈতিক দলে, নেতায় নেতায় জনমতকে পক্ষে পাওয়ার থাকে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। কিন্তু বর্তমান সংসদ সদস্য বালু ব্যবসায়ী এবং মাদক ব্যবসায়ী সাথে নিয়ে পুলিশের ছত্রছায়ায় আমার উপর হামলা করে গাড়ি ভাঙচুর করে, ২০/২১ জন সমর্থক আহত হয়।আমার নেতাকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এক প্রশ্নে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, “চিফ ইলেকশন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেছি। কিছুই চাইনি, আমি কিছু চাওয়ার লোক না। আমি বলে আসলাম.. এই পরিচালনায় নির্বাচন হতে পারে না। তাই আমি মাঠ ছেড়ে দাঁড়ালাম। ”
তবে ভোট থেকে সরে দাঁড়ালেও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্ধারিত সময় পার হয়ে যাওয়ায় তা কার্যকর হবে না। সেক্ষেত্রে ব্যালটে তার নাম ও প্রতীক থাকবে।
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, “এখন তো আর প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। তাই আমি সরে দাঁড়ালাম। আমি নিরীহ মানুষকে আহত, নিহত হবার সুযোগ কেন করে দেব? যারা আহত নিহত হবে, তাদের দায় আমাকে নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এলাকাকে ত্রাস ও সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করেছে। আমি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। দীর্ঘদিন পুলিশী জুলুমের বিরদ্ধে লড়েছি, কিন্তু পুলিশ এমন উলঙ্গভাবে কোনো প্রার্থীর সমর্থন করে নিরীহ মানুষদের হুমকি দেয়, আমার মিছিল বন্ধ করে সংসদ সদস্যের মিছিলে সহযোগিতা করে এমন দেখেনি। পুলিশের অত্যাচারের পরও আন্দোলন করা যায়, পুলিশ বিপক্ষে অবস্থান নিলে নির্বাচন করা যায় না।শুধুশুধু সময় নষ্ট।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন আমার সমর্থকদের গ্রেফতার করে হয়রানি করছে। সংসদ সদস্যের সরাসরি হস্তক্ষেপে, ভরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার উসকানিতে আমার অফিস ভেঙে দিচ্ছে। পরিস্থিতি এহেন অবনতিতে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে। আমি আপনার মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাতে চাই, আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে আমি সরে দাঁড়ালাম। আমি অসম্মানিত হই সম্মানিত হওয়ার জন্য।
জানাযায়, গত ১৬ ডিসেম্বর লতিফের নির্বাচনী এলাকা কালিহাতীর গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়নের সরাতৈল এলাকায় তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা ও চারটি গাড়ি ভাঙচুর হয়। হামলার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য হাছান ইমামের কর্মী-সমর্থকদের দায়ী করে তিন দফা দাবিতে সেদিনই জেলা রিটার্নিং কার্যালের সামনে অবস্থান নেন লতিফ।
২৪ ঘণ্টা পরও প্রশাসন সেসব দাবির বিষয়ে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় সোমবার তিনি আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন।
তার দাবিগুলো হল- কালিহাতী থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেনকে প্রত্যাহার করতে হবে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। আর সরকারদলীয় প্রার্থীকে রিটার্নিং অফিসারের কাছে মুচলেকা দিতে হবে যে, নির্বাচন পর্যন্ত আর কোনো সহিংসতামূলক কার্যকলাপ তিনি করবেন না।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে তাঁবু খাটিয়ে লতিফ সিদ্দিকী অবস্থান করলেও পরে বৃষ্টির কারণে তাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বারান্দায় সরিয়ে নেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার তার ৮২তম জন্মদিনটি সেখানেই কাটে। অনশনের এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়।
বুধবার ভোরে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ঢাকায় এনে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
লতিফ সিদ্দিকী ২০১৪ সালে মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্যপদ হারানোর পর কালিহাতীতে উপনির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের সোহেল হাজারী।
নিউ ইয়র্কে হজ্জজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে মন্তব্যের পর আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন দলের তৎকালীন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লতিফ সিদ্দিকী।
তিনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হন তিনি। এরপর ১৯৭৩, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে মন্ত্রী হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন।