
আরিফুল ইসলাম সুমন, নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল বাজার সংলগ্ন বিএ ডিসির ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের স্থাপনাসহ অন্তত আড়াই একর জায়গা স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র জবরদখল করে সেখানে অবৈধভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। এ ব্যাপারে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য গত বছরের মে মাসে সরাইল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করলেও সেই দখলদাররা এখনও বহাল তবিয়তেই রয়েছে। আলোচনা চাউর আছে, বিএডিসি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে থানায় জিডি করেই রহস্যজনক
কারণে নীরব রয়েছে। অপরদিকে এই দখলের ঘটনায় বিএডিসি’র করা জিডি’র নথিপত্র অজানা কারণে থানায় ফাইলের স্তুপে চাপা পড়ে আছে। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মফিজ উদ্দিন ভূইঁয়া এই প্রতিবেদককে বলেন, বিএডিসি’র করা জিডি’র বিষয়টি, খোঁজখবর নিয়ে এর অগ্রগতির বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে। বর্তমানে বিষয়টি আমি অবগত নই।
এদিকে ওই বিএ ডিসি’ র জায়গা অবৈধ দখলদারদের দাবি, তারা বিএডিসি কম্পাউন্ডের মসজিদে আর্থিক সহায়তা সহ স্থানীয় সংশ্লিষ্ট
ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ম্যানেজ করেই তারা ওই জায়গা ব্যবহার করে আসছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সরাইল উপজেলার ভাটি অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা কেন্দ্র অরুয়াইল বাজার সংলগ্ন ও তিতাস নদী তীরবর্তী অরুয়াইল মৌজার ছয় দাগে মোট দুই একর ৪০ শতক বিভিন্ন শ্রেণির ভূমি সরকারের পক্ষে বিএডিসির নামে বিএস খতিয়ানভুক্ত। সেই জমিতে অবৈধ দখলদারদের মধ্যে অন্যতম স্থানীয় বিএনপি নেতা ও অরুয়াইল ইউনিয়নের রানীদিয়া গ্রামের প্রয়াত কুতুব উদ্দিনের
ছেলে মোঃ নুরু উদ্দিন। বিএনপি’র এই নেতা বিএ ডি সি’র খোলা চত্বরে স্টিলের ট্রলার তৈরির ডকইয়ার্ড স্থাপন করেছে। বিএডিসি’র পরিত্যক্ত রেস্ট হাউস ও গুদাম নুরু উদ্দিনের দখলে। গুদাম ও রেস্ট হাউসে ডকইয়ার্ডের শ্রমিকরা রাত্রিযাপন করেন। সেখানে বাঁশের খুঁটির মাধ্যমে মাথার ওপর দিয়ে অবৈধ ডকইয়ার্ডে বিদ্যুতের সংযোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নুরু উদ্দিন বিএডিসি’র জায়গার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তিতাস নদী ভরাট করে সেখানে অবৈধভাবে দোকান পাট স্থাপন সহ তার মালিকানাধীন ‘তিতাস ডায়াগনিষ্টিক
সেন্টার’ নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এছাড়া এই বিএনপি নেতা ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে বিভিন্ন মামলার জাল বিছিয়ে সরকারি এইসব মূল্যবান জমি স্থায়ীভাবে দখলে নেয়ার চেষ্টা তদবির অব্যাহত রেখেছেন।
এদিকে বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে, অরুয়াইল মৌজার বিএডিসি’র মালিকানাধীন সেই জায়গাটি অবৈধ দখলমুক্ত করার জন্য বিএডিসির (ক্ষুদ্র সেচ) আশুগঞ্জ জোনের সহকারী প্রকৌশলী সরাইল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। থানার সেই জিডিতে রাণীদিয়া
গ্রামের নুরু উদ্দিন সহ অবৈধ দখলদার ১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে বিএডিসি ও তিতাস নদীর জায়গার অন্যতম দখলদার নুরু উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জায়গাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে, তাই আমরা ব্যবহার করছি। এর বিনিময় হিসেবে এখানকার মসজিদে আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে আমরা আলোচনা করেই এই জায়গাটি ব্যবহার করছি। নদী দখলের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে
বলেন, তিতাস পাড়ের এই জমি স্থানীয় এক হিন্দু পরিবার থেকে কিনে দলিল করেই এখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে।
এ বিষয়ে অরুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও অরুয়াইল বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবু তালেব মিয়া এই প্রতিবেদক কে বলেন, নুরু উদ্দিন বিএডিসি’র জায়গা সহ তিতাস নদীর বেশ জায়গা অবৈধভাবে ভরাটের পর দখল করে সেখানে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন। অরুয়াইল ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক ও অরুয়াইল বাজারের ইজারাদার মোঃ বোরহান মিয়া
বলেন, বিএডিসি’র এই জমি স্থানীয় বর্তমান মূল্যে প্রায় ২০ কোটি টাকার বেশি হবে। যা বিএনপি নেতা নুরু উদ্দিনের দখলে রয়েছে। সেই জমিতে অন্য দখলদার থাকলেও তারা নুরু উদ্দিনের সাথে কথা বলেই সরকারি এই জায়গা দখল করে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। নদীর জায়গা দখল করে নুরু উদ্দিন সেখানে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন।
এই বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী ওবায়েদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে আমরা রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারছি না। সেই জমি অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য আমরা সরাইল থানায় জিডি করেছি। এছাড়া জায়গাটি নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকায় জায়গাটিতে সীমানা প্রাচীরও নির্মাণ করতে পারছি না।
এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এস এম মোসা এই প্রতিবেদককে বলেন, জায়গাটি বিএডিসি মালিকানাধীন। তারা কেনওই দখল দারদের উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় জোরালো প্রদক্ষেপ নিচ্ছেন না, বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়। তারপরও তারা যদি সহযোগিতা চায়, তাহলে প্রশাসন থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে।