
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
এক সময়ে যুবদল নেতা জি কে শামীম যেভাবে হয়ে উঠেছেন যুবলীগ নেতা, শামীম এর জন্য যুবলীগের পদটা যেন হয়ে উঠেছে আলাদিনের চেরাগ! র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম। সুনির্দিষ্ট চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির অভিযোগে আটক জি কে শামীম এক সময় ছিলেন যুবদল নেতা। সরকার পরিবর্তনের পর ভোল পালটে যোগ দেন যুবলীগে। বাগিয়ে নেন দলের পদ। হয়ে ওঠেন প্রভাবশালী নেতা, বাগাতে থাকেন সরকারি টেন্ডার। এক সময় তার নামই হয়ে যায়, টেন্ডার শামীম। শামীম নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত আফসার উদ্দিন
মাস্টারের ছেলে। তিনি ছিলেন হরিহরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিন ছেলের মধ্যে জি কে শামীম দ্বিতীয়। বড়ো ছেলে গোলাম হাবিব নাসিম ঢাকায় জাতীয় পার্টির (জাপা) রাজনীতি করেন।যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জি কে শামীম এক সময় যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। ছিলেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের ডান হাত। কিন্তু সদা ক্ষমতাপিয়াসী শামীম আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দল পালটে ফেলেন। যুবদল ছেড়ে ভিড়েন যুবলীগের সঙ্গে। এক সময় পান যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদকের পদ। তবে
যুবলীগের নেতারা বলছেন, আসলে তার যুবলীগের কোনো পদ নেই। তিনি নিজে নিজেই যুবলীগের নেতা এবং কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক দাবি করতেন। আবার তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বলেও শোনা যাচ্ছেন।যেভাবে উত্থান : যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে গুলশানে শপার্স ওয়ার্ল্ড মার্কেটের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় যুবলীগের (দক্ষিণ) সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিলকীকে। ঐ ঘটনার দুই দিন পর র্যাবের হাতে আটক ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের নেতা তারেক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। মতিঝিল
এলাকার টেন্ডারবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন মিলকী ও তারেক। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই জন নিহত হওয়ার পর ফাঁকা স্থানটি দখল করেন জি কে শামীম। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেন শামীম। ঐ পদে এর আগে ছিলেন এস এম মেজবাহ হোসেন বুরুজ। ২০১৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। জি কে শামীম’এর এলাকার স্থানীয়রা জানান, প্রাইমারি ও হাইস্কুল পাস করার পর শামীমকে আর এলাকায় দেখা যায়নি। ঢাকায় আসার পর এজিবি কলোনি, হাসপাতাল জোন এবং মধ্য বাসাবোতেই পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন শামীম। ৪ নম্বর ওয়ার্ড
যুবদলের মাধ্যমেই তার রাজনীতি শুরু। পরবর্তী সময়ে মির্জা আব্বাসের ভাই মির্জা কালু ও মির্জা খোকনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় এবং তাদের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে গণপূর্ত ভবনের ঠিকাদারি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণে নেন। ঢাকা মহানগর যুবদলের সহ-সম্পাদকের পদও বাগিয়ে নেন তিনি। বিএনপি আমলে গণপূর্ত ভবন ছিল তার দখলে। একসময় মির্জা আব্বাস আর খালেদা জিয়ার ছবিসংবলিত জি কে শামীমের ব্যানার-পোস্টার সবুজবাগ-বাসাবো এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শোভা পেত। সাত জন অস্ত্রধারী দেহরক্ষীর প্রটেকশনে চলেন জি কে শামীম। সবার হাতেই শটগান। গায়ে বিশেষ
সিকিউরিটির পোশাক। তাদের একেকজনের উচ্চতা প্রায় ছয় ফুট। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেফতারও হয়েছিলেন জি কে শামীম। বাংলাদেশের সকল ঠিকাদারকে গণপূর্তে কাজ করতে হলে তাকে বলে কাজ করতে হতো। বাংলাদেশের প্রথম সারির সকল ঠিকাদার তার বাইরে ভয়ে কথা বলার সাহস পেতেন না। যদি কেউ জি কে শামীমকে না জানিয়ে দরপত্র ক্রয় করতেন তার পরিণাম হতো ভয়ংকর। এমনকি জীবনের হুমকিও ছিল, একাধিক বাড়ি-ফ্ল্যাটের মালিক শামীম : বাসাবো এলাকায় পাঁচটি বাড়ি এবং একাধিক প্লট রয়েছে শমীমের। বাসাবোর কদমতলায়
১৭ নম্বরের পাঁচতলা বাড়িটি জি কে শামীমের। বনানীর ওল্ড ডিওএইচএসে নিজের একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে তার। বাসাবোতে তিনটি ভবন এবং ডেমরা ও দক্ষিণগাঁও ছাড়াও সোনারগাঁ উপজেলা, বান্দরবান ও গাজীপুরে কয়েকশ বিঘা জমি কিনেছেন তিনি। বর্তমানে জি কে বিল্ডার্সের অধীন সরকারের ১৭টি স্থাপনার নির্মাণ কাজ চলছে। এর মধ্যে ৩০ কোটি টাকায় গাজীপুরে র্যাব ট্রেনিং সেন্টার, ৪০০ কোটি টাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও পঙ্গু হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণ, ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ, র্যাব সদর দপ্তরে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার কাজ, পাবলিক
সার্ভিস কমিশন ভবনে ১২ কোটি টাকার কাজ, সচিবালয়ে ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ভবন নির্মাণ, ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিজ্ঞান জাদুঘর নির্মাণ প্রকল্প উল্লেখযোগ্য।বাসাবো এলাকায় জি কে শামীমের বিষয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চান না। আর খুলবেনই বা কোন সাহসে, যখন দেখেন শামীম চলছেন অস্ত্রধারী ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। যার গাড়ির সামনে-পেছনে থাকে ক্যাডারদের গাড়ি। জি কে শামীমের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি গৃহায়ন ও গণপূর্তের ঠিকাদাররাও। তার নাম শুনলেই আঁতকে ওঠেন এলাকার সাধারণ মানুষ।এক কথায় বলতে গেলে ঠিকাদারদের জন্য আতঙ্কের নাম ছিল জি কে শামীম তবে কিছু কিছু সাধারন মানুষ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে না চাইলেও আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন তার ব্যাপারে, এলাকার সাধারণ মানুষ