
নিউজ ডেস্ক:
আজ ১৩ ডিসেম্বর পটিয়া ও চন্দনাইশের দোহাজারী হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল পটিয়া থানার মোড়ে পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর হামলার মাধ্যমে শুরু হওয়া যুদ্ধ দক্ষিণ চট্টগ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বিভিন্ন এলাকা দখলে নেয় হানাদার বাহিনীরা। শুরু করে বাঙ্গালি নিধনযজ্ঞ।পাকিস্তানি বাহিনীর ওই গণহত্যায় পটিয়া সদর, বাহুলি মিত্রপাড়া, মোজাফফরাবাদ, কেলিশহর, হাইদগাঁও, ঈশ্বরখাইন ও ধলঘাটে নিহত হয় হাজারো সাধারণ মানুষ। ২০ মে পাকসেনারা ইন্দ্রপোল এলাকায় মুক্তিবাহিনীর বাধা পেয়ে দোহাজারী ফিরে যাওয়ার সময় পাকসেনারা ইন্দ্রপোল থেকে মুন্সেফবাজার পর্যন্ত এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। এতে খাসমহাল এলাকায় জমিতে কর্মরত কয়েকজন দিনমজুর মারা যায়।এদিকে খবর পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে পাকসেনার একটি দল
ইন্দ্রপোল আসেন। অপরদিকে দোহাজারীর পাকবাহিনীর দলটি কমলমুন্সির হাট, গিরি চৌধুরী বাজার, করল এলাকার ভিতর দিয়ে প্রবেশ করে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে ইন্দ্রপোল আসেন। এসময় পাকিস্তানি বাহিনী ইন্দ্রপোল লবণ শিল্প এলাকায় অগ্নিসংযোগ করে।পরে তারা ১৪ ডিসেম্বর ইন্দ্রপোল সেতুটি ডিনামাইটের সাহায্যে উড়িয়ে দিয়ে চট্টগ্রামে চলে গেলে পটিয়া হানাদার মুক্ত হয়।১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ভারতীয় মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে টিকতে না পেরে পাক হানাদার বাহিনীর সৈন্যরা পালিয়ে গেলে দোহাজারী হানাদার মুক্ত হয়। এখানকার বারুদখানা বরুতের ঘাঁটি, কিল্লাপাড়া কিল্লার ঘাঁটি ছিল হানাদার বাহিনীর আশ্রয়স্থল।দোহাজারীস্থ সড়ক ভবন, স্কুল ভবন, রেলওয়ে ষ্টেশন কোয়ার্টারসহ অন্যান্য স্থাপনা সমূহে পাক বাহিনীর সৈন্যরা এদেশীয় দোসর
রাজাকার, মোজাহিদ ও আল্ বদর বাহিনীর সাথে অবস্থান নিয়ে মানুষ হত্যা, লুটতরাজ, নারী নির্যাতন, জ্বালাও-পোড়াও ইত্যাদি অপকর্ম পরিচালনা করতো। পাকিস্তানি বাহিনীরা,১২ ডিসেম্বর দোহাজারী শংখ ব্রীজ সংলগ্ন শংখ নদীর দক্ষিণ পাড়ে মিত্র ও মুক্তি বাহিণীর সৈন্যরা বালু চরের বাংকারে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিলে উত্তর পাড়ে অবস্থান নেয় পাক বাহিনীর সৈন্যরা। ওইদিন সকালে শুরু হয় উভয়ের মধ্যে যুদ্ধ। একটানা ৩ দিন উভয়ের মধ্যে বিরতিহীন যুদ্ধ চলার পর প্রচন্ড আক্রমনের মুখে টিকতে না পেরে ১৪ ডিসেম্বর বিকেলে হানাদার বাহিনী সৈন্যরা দোহাজারী
ত্যাগ করে বিভিন্ন পথে বিতাড়িত হতে বাধ্য হয়। পরদিন বিজয়ের পতাকা উত্তোলন করেন ৫৪ নম্বর সেক্টর কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলী হিরু।১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতার শিকার অনেক মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীন সোনার বাংলাদেশ পেয়েছি আমরা। আজ এই দিনে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে হানাদারমুক্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ পটিয়া সহ চন্দনাইশ সাতকানিয়া লোহাগাড়া বাঁশখালী আনোয়ারা কর্ণফুলী ও বোয়ালখালী সহ। দক্ষিণ চট্টগ্রামে হানাদারমুক্ত হয়।তাই আজ ১৩ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত, দিবস হিসেবে পালিত হয়।