নগরীর বায়েজিদ থানাধীন ২ নং জালালাবাদের কুলগাঁও গ্রামের কবির আহমদ সওদাগরের বাড়ির শতবর্ষী পুকুর অবৈধভাবে ভরাট করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এই ব্যাপারে গত ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০ ইং তারিখে স্থানীয়রা পরিবেশ অধিদপ্তরে একটি আবেদন করেন। জানা গেছে, এলাকার হাজার হাজার মানুষের ব্যবহারের একমাত্র পুকুরটি ভরাট করা হলে পুরো এলাকায় পানির হাহাকার শুরু হয়। এই ভরাট কাজে যুবলীগের নাম ব্যবহারকারী সানী নামের এক ব্যক্তির প্রভাবে এলাকার সাধারণ বাসিন্দারা মুখ খুলছে না।
এছাড়া স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুকুর ভরাট করে দালান নির্মাণের প্রস্তুতির অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মোঃ মোবাশ্বের, পিতা- কালামিয়া, নজর আহমেদ, পিতা- মরহুম নূর হোসেন, মোঃ খোরশেদ, পিতা এম ইউনুস, মোঃ মুসা, পিতা- মরহুম অলি আহমদ, মোঃ মোসলেম মিয়া, পিতা- মরহুম কবির আহমদ সর্বসাং কবির আহমদ সওদাগরের বাড়ি, কুলগাঁও, তারা এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি। পুকুরটি আর.এস. ৫২৫ নং খতিয়ানের আর.এস. ৪৫৬০ দাগ সামিল বি.এস. খতিয়ান নং- ১১৪৬, বি.এস. দাগ নং- ৬৫৬০ এর আন্দর ২৭ শতক বা ১৩.৫ কড়া পুকুর।
উক্ত শতবর্ষী পুকুরটির মালিক দাবি করা ব্যক্তিগণ পুকুরটি রাতের অন্ধকারে ভরাট করে দালান করার পায়তারা করছে। মুসলিম মিয়ার ছেলে মোঃ সরওয়ার এই সবকিছুর মূল হোতা হিসেবে কাজ করছে। এলাকার কাউকেই তোয়াক্কা না করে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে পুকুরটি ভরাট করে নিচ্ছে বলেও জানা যায়।
প্রসঙ্গত, নগরীতে কোনো জলাশয় ভরাট করতে হলে ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং সিটি করপোরেশনকেও অবহিত এবং অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু তার কোনো কিছুই পালন করা হচ্ছে না অনেক ক্ষেত্রে। ঐতিহ্যবাহী এ পুকুরটিকে ভরাট করার ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কোনো সংস্থা থেকেই অনুমতি নেয়নি। এদিকে তপশীলোক্ত পুকুরটি ভরাট করার প্রসঙ্গে এলাকাবাসী পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, সহকারী কমিশনার(ভূমি) বরাবর অভিযোগ দাখিল করে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক নুরুল্লাহ নূরী বলেন, অভিযোগকারী এলাকাবাসী আমাদের এখানে অভিযোগ করেছেন। এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে আমরা শীঘ্রই এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিব। অভিযুক্ত সরওয়ার বলেন, পুকুরটির কয়েক জন মালিকের মধ্যে তিনিও একজন। তবে পুকুর ভরাটের জন্য সরকারি অনুমতি নেয়া হয়নি, শ্রেণি পরিবর্তনও করা হয়নি। নিজের অংশ বুঝে নেয়ার জন্য মাটি ভরাট করেন তিনি। তিনি বলেন, অভিযোগকারী এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন অভিযোগকারী বলেন, পুকুরটিতে সবার অংশ রয়েছে। অতীতে এলাকার কোন ঘরবাড়িতে আগুন লাগলে এই পুকুরের পানি দিয়ে তা নিবারন করার নজির আছে। এছাড়া এ পুকুরটি এলাকার মানুষজন দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করতো। কিন্তু অভিযুক্ত সরওয়ার কারো কোন বাধাবিপত্তি তোয়াক্কা না করে, প্রভাব দেখিয়ে ও লালিত কয়েকজন গুন্ডাপান্ডাদের ভাড়া করে জোরপূর্বক রাতের অন্ধকারে মাটি ভরাট করে। যার ফলে এলাকার মানুষ তাদের দৈনন্দিন পানি ব্যবহারে বিরাট সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তারা আরো বলেন, সরওয়ার কর্তৃক মানুষের উপর এ নির্যাতন অমানবিক।
এলাকার মানুষকে এই দুর্ভোগ থেকে মুক্ত করতে তারা পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, ভূমি কমিশনার ও সংশ্লিষ্টদের সহায়তা কামনা করেন। উল্লেখ্যঃ সরওয়ারের ভাতিজা ও তার ভাড়াটে গুন্ডা মোহাম্মদ সানি নামের একজন ব্যক্তি সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তাদেরকে সার্চ করেন। তিনি এলাকার প্রভাবশালী যুবলীগ কর্মী বলেও দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘আমি অক্সিজেনের সাংবাদিকদের জন্মদাতা। আমি যা বলি সাংবাদিকরা তা করতে বাধ্য। তিনি সাংবাদিকদের ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার ও প্রাণনাশের হুমকিদমকিও দেন।’