নিউজ ডেস্কঃ
পুরো পৃথিবীতে করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে কাঁপছে সারা পৃথিবী পৃথিবীর বড় বড় রাষ্ট্রগুলো হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে করোনা মোকাবেলায় ঠিক সেই সময় বাংলাদেশের, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লকডাউনে যারা বন্দি হয়েছে তাদেরকে আমি চেষ্টা করব তাদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিতে। নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী রোখার চেষ্টায় নজিরবিহীন লকডাউনের মধ্যে হঠাৎ কর্মহীন হয়ে ঘরে আটকে থাকা প্রতিটি দরিদ্র মানুষের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার সন্ধ্যায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এই পরিকল্পনার কথা বলেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, “আজকেও আমি অনেকগুলো এসএমএস পেলাম যে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ মানে… খাবারের জন্য হাহাকার। আমরা চেষ্টা করব প্রত্যেকটা মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার।” ৫০টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রতিনিধিরা এদিন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদানের চেক হস্তান্তর করতে তার কার্যালয়ে গেলে সরকারপ্রধানের পক্ষে তার মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস তা গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ওই অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, জেলা বা উপজেলা- যে কোনো জায়গা থেকে যখনই কোনো পরিবারের দুর্ভোগের খবর পাচ্ছেন, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। “এভাবে আমি মনে করি সকলেই যদি খোঁজ খবর রাখি… আসলে ‘সকলে আমরা সকলের তরে,, ‘মানুষ মানুষের জন্য’- এই নীতিতে যদি বিশ্বাস করি, তাহলে কিন্তু মানুষের এই অসুবিধাটা থাকে না “ প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অনেক মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, আমি প্রতিনিয়তই খবর পাই।… বিশেষ করে যারা একেবারে ছোটখাটো ব্যবসা বাণিজ্য করত বা একটু কিছু কাজ করে খেত, তাদের কাজ করার সুযোগ নেই। পাশাপাশি আমাদের দিন মজুর থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সকলে আজকে কষ্ট ভোগ করছে।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে কেউ ভিক্ষা চাইতেও আসত না। “এমনকি এই শবে বরাতে রুটি বিলাতে গেলে দেবার লোকও পাওয়া যাচ্ছিল না। আসলে আর্থিকভাবে মানুষের এত স্বচ্ছলতা এসেছিল, কিন্তু এবারের করোনাভাইরাসের ফলে অনেক মানুষই এখন খুবই কষ্ট পাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য সত্যিই দুঃখজনক।”কষ্টে থাকা এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি, রাজনৈতিক কর্মী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।তিনি বলেন, সকলকে বলব, যে নিজেরা একটু খোঁজ নেবেন। সবাই তো আর হাত পাততে পারবে না, সবাই এসে চাইতেও পারবে না। এরকম বৃহৎ একটা জনগোষ্ঠী আছে, তাদের কথা আমাদের চিন্তা করতে হবে।
” বিশ্বজুড়ে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নোভেল করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৮৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। দেশের অর্থনীতির ওপর এর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব থেকে উত্তরণে প্রধানমন্ত্রী রোববার সকালে একটি কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, যার মধ্যে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধিসহ চার ধরনের কার্যক্রম রয়েছে। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি, লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ, সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০ উপজেলায় বয়স্ক ভাতা
এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের জন্য ভাতা কর্মসূচির আওতা বাড়িয়ে শতভাগে উন্নীত করা এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত অন্যতম কার্যক্রম গৃহহীন মানুষদের জন্য গৃহ নির্মাণ কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন করার কথাও রয়েছে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে বলেন, “এরকম অবস্থা আমরা কোনোদিন দেখিনি যে সারা বিশ্বের ২০২টা দেশ এবং অঞ্চলে এমন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।“বর্তমানে এমন একটা সময় এসেছে, এই সময়টায় দেখা যাচ্ছে কি ধনী, কি দরিদ্র… যে যত সম্পদশালী, বিত্তশালী হোক বা
বিত্তহীন হোক, কোনো ভেদাভেদ নাই। দেখা যাচ্ছে এই যে ভাইরাসটা সকলের জন্যই একটা আতঙ্ক বয়ে নিয়ে আসছে।”বাংলাদেশের পরিস্থিতি সে তুলনায় ‘এখনও যথেষ্ট ভালো’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “সামনে শবে বরাত। সেই সময় সবাই দোয়া করবেন। যার যার ঘরে বসে। মসজিদে যাওয়া না। “ঘরে বসে দোয়া করতে হবে যেন এই বিপদ থেকে আল্লাহ বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের জনগণকে এবং বিশ্ববাসীকে যেন মুক্তি দেয়।”