নিউজ ডেস্কঃ
বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে প্রাইভেট হাসপাতাল গুলো বন্ধ রেখেছে কিছু কিছু সরকারি হাসপাতাল প্রায় বন্ধের মুখে গাজীপুরে এমনই একটি দৃশ্য গাজীপুরের প্রায় সব হাসপাতালেই বন্ধ। গাজীপুরের ছয়টি সরকারী হাসপাতালের মধ্যে ৫ টিতেই সাধারণ চিকিৎসা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও কাগজে-কলমে সব হাসপাতালই চালু। রোগীরা ভয়ে হাসপাতালে আসছেন না। চিকিৎসকসহ জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের ৯৫ স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্তের পর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে আশার খবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গত বৃহস্পতিবার থেকে করোনা রাগীদের জন্য চিকিৎসা সেবা চালু করছে।
জানা যায়, দেশে করেনা সংক্রমন শুরুর প্রথম ধাপেই বন্ধ হয়ে যায় জেলার প্রাইভেট হাসপাতালগুলো। শ্রীপুর, কাপাসিয়া, কালীগঞ্জ ও কালিয়াকৈর- এই ৪ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, টঙ্গীতে শহীদ আহসানউল্লাহ মাষ্টার জেনারেল হাসপাতাল ও গাজীপুর শহরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মিলিয়ে মোট ৬ টি সরকারী হাসপাতালে রোগীদের সাধারণ চিকিৎসা দেওয়া হত। এর বাইরে বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট্রের অধীনে গাজীপুর মহানগরীতে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতালে রোগীদের একটি বড় অংশ চিকিৎসা সেবা পেতো।
কিন্তু টঙ্গীর আহসানউল্লাহ মাষ্টার হাসপাতাল ছাড়া জেলার সব উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসকসহ ৯৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হলে থমকে যায় চিকিৎসা কার্যক্রম। মূলত মহামারী করোনাভাইরাসে স্বাস্থ্যকর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে চাচ্ছেন না সম্প্রতি ডাক্তার নার্স সংক্রমণ হওয়া এসব হাসপাতালগুলো ভয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ২১ জন চিকিৎসক, ২৪ জন নার্স এবং ৫০ জন স্বাস্থ্যকর্মী। এসব কারণে কালীগঞ্জ, কাপাসিয়া ও কালিয়াকৈর উপজেলা হানপাতাল গত কয়েকদিন ধরে কাগজে-কলমে খোলা। ভয়ে রোগী ওইদিন হানপাতালে যান না। রোগীর অভাবে প্রায় বন্ধ স্বাস্থ্য সেবা। এতদিন চিকিৎসা দিয়ে টিকে ছিল শ্রীপুর উপজেলা হাসপাতাল।
বৃহস্পতিবার ওই হাসপাতালের ৩ স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হন। তারপরও ওই হাসপাতাল ঘিরেও আতংক ছড়িয়ে পড়ে। তবে শ্রীপুর উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রণয় ভূষণ দাস জানান, তাদের তিনকর্মী করোনায় আক্রান্ত হলেও হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রমে সমস্যা হয়নি। তবে রোগী কিছুটা কম। কয়েকদিন আগে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতালের ৭ চিকিৎসকসহ ৩০ কর্মী আক্রান্ত হলে ওই হাসপাতালের রোগী আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। একমাত্র টঙ্গীর শহীদ আহসানউল্লাহ মাষ্টার হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা চালু আছে।
এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ১৬ এপ্রিল শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে করোনা রোগীদের হাসপাতাল ঘোষণা করে। প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজার সাধারন রোগী ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেন। করোনা হাসপাতাল করায় এখন ওই হাসপাতালের সাধারন চিকিৎসা বন্ধ হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ১০০ শয্যার সুবিধা নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে এ হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো. খলিলুর রহমান করোনা হাসপাতালে বৃহস্পতিবার বিকেল ৬টা পর্যন্ত একজন রোগী ভর্তি আছেন জানিয়ে বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক, নার্সসহ ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সমন্বয়ে পৃথক একাধিক টিম গঠন করা হয়েছে। থাকছে পুরুষ, মহিলা ও শিশুদের ওয়ার্ড। প্রতি ওয়ার্ডের জন্য চিকিৎসক, নার্স, আয়া, ওয়ার্ডবয়, ক্লিনার সমন্বয়ে আলাদা টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিম পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ওয়ার্ডে একাধারে সাত দিন দায়িত্ব পালন করবেন।
এ সময় দায়িত্বরত প্রত্যেকেই হাসপাতালে অবস্থান করে টানা সাত দিন করে সেবা দেবেন। এই সাত দিন তাদের হাসপাতালের ভেতরেই থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডিউটি শুরু হলে হাসপাতালের ভেতরে অবস্থান করা কোনো চিকিৎসক ও নার্স বাইরে বের হতে পারবেন না। সাত দিন ডিউটি সবাই ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টানে থাকবেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে রোগীর চিকিৎসা,খাওয়া ও প্রয়োজনীয় ঔষুধপত্র হাসপাতাল থেকেই বিনামূল্যে দেওয়া হবে।
রোগীদের জন্য ১০টি আইসিইউ বেড, চারটি ভেন্টিলেটর, সিসিইউ ও ডায়ালাইসিস প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শিশু ও বিশেষ রোগী ছাড়া কোন দর্শণার্থীকে করোনা ইউনিটে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। তাছাড়া বাসায় কোয়ারেন্টাইনে থেকে চিকিৎসারত করোনা রোগীদের টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হবে। এজন্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসকের সমন্বয়ে আলাদা টিম চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকবে।’ ধন্যবাদ আমাদের সাথে থাকার জন্য নিউজটি বেশি বেশি করে শেয়ার করুন,