
নিউজ ডেস্কঃ
বাংলাদেশের দীর্ঘতম মানব জিন্নাত আলীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে, বাংলাদেশের দীর্ঘতম মানব কক্সবাজারের সন্তান জিন্নাত আলী দীর্ঘ আয়ু পেলেন না। তিনি মাত্র ২৪ বছর বয়সে আজ মঙ্গলবার ভোরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। পরে আজ বিকেলে তার জানাযা শেষে তাকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মৃত্যুকালে সে বয়স পেয়েছিলেন মাত্র ২৪ বছর। জিন্নাত আলী কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল গ্রামে ১৯৯৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা গ্রামের বর্গাচাষী আমীর হামজা, তার মায়ের নাম ছফুরা বেগম। তাদের এক মেয়ে, তিন ছেলের মধ্যে জিন্নাত আলী তৃতীয়।আজ মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল চেরাং এলাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তার নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাযায় কক্সবাজার সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল, উপস্থিত ছিলেন এসময় আরো উপস্থিত উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সরওয়ার উদ্দিন, রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ আবুল খায়ের, গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছৈয়দ নজরুল ইসলাম, কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু ইসমাঈল মোহাম্মদ নোমান ও পরিবারের সদস্যরাসহ প্রায় ৩০ জন অংশ নেন। জানাযা শেষে তাকে স্থানীয় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
জানা গেছে, হরমোনের জটিলতার কারণে ১১ বছর বয়সে জিন্নাত আলীর দেহের উচ্চতা অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সময় বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা জানান, তার মস্তিষ্কে একটি টিউমার পিটুইটারি গ্রন্থিকে প্রভাবিত করার ফলে তার উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তার উচ্চতা ছিল ৮ ফুট ২.৮২ ইঞ্চি। জিন্নাত আলীর বড় ভাই মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, জিন্নাত আলী দীর্ঘদিন ধরে মস্তিষ্কে টিউমারজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। তার ডায়বেটিকসও ছিল। কয়েকদিন আগে মাথায় টিউমারের সমস্যা বেড়ে গেলে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত রবিবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী’র অধীনে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছিল।
অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী জানান, রবিবার সকালে জিন্নাত আলীকে যখন নিউরোসার্জারিতে আনা হয়, তখন তিনি অজ্ঞান ছিলেন। তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়া হয়েছিলো। ওনার মস্তিষ্কে টিউমার ছিলো এবং সেটা খুব বড়। টিউমার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ ডিফিকাল্ট ছিলো।উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দেড় বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছিলেন এই জিন্নাত আলী। প্রধানমন্ত্রী জিন্নাত আলীর চিকিৎসার সহায়তা দিয়েছিলেন এবং প্রধানন্ত্রীর তহবিল থেকে আর্থিক সহযোগিতায় জিন্নাত আলীকে তার এলাকায় একটি দোকানও করে দেয়া হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দীর্ঘমানব জিন্নাত আলীর বাসস্থান ও জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থাও করে দেয় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। চিকিৎসার পাশাপাশি তাকে দেয়া হয় একটি পাকা ঘরসহ একখন্ড জমি। রামুর গর্জনিয়া বাজারে তার নামে ০.০০৩৮ একর জমি বন্দোবস্ত দিয়ে সেই জমিতে নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে নিত্যপণ্যসহ একটি দোকান ঘর। ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল দোকানে ৫০ হাজার টাকার মালামাল দিয়ে দোকানঘরটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন।বাংলাদেশের দীর্ঘমানব জিন্নাত আলীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন, রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা প্রমুখ।