করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বিধ্বস্ত পৃথিবীতে আজ পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৩৩ বছর ধরে বিশ্বজুড়ে পালিত হয়ে আসছে দিনটি। তবে এবারের প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন।কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির মধ্যে এল পয়লা মে—আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। একদিকে ভাইরাসের আক্রমণে জীবন হারানোর আশঙ্কা, অন্যদিকে উপার্জনহীন অবস্থায় অনাহার-অর্ধাহারে দিনযাপনের দুঃখ–কষ্ট। উভয় দিক মিলিয়ে বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষ আজ এক গুরুতর সংকটের মুখোমুখি।
কিন্তু আমরা মে দিবসের সংগ্রামী ঐতিহ্যের কথা, সুদীর্ঘ সংগ্রামের অর্জনগুলোর কথা বিস্মৃত হতে পারি না। বরং ত্যাগ-তিতিক্ষাময় অদম্য অক্লান্ত সেই সব সংগ্রামের স্মৃতি থেকে প্রেরণা ও শক্তি অর্জন করতে চাই। আমরা বাংলাদেশের ও সারা বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষকে মে দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন যুক্তরাজ্য লন্ডন মহানগর জাতীয় পার্টির সহ সভাপতি, লন্ডন টাওয়ার হ্যামলেন্টসের সাবেক কাউন্সিলার, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, পল্লীবন্ধু স্মৃতিপরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্মআহব্বায়ক ও রুহুল আমিন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্টাতা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব রুহুল আমিন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের তাবৎ দেশ আজ আতঙ্ক ও দিশেহারা গ্রহের বাসিন্দা।
পৃথিবীর যে শতাধিক রাষ্ট্র খুব গুরুত্বের সঙ্গে মহান মে দিবস পালন করে তারাও আজ শঙ্কিত। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই দিনটিকে লেবার ডে বা ওয়ার্কার্স ডে হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। অসংখ্য দেশে এই দিনটিতে ছুটি থাকে। মে দিবস শ্রমিকদের দাবি আদায় করার সংগ্রামে প্রাণ বিসর্জনের স্মৃতিকে সম্মান দেখানোর দিন। এদিন একজন শ্রমিক উন্নততর জীবনের স্বপ্ন দেখে। কারণ মে দিবস সমগ্র বিশ্বকে বৈষম্য ও শোষণমুক্ত একটি সমাজ উপহার দিয়েছে। কিন্তু করোনাকবলিত বিশ্বে লকডাউন, আইসোলেশন ও সামাজিক দূরত্ব শ্রমজীবী মানুষের জন্য অভিশাপ বয়ে এনেছে। ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উন্নত দেশগুলোতে কোয়ারেন্টাইনে রেখে তাদের সহযোগিতা করা সম্ভব।
পক্ষান্তরে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সেই তুলনায় মেহনতি মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যেমন, বাংলাদেশের ৫০ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক শহরকেন্দ্রিক (যদিও এদেশের শ্রমিকদের মাত্র ১৫ শতাংশ শহুরে-শ্রমিক হিসেবে কাজ করে), এছাড়া আছে দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ এবং কৃষিখাতে জড়িত বিপুল দরিদ্র জনগোষ্ঠী। এসব স্বল্প আয়ের মানুষকে করোনা থেকে রক্ষা করা যেমন জরুরি তেমনি দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য তাদের কাজে লাগানোও প্রয়োজন। তাছাড়া চিকিৎসা সেবাখাতে শ্রমজীবী নারী-পুরুষের চাহিদা বর্তমান সংকটে অনেক বেশি। চিকিৎসক-নার্সদের পাশাপাশি হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়, আয়া, ক্লিনার করোনা মোকাবিলায় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন।
অর্থাৎ সংকটময় মুহূর্তে চিকিৎসাসেবায় শ্রমজীবী মানুষের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিশেষে মহান মে দিবসে মেহনতি মানুষের প্রতি ভালোবাসা আর সংহতি প্রকাশের বার্তা ছড়িয়ে যাক বিশ্বময়। সকল শ্রমজীবী মানুষের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও সালাম। সবাইকে মে দিবসের শুভেচ্ছা, এবং প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারনে দুর্ভোগে পড়া ও খেটে খাও দিনমুজুর গরিব অসহায় মানুষের পাশে যার যার অবস্থান থেকে দাঁড়ানোর আহব্বান করছি।