নিউজ ডেস্কঃ
বাংলাদেশ ক্রিকেট এর জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার হাতের ব্রেসলেট বিক্রি হলো ৪২ লক্ষ টাকায়, ব্রেসলেটে খোদাই করে লেখা ‘মাশরাফি’। গত ১৮ বছর ধরে ব্রেসলেটটি শোভা পাচ্ছিল বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়কের হাতে। এখন থেকে আর নয়। তাঁর ভীষণ প্রিয় এ ‘সঙ্গী’ এখন শোভাবর্ধন করবে সংগ্রাহকের কাছে। নিলামে ৪২ লক্ষ টাকায় বিক্রি হলো মাশরাফির বিন মর্তুজার ব্রেসলেট।
করোনা যুদ্ধে শামিল হতে প্রিয় এই ব্রেসলেট নিলামে তুলেছিলেন তিনি। আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে শেষ হওয়ার কথা ছিল নিলামের সময়। আয়োজক ছিল ‘অকশন ফর অ্যাকশন’। নিলামের সময় শেষেই লাইভে ব্রেসলেটের চূড়ান্ত দাম জানানোর কথা ছিল তাদের। কারিগরি সমস্যায় লাইভে আসতে প্রায় ঘন্টাখানেক দেরি হয়ে যায়। উপস্থাপকেরা জানান, মাশরাফি বিন মুর্তজা এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন।উপস্থাপকদের একজন বলেন, আজ সকাল থেকে দাম লাখে লাখে বেড়েছে। লাইভ শুরুর কিছুক্ষণ পর সর্বোচ্চ দাম ছিল ১৫ লক্ষ টাকা। এক পর্যায়ে লাইভে আসতে সমর্থ হন সাদা টুপি ও টি-শার্ট পরা মাশরাফি বিন মর্তুজা।
ব্রেসলেটটির ইতিহাস নিয়ে তিনি বলেন, এটি স্টেইনলেস স্টিলের। বন্ধুর মামার মাধ্যমে পেয়েছিলেন। প্রায় সব সময়ই এই ব্রেসলেট সঙ্গে ছিল মাশরাফির। অস্ত্রোপচারের সময় ধাতব কোনোকিছু রাখার নিয়ম না থাকায় তখন খুলে রাখতে হয়েছিল। মাশরাফি এ কথাগুলো বলার মাঝে নিলামে তাঁর ব্রেসলেটের দাম ১৬ লক্ষ ছাড়িয়ে যায়। এক ফাঁকে যোগ দেন মাশরাফির জাতীয় দল সতীর্থ তামিম ইকবাল। তাঁর সঙ্গে আলাপের মাঝে দাম চড়া শুরু হয় নিলামের। এক পর্যায়ে ১৮ লাখ থেকে ১৯ লক্ষ ৫০ হাজার সেখান থেকে ২৩ লক্ষ।
চমকের এখানেই শেষ নয়। আলাপচারিতার এক ফাঁকে উপস্থাপক বলেন, এক ব্যবসায়ী মাশরাফি বিন মর্তুজার ব্রেসলেটের দাম হেঁকেছেন ৩০ লক্ষ টাকায়। সেখান থেকে দাম ওঠে দাঁড়ালো ৪২ লক্ষ টাকায়। মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, নিলামে পাওয়া টাকা তিনি নড়াইল এবং তার বাইরের এলাকায় নিজের ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সেবামূলক কাজে লাগাবেন। শেষ পর্যন্ত ৪২ লক্ষ টাকায় মাশরাফি বিন মর্তুজার ব্রেসলেট কিনে নেন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানি অ্যাসোসিয়েশন। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে লাইভ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন মুমিনুল ইসলাম। দাম চূড়ান্ত হওয়ার পর মাশরাফি তাঁর হাত থেকে ব্রেসলেটটি খুলে ফেলেন। এরপরই বড় চমকটা হাজির করেন মুমিনুল। তিনি বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মাশরাফিকে ‘উপহার’ হিসেবে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। সেটিও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
মাশরাফি জবাব দেন, সে অনুষ্ঠান হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি হাত থেকে ব্রেসলেট খুলে রাখবেন। অনুষ্ঠানে পরিয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত ওটা হাতে উঠবেন না মাশরাফি। মুমিনুল বলেন, আপাতত ওটা আপনার (মাশরাফি) জিম্মায় রইল। করোনা যুদ্ধে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের নিলামে তোলা ক্রীড়াসরঞ্জামের মধ্যে মাশরাফির ব্রেসলেটেই সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। নিলামে মাশরাফির এ ব্রেসলেটের ভিত্তিমূল্য ছিল ৫ লক্ষ টাকা। এটি বিক্রির অর্থ ব্যবহার করা হবে করোনাদুর্গতদের সাহায্যার্থে। মাশরাফি ক্যারিয়ারের শুরতে লাল-সবুজ রঙে ‘বাংলাদেশ’ লেখা রিস্ট ব্যান্ড পরে মাঠে নামতেন। পরে ব্যান্ড বদলে ব্রেসলেট পরা শুরু করেন এ পেসার ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা।
এর আগে করোনাদূর্গতের সাহায্যে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অন্যান্য ক্রিকেটারও এগিয়ে এসেছেন। মুশফিকুর রহিমের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির ব্যাট ১৭ লক্ষ টাকায় কিনে নেয় পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদির ফাউন্ডেশন। সাকিব আল হাসান তাঁর ২০১৯ বিশ্বকাপের ব্যাট নিলামে ২০ লক্ষ টাকায় বিক্রি করেছেন। এ ছাড়া তাসকিন আহমেদ, সৌম্য সরকার, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক আকবর আলীসহ দেশের অন্য ক্রীড়াবিদেরা নিজ নিজ পছন্দের স্মারক নিলামে তুলেছেন তবে সবচেয়ে বেশি দাম পেয়েছে মাশরাফি বিন মর্তুজার এ ব্রেসলেট।