আল ওমায়ের সাকিব
বাবা হলো ছায়া, বাবা হলো যোদ্ধা, বাবা হলো টিকিয়ে রাখার শক্তি। আমার বাবা (মো: সেলিম) একজন সাদাসিধে সরল মনের মানুষ। যিনি একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা। জীবনের অর্ধেক জীবন পার করলো প্রবাস জীবনে আমাদের সুখের জন্য। আমরা ভাই-বোন ৪জন। আমাদের স্বপ্ন পূরনের জন্য তিনি বছরের পর বছর পার করেছেন কুয়েতে। যিনি দেশকে দিয়েছেন রেমিট্যান্স, আর আমাদেরকে দিয়েছেন সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি। আমার বাবা হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা। আমার বাবা আমাকে শাসনের সময় শাসন, বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের সময় বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ, সাপোর্টের সময় সাপোর্ট সব করেছেন, বলতে গেলে একেবারে পারপ্যাক্ট একজন বাবা আমার।
যখন আমি ছোট ছিলাম আব্বু কুয়েত থেকে ছুটিতে আসতো দেশে তখন সারাদিন, সারারাত আমাদেরকে সময় দিতো বাবা। মেলায় ঘুরতে নিয়ে যেতো, কক্সবাজারে বেড়াতে নিয়ে যেতো, বিভিন্ন রেষ্টুরেন্টে খাওয়াতে নিয়ে যেতো। আর সারাক্ষণ আমাদেরকে পাশে বসিয়ে রাখতো কারণ মাত্র কুয়েত থেকে ছুটিতে আসতো দুই মাসের জন্য। ২০০৯ সাল তখন আমি ক্লাস সিক্সে হঠাৎ আব্বু কুয়েত থেকে চলে আসতে হলো আকামা লাগাতে পারেনি সেখানে ভিসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, শেষমেষ দেশে ফিরতে হলো বাবাকে। কুয়েত থেকে এসে বাবা একেবারে বেকার হয়ে পরলো এখানে কোন কাজ নেই তাছাড়া বিদেশ থেকে ফেরত আসলে তারা এখানে তেমন সুবিধাও করতে পারেনা।
তখনই আমাদের পরিবারে একটু অভাব অনটন দেখা দিয়েছিল, কিন্তু আমার বাবা হারার পাত্র না সেতো যোদ্ধা, সে যোদ্ধ করে যাচ্ছে পরিবারের জন্য আস্তে আস্তে বাবা বাংলাদেশে ব্যবসা করা শুরু করলো দোকান দিলো তাও ৪ ভাইবোনের পড়াশোনার খরচ, সংসার খরচ সবকিছু বজায় রাখতে বাবার অনেক কষ্ট হয়ে যেতো। এভাবে চলতে থাকে চলতে থাকে, কিন্তু আমাদের কাউকে খারাপ সময় যাচ্ছে তা বুঝতে দিতোনা বাবা। আমার মা আর বাবা দুজনে ম্যানেজ করতো। ২০১৫ সাল তখন আমি সবেমাত্র দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠেছি তখন বাবা আবারো কুয়েত যাওয়ার সুযোগ পাই।
বাবাকে আমি সবসময় বলতাম বাবা আমি কখনো ঢাকা যায়নি আমার ঢাকা যাওয়ার অনেক ইচ্ছা। বাবা আমার সেই স্বপটিও পূরন করে দিয়েছে আবারো কুয়েত যাওয়ার আগে। কুয়েতে যাওয়ার জন্য আব্বুর ভিসার কাজ নিয়ে ঢাকায় যেতে হয়েছিল তখন স্বপরিবারে আমরা ঢাকা গিয়েছি আমি জীবনে প্রথমবার ঢাকা গিয়েছিলাম সেবার। আমার বাবা এমন একজন মানুষ কথা দিলেই সে কথাটা তিনি রাখবে। সবসময় ভিডিও কলে কথা হয়, প্রতিদিন ৩/৪ বার ভিডিও কল দিবে এখনো। সবসময় বাবা আমাদের সময় দেয় তিনি এখন দেশের বাইরে সেটা আমাদের বুঝতে দেয়না। বাবারা হইতো এমনি তাদের কোনো অভিমান থাকেনা, তারা বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে হলেও পরিবার, সন্তানদের জন্য যোদ্ধ করে যায়।
ঠিক যেমন প্রমাণ দিচ্ছে এই করোনাকালেও, এই ভয়াভহ মহামারীতেও। করোনায় প্রমাণিত বাবারা প্রকৃত যোদ্ধা। আমরা সবাই বাবাদের যোদ্ধা বলি সেটি আবারো প্রমাণ হলো এই মহামারীর সময়।করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের নিয়ে আমরা অনেক সংবাদ দেখছি পত্রিকায়। সেখানে কিছু সংবাদ আমাকে আহত করেছে অনেক। একটি সংবাদে দেখলাম বাবা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে তাই তার লাশটি হাসপাতালে রেখে সব সন্তানরা পালিয়েছে। অন্য আরেকটি সংবাদে দেখলাম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ৬ বছরের শিশুটিকে বাবায় জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে কবর দেওয়ার জন্য তাও আবার কোনো পিপিই পরিধান না করে।
বিগত আরেক সংবাদে দেখলাম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত একটি শিশু তাকে ধরতে কেউ আসছে না কিন্তু তখন ছেলেটির বাবা চিৎকার করে করে বলছে এই দেশ মরে গেছে কিন্তু তোর বাবা মরে যাইনি, ছেলেটি কে কোলে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করছে।এইটাই হলো বাবাদের ধর্ম তারা ছেলেদের ছাড়তে পারেনা, কিন্তু ছেলেরা ঠিকই বাবাদের ছেড়ে দেই।আরে বাবাতো বাবায় তারাতো যোদ্ধা সেই প্রমাণ তারা সবসময় দিয়ে আসছে, কিন্তু ছেলেরা ভোগ করা শেষ হলে বাবাকে আর মনে রাখেনা। গবেষণা বলছে করোনা ভাইরাস পারিবারিক সহিংসতা বাড়াচ্ছে কিন্তু বাবারা ঠিকই তার সন্তানদের আঁকড়ে রাখছে। কারণ তারাতো যোদ্ধা তারা ছাড়তে শেখেনি তারা শিখেছে আঁকড়ে ধরতে।স্যালুট পৃথিবীর সকল বাবাদের।
পরিশেষে আমার বাবাকেও বলতে চাই বাবা অনেক ভালোবাসি তোমায়, কিন্তু তোমাকে জড়িয়ে ধরে এই কথাটি কখনো বলতে পারিনি কিন্তু আজ বলতে চাই বাবা তোমায় অনেক বেশি ভালোবাসি, তুমিই আমার সুপারহিরো, তুমিই আমার যোদ্ধা, তুমিই আমার এগিয়ে যাওয়ার শক্তি, তুমিই আমার মাথার উপর ছায়া, তুমিই আমার পথচলার পথপদর্শক, তুমিই আমার আইডল। দোয়া করিও যেনো তোমার মতো যোদ্ধা হতে পারি ভবিষ্যতে। স্যালুট বাবা।