মাহমুদুল হাসান, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি :
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে গুম করে হত্যার অভিযোগ মামলায় আসামীদের পক্ষে স্বাক্ষী দিতে অস্বীকার করায় এক সাংবাদিকসহ ৫জনের বিরুদ্ধে পর্ণগ্রাফি মামলা দিয়ে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করছে আসামী পক্ষ। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কন্সট্রাশন সাইট থেকে অপহরন করে হত্যার অভিযোগ মামলায় আসামীদের পক্ষে স্বাক্ষী দিতে অস্বীকার করায় এ মিথ্যা মামলা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আসামীরা।মামলা সূত্রে ও স্বাক্ষীদের বর্ণনায় জানা যায়, উপজেলার রায়ের বাশালিয়া গ্রামের ঠিকাদার আব্দুর রশিদ ঢাকা মহানগরীর তুরাগ থানাধীন ১৫ নং সেক্টর বালু ঘাট সংলগ্ন হাসুর বটতলায় ২নং ব্রিজে নির্মাণ শ্রমীক হিসেবে কাজ করতো একই গ্রামের আতোয়ার আলীর ছেলে সবুজ (১৭)।
সবুজের পরিবার ও ঠিকাদর আব্দুর রশিদ, আনছের ও আকবরের সাথে পূর্ব শত্রুতা ছিল। তার জের ধরে বিগত ১৮/১/১৭ তারিখ দুপুরে সবুজের সাথে কথা কাটা কাটি হয় আসামি আকবর ও আনছেরের সাথে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে সবুজকে বাবা-মায়ের কাছ থেকে চিরতরে বিদায় নিতে বলে এবং আজ রাতে বুঝতে পারবে বলে নানা হুমকি দেয়। ওই দিন সন্ধ্যায় আনছের, আকবর, ইব্রাহিম ও জাহাঙ্গীর পুনরায় মারধর করে এবং গুম করে লাশ গায়েব করবে বলে হুমকি দিতে থাকে। পরে মামালার স্বাক্ষীগণ সবুজকে রক্ষার জন্য নিরাপদ স্থানে সরিয়ে দেয়। ওই দিন রাত্রি সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনার মিমাংসার কথা বলে আকবর ও আনছের সবুজকে ডেকে নিয়ে যায়।
পরদিন ভোরে আসামীগণ ফিরে আসলেও সজুব আর ফিরে আসেনি। প্রত্যক্ষ দর্শিরা সবুজ কোথায় আছে জিঙ্গেস করলে আকবর, আনছের ও অন্যরা এলোমেলো কথা বলে এবং এ ঘটনা নিয়ে নাক গলালে কারো ভালো হবেনা বলে হুশিয়ারি দেন। পরে প্রত্যক্ষ দর্শিরা সবুজের স্বজনদের মোবাইল করে জানান সবুজকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।এদিকে এ ঘটনার স্বাক্ষীগণকে ও সবুজের স্বজনরা যাতে মামলা না করে সে জন্য রিতিমত হুমদি দিতে থাকে। মামলা করলে সবুজের মতো নিখোঁজ হতে হবে বলেও হুমকি দেয়।
নিখোঁজ সবুজের ভাই রুবেল, ভাই হারিয়ে পাগলপ্রায় হয়ে ধারে ধারে বিচার প্রার্থনা করতে থাকে। কিন্তু তাতে কোন ফল না হওয়াতে ২/৭/১৮ তারিখে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ৩৬৪/৩৬৫/৫০৬/৩৪ ধারায় ৭জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। যার নং সি আর ৯০/২০১৮। পরে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য বিশেষ পুলিশ সুপার, পিবিআই, ঢাকা মেট্টতে প্রেরণ করেন।এদিকে ওই মামলার প্রত্যক্ষ দর্শি এবং স্বাক্ষী একই গ্রামের বেল্লাল শেখের ছেলে আল আমিন ও মৃত ফজল হকের ছেলে নাজমুল হক।
দীর্ঘদিন যাবৎ আনছের ও আকবর আসামিদের পক্ষে স্বাক্ষী দেয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছিল। এতে রাজি না হওয়াতে নাটকীয় ভাবে ফাঁদে ফেলে পর্ণগ্রাফি ও চাঁদাবাজি মামলায় আসামী করে কয়েক স্বাক্ষীসহ ৫জনকে। আশিক জানায়, গত ২৬এপ্রিল সন্ধ্যা সারে ৭টার দিকে ওই মামলার স্বাক্ষী নাজমুল, এনামুল ও সুরুজ মাছ ধরার জন্য নদীর দিকে যাওয়ার পথে ওই গুম মামলার আসামী আনছেরের বাড়ীর পাশে বেগুন গাছের ঝোঁপে মানুষে ফিস ফিস কথা শুনে আগাইয়া যাই।
সেখানে আনছেরের মেয়ে আদিয়া ও তার বয়ফেন্ডকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখতে পাই। তারা আমাদেরকে দেখে আদিয়ার বয়ফেন্ড দৌড়ে পালিয়ে যায় এবং আদিয়া আমাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালি দিতে থাকে এবং আমাদের দেখে নেয়ার হুমকী দিয়ে চলে যায়। বিষয়টি তাৎক্ষনিক সাবেক মেম্বার ও সাংবাদিক আব্দুর রশিদকে জানালে সে শান্তির লক্ষে স্থানীয় দুই মাতাব্বর রিপনকে আদিয়ার বাবার কাছে পাঠিয়ে দেয়। সে বিষয়টি নিয়ে যাতে অশান্তকর পরিবেশ না হয় সে পরামর্শ দিয়ে চলে আসেন।
পরেরদিন আদিয়ার বাবা ওই গুম ও হত্যা মামলার স্বাক্ষী যাতে না দেন তার জন্য লিখিত চান অন্যাথায় মেয়ে দিয়ে পর্ণগ্রাফি ও চাঁদাবাজি মামলা দেয়ার হুমকি দেয়। এতে স্বাক্ষীগণ রাজি না হওয়ায় ৫দিন পর স্বাক্ষীদয়ের চাচাতো ভাই সাবেক মেস্বার ও সাংবাদিক আব্দুর রশিদসহ ৫জনকে আসামি করে ভূঞাপুর থানায় পর্ণগ্রাফি, ধর্ষন চেষ্টা ও চাঁদাবাজি মামলা করেন।বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠলে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এলাকায় শান্তির লক্ষে শালিসি বৈঠকে বসেন।
এতে প্রমাণ হয় যে মামলাটি মিথ্যা। মামলার বাদী আদিয়া জানান, আমি মামলা তুলে নিতে পারি কিন্তু আমার বাবা-চাচাদের নামে গুম ও খুন মামলা থেকে যাতে রক্ষা পান সেভাবে স্বাক্ষী দিয়ে বাঁচিয়ে দিতে হবে অথবা ১০লক্ষ টাকা চাঁদা দিতে হবে। এদিকে গত ১৮ জুন দিবাগত রাত্রি দেড়টার দিকে গুম ও হত্যা মামলার স্বাক্ষীদের বাড়ীর একটি ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। আসামীদের দেয়া সর্তে স্বাক্ষীরা রাজি না হওয়াতে এ আগুন লাগিয়েছে বলে অভিযোগ করছে ভুক্তভুগিরা। এ বিষয়ে ভূঞাপুর থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে।