ঈশাত জামান মুন্না, লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি:
সারাদেশের মতো লালমনিরহাটে ও নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণায় পিছিয়ে নেই বিএনপি আওয়ামীলীগ জাপার পার্থীরাও (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) উপজেলা নিয়ে গঠিত। আটটি করে ১৬ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাদে ৩৫ বছর ধরে কালীগঞ্জের কেউ এমপি নির্বাচিত হতে পারেননি। ফলে এই দীর্ঘ সময়ে আদিতমারীর তুলনায় কালীগঞ্জ ছিল অনেকটাই উন্নয়ন বঞ্চিত। তবে গত সংসদ নির্বাচনে কালীগঞ্জের বাসীন্দা আ.লীগ প্রার্থী নুরুজ্জামান আহমেদ নির্বাচিত হয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলে সাড়ে তিন দশক পর অনেকটা উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) দুটি উপজেলায়। এ আসনে ৩৫ বছর আসনটি দখলে রেখেছিল জাতীয়পার্টির প্রয়াত প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান। এ বাস্তবতায় একাদশ সংসদ নির্বাচনে আ.লীগ যেমন চাচ্ছে আসনটি ধরে রাখতে, অন্যদিকে জাপা চাচ্ছে হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। আবার বিএনপিও বসে নেই। সবমিলিয়ে তিন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরাই নানা ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন গণসংযোগ।
আ.লীগ : জাতীয় পার্টির প্রয়াত প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান সর্বশেষ নির্বাচনে মনোনয়ন কিনলেও শেষ পর্যন্ত জমা দেননি। ফলে বিনাপ্রতিদ্বন্দীতায় নির্বাচিত হন আওয়ালীগের মনোনীত প্রার্থী ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নুরুজ্জামান আহমেদ। নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পরেই তিনি প্রথমে পেয়ে যান খাদ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। এরপর সেখান থেকে তাকে দেওয়া হয় সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। আর এর মধ্য দিয়েই নুরুজ্জামান আহমেদ নিজের অবস্থান শক্ত গড়ে তুলেছেন ইতোমধ্যে। তাঁর বাবা প্রয়াত করিম উদ্দিন আহমেদ ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে এখানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাবার হাত ধরেই রাজনীতিতে আসা নুরুজ্জামান আহমেদ বেশ কয়েকবার তুষভান্ডার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিবার্চিত হন। এরপর কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন দুই বার। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার আওয়ামীলীগের দলীয় টিকেট পেয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির তৎকালীন প্রার্থী ও আদিতমারীর বাসিন্দা প্রায়ত মজিবুর রহমানের কাছে হেরে যান তিনি। ২০০১ সালেও আওয়ামীলীগের দলীয় টিকেট পান নুরুজ্জামান আহমেদ। কিন্তু ঋণ খেলাপীর অভিযোগে প্রথমে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। ফলে দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়া হয় ওই সময়ের জোটের গণফোরামের প্রার্থীর কাছে। পরে উচ্চ আদালত ভোট গ্রহনের কয়েকদিন আগে নুরুজ্জামান আহমেদকে বৈধপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়। আর তাই এলাকার জনগণের চাপে তাঁকে ওই সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচনের মাঠে নামতে হয়। মাত্র এক সপ্তাহের জন্য ভোট যুদ্ধে নেমে সামান্য ব্যবধানে হেরে যান নুরুজ্জামান আহমেদ। এতে তাঁর ৫৭ হাজার ২৫৩ ভোটের বিপরীতে ৬০ হাজারের কিছু বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন
মজিবুর রহমান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের শরীক হিসেবে জাতীয় পার্টির মজিবুর রহমানকে আসনটি ছেড়ে দেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে উন্নয়ন বঞ্চিত কালীগঞ্জে তিনি বিভিন্ন ধরণের প্রতিষ্ঠান, বয়স্ক,বিধবা ও প্রতিবন্ধিভাতাসহ দরিদ্রদের জন্য নানা ধরণের কাজ করে যাচ্ছেন। একইভাবে অপর উপজেলা আদিতমারীতেও দল গোছানোর পাশাপাশি নানা উন্নয়ন মূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে বর্তমানে এ আসনে নুরুজ্জামান আহমেদেই একাদশ সংসদ নির্বাচনের আ.লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সব দিক থেকে এগিয়ে আছেন বলে মনে করেছেন অনেকেই।
জানতে চাইলে লালমনিরহাট-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যান প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, ‘ নিবার্চন সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। শুধু দলীয় মনোনয়ন নয়, জোটগতভাবেও নির্বাচন হলে আমি মনোনয়ন পাবো বলে বিশ্বাস করি’।
তাঁর পাশাপাশি জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও ব্যবসায়ী সিরাজুল হকও গত কয়েক বারের মত আগামী সংসদ নিবার্চনেও মনোনয়ন প্রত্যাশী। এর আগে দুই বার আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সিরাজুল হক। তবে সর্বশেষ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েও বিএনপি প্রার্থীর কাছে হেরে গিয়ে তৃতীয় অবস্থানে যান তিনি।
জাতীয়পার্টি : এ আসনে জাতীয়পার্টির সম্ভাব্য একক প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে বিএনপি হয়ে এ দলে যোগ দেওয়া রোকন উদ্দিন বাবুলের নাম। লালমনিরহাট-২ আসনটি পুনরুদ্ধারের নির্বাচনী মাঠে তিনি বেশ সরব। ইতোমধ্যে প্রকাশ্য জনসভায় দলীয় চেয়ারম্যান হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ এ আসনে দলের প্রার্থী হিসেবে রোকন উদ্দিন বাবুলকে পরিচয় করিয়েও দিয়েছেন। ফলে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে তখন থেকেই দল গোছানোর কাজে নেমেছেন বাবুল। নেতাকর্মীদের সাথে নিয়মিত গণসংযোগ করছেন তিনি। কালীগঞ্জের কিছু অংশের পাশাপশি আদিতমারীতেও দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন। ফলে আগামি নিবার্চনে এই আসনটি পূনরুদ্ধারে জাতীয় পার্টি ‘সক্ষম’ হবে বলে মনে করেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। আর যদিও ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একাধিকবার অংশ নিয়েও কখনো জিততে পারেননি তিনি। দলীয় নেতাকর্মীরা আরো মনে করছেন, লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও হাতীবান্ধা উপজেলা আহ্বায়ক এম জি মোস্তাফা এবং লালমনিরহাট-৩ সদর আসন থেকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ও লালমনিরহাট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মাহবুবুল আলম মিঠু তারা দু’জনই মনোনয়ন চাইলে তাদেরকে দল থেকে অব্যাহতি দেন দলীয় চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ । এ কারণেই দলীয় কর্মীরা কিছুটা আতংকে রয়েছে। তাদের দুজনের মত লালমনিরহাট-২ আসনে এ ধারণে ঘটনা ঘটতে পারে কিনা তা এখনো বুঝা যাচ্ছে না।
জানতে চাইলে রোকন উদ্দিন বাবুল বলেন, ‘এই আসনটি দির্ঘদিন ধরেই জাতীয় পার্টির ছিল। এখনো এখানকার মানুষজন জাতীয় পার্টির সাথে আছে। তাই আগামি নিবার্চনে জয়ের লক্ষেই জাতীয় পার্টি কাজ করে যাচ্ছে’।
বিএনপি : লালমনিরহাট-২ আসনে জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি ও সাবেক এমপি সালেহ উদ্দিন আহমেদ হেলাল অন্যান্যবারের মতো এবারও এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে কাজ ব্যাপক প্রচারণা করে যাচ্ছেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রয়ারির নির্বাচনে তিনি এখানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে ক্লিন ইমেজের এই বিএনপি নেতার আছে জনসমর্থনও। তাই আগামি নিবার্চনে তিনি আবারও বিএনপির মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে মনে করেন অনেকেই। তবে দলীয় কোন্দলের কারনে এখানে বিএনপি দ্বিবিভক্ত।লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু তিনিও লালমনিরহাট–২ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি গ্রহন করছেন বলে শোনা যাচ্ছে,এতে করে নতুন করে শুরু হয়েছে দন্দ,কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে কয়েক বছর ধরে জেলা বিএনপির সভাপতি দুলু ও জেলা বিএনপির সহ সভাপতি হেলালের মধ্যে কোন্দল বিরাজ করছে। তাই এই আসনের বিএনপি সর্মথকরা মোটামুটি দু’চিন্তায় পড়েছেন। গত কয়কদিন আগেও কুলাঘাটের সভায় সভাপতি,সাধারন সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ১৬ সদস্যের না প্রকাশ করে অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। যিনি একাধারে জেলা বিএনপির সভাপতি ও রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। কমিটি ঘোষনার পর থেকে দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভুত ক্ষোভ ও কোন্দল আরো চরম আকার ধারন করেছে। নেতাকর্মীদের ধারনা এভাবে এখানকার বিএনপির কার্যক্রম এভাবে চললে কোনদিন এ আসনে বিএনপি প্রার্থীকে জয়ী করা সম্ভব নয়!। তবে স্থানীয় বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা জানান,আগামি নিবার্চনে জনগন ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এ আসনে লড়াই হবে ত্রিমুখী।
জানতে চাইলে বিএনপি নেতা সালেহ উদ্দিন আহমেদ হেলাল বলেন‘আমি যুগ যুগ ধরে এ আসনের মানুষের সাথে আছি,তাদের জন্য কাজ করছি। আগামি নিবার্চনেও আমি আবারও দলীয় মনোনয়ন পাবো বলে বিশ্বাস করি। আর নিবার্চনী মাঠে নেতাকর্মীরা সব কিছু ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবেই কাজ করবেন বলে মনে করেন তিনি।’