আরিফুল ইসলাম সুমন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত রয়েছে সড়কটি। সেই সুবাদে মন্ত্রী পরিষদ সভায় (একনেক) অনুমোদনও পেয়েছে এটি, এতোকিছুর পরও অজানা কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অধিক জনগুরুত্বপূর্ণ ” মলাইশ-শাহজাদাপুর-নিয়ামত-ধাউরিয়া ” সড়কের নির্মাণ কাজ এখন পর্যন্ত শুরু করা হয়নি।
এদিকে চলতি বছর, আগামি বছর এ সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হবে -এমন আশার বাণী প্রতিশ্রুতি দিয়েই গ্রামের মানুষদের বছরের পর বছর শান্তনা দিয়ে যাচ্ছেন এখানকার বিভিন্ন সময়ে নির্বাচিত শীর্ষ জনপ্রতিনিধি সহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে এ সড়ক নির্মাণে কার্যত কোনো প্রতিফলন পাচ্ছেন না স্থানীয় লোকজন। এমনটাই জানিয়েছেন শাহজাদাপুর গ্রামের ক্ষুব্ধ ভূক্তভোগী মানুষেরা।
গত শনিবার ( ০৩ নভেম্বর ) সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার শাহজাদাপুর, নিয়ামতপুর ও ধাউরিয়া এ তিন গ্রামের বসবাসকারী মানুষ সহ আশপাশ এলাকার অন্তত ৪৫ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র সড়ক এটি। এ সড়কটি বছরের পর বছর যাবত জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকার ফলে এখানকার চলাচলকারী মানুষদের অসহনীয় দূর্ভোগ। নিত্যদিন নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন হাজারো মানুষ।দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে
বিভিন্ন সরকারের এখানকার প্রতিনিধিরা এ সড়ক নির্মাণে শুধু নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েই গেছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, বিগত বিএনপি সরকারের আমলে এখানকার তৎকালীন সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূইঁয়া এ সড়ক নির্মাণে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি এখানে আরো তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং একবার প্রতিমন্ত্রীর পদও পান।কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির কোন প্রতিফলন হয়নি।
পরবর্তীতে চারদলীয় জোট বিএনপি সরকার আমলে উপজেলার কালীকচ্ছে ‘বাংলাদেশ রাইফেলস’ মাঠে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসেছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সেই অনুষ্ঠানে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী এ সড়ক নির্মাণে জোরালো দাবি তোলেন। তখন খোদ প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ সড়ক নির্মাণে প্রতিশ্রুতি দেন।কিন্তু কেউ-ই কথা রাখেননি।
সর্বশেষ মহাজোট সরকারের আমলে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানকার বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয়পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা এই তিন গ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দুঃখ ও দুর্দশা দূর করতে এই সড়ক নির্মাণ সহ এখানকার গ্রামগুলোকে বিদ্যুতায়ন করার প্রতিশ্রুতি দেন।
কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ বছরে তিনি এ প্রতিশ্রুতির কোনো প্রতিফলন দেখাতে পারেননি। তবে এ জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির অগ্রাধিকার তালিকায় আছে এবং তা নির্মাণে একনেক এর সভায় অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। এখন প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ এলেই এ সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। এই প্রতিশ্রুতির মধ্যেই জিয়াউল হক মৃধা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
কিন্তু এইবারও পাঁচ বছরের শেষদিকে এসে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগমূহুর্তে তিনি শাহজাদাপুর, ধাউরিয়া ও নিয়ামতপুর এ তিন গ্রামে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। গ্রামগুলোতে বিদ্যুতায়নের কাজ এখনো দ্রুত গতিতে চলছে।
এদিকে স্বাধীনতাত্তোর দীর্ঘ ৪৭ বছর পর বিদ্যুতায়ন সুবিধা পেয়ে এখানকার তিন গ্রামের হাজারো মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করলেও এসব মানুষ বলছেন তাদের দীর্ঘদিনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে জরুরি ভিত্তিতে এখানকার সড়কটি নির্মাণ করা ইউক।
শাহজাদাপুর গ্রামের হাজী দৌলত খান জানান, এই সড়ক নির্মাণে ” ৩৫ বছর যাবত শুধু প্রতিশ্রুতিই শুনে যাচ্ছি, বাস্তবায়ন কোন বছর”। দৌলত খান আক্ষেপ করে বলেন, মনে হচ্ছে মৃত্যুর আগে এ সড়কের নির্মাণ কাজ আর দেখে যাওয়া হবে না।
মোঃ শহীদুজ্জামান মাস্টার জানান, কৃষি প্রধান এলাকার এ সড়কটি অধিক জনগুরুত্বপূর্ণ। এ সড়ক নির্মাণে বিভিন্ন সময়ে জনপ্রতিনিধিরা শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়ে গেলেন, কিন্তু কোনো প্রতিফলন নেই। স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহযোগিতায় আমরা অবশেষে বিদ্যুত পেয়েছি, আশা করি সড়কটিও নির্মাণে তিনিই ব্যবস্থা নিবেন।
হাজী শাহজাহান খাদেম বলেন, অতীতে জনপ্রতিনিধিরা সড়ক তৈরী ও বিদ্যুতায়নের আশ্বাস দিয়ে আমাদের কাছ থেকে শুধু ভোট নিয়েছেন। কিন্তু তারা একটি কথাও রাখেননি। আমাদের বর্তমান এমপি এখন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই এই সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু করাবেন। এখন দেখার বিষয় এ সড়ক নির্মাণে তিনি এইবার কথা রাখতে পারেন কি না ?
শাহজাদাপুর গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী মোঃ মামুন খান জানান, এ সড়কের জরাজীর্ণ অবস্থার কারণে এখানকার হাজার হাজার মানুষের দূর্ভোগের শেষ নেই। এই সমস্যাটি নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় অতীতে বহু লেখালখি হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এখানকার নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণ এ সড়ক নির্মাণে গ্রামের মানুষদের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন প্রতিনিয়ত, তবে এসবের কোন বাস্তবায়ন নেই।
এ সড়ক নির্মাণ প্রসঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা জানান, ইতিমধ্যে সেই গ্রামগুলোতে বিদ্যুতায়নের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। আশা করি স্বল্পসময়ের মধ্যে যেকোনো সময়ে সেই সড়কের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।