
ডেঙ্গু শিশুদের জন্য কোভিডের থেকেও বিপজ্জনক! ডেঙ্গুর ঝুঁকি নিয়ে সময় নিউজের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘বদ্যি বাড়ি’তে কথা বলেছেন চিকিৎকরা। এদের একজন- ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ ও জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আফসানা আলমগীর খান।করোনা মহামারির মাঝে মরার ওপর খাড়ার ঘা হিসেবে হাজির হয়েছে ডেঙ্গু। ফলে এখন সব থেকে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। হাসপাতালগুলোতেও একই দৃশ্য চোখে পড়ছে।
বর্তমানে অনেকটাই পাল্টে গেছে ঢাকা শিশু হাসপাতালের দৃশ্যপট।বিষয়টি স্বীকার করে হাসপাতালটির পরিচালক ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ জানান, এবার আবহাওয়ার কারণে অর্থাৎ থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর যে ধরন ছিল এবারও তার ধরন একই। এবার দুই-এক বছরের শিশু থেকে ১০ বছরের আশপাশে থাকা শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।হাসপাতালটির তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত প্রথম পাঁচ মাসে ডেঙ্গু নিয়ে চিকিৎসা নিয়েছে পাঁচজন শিশু। জুনে সেই সংখ্যা ছিল ১৫।
কিন্তু জুলাই মাসে তা এক লাফে পৌঁছায় ১০৪ এ। আর চলতি মাস আগস্টে প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছে ১০ থেকে ১২টি ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু। সবমিলিয়ে যা ২০০ ছাড়িয়ে গেছে।মূলত স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিশুরা বাসায় থাকছে, ফলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বেশি হচ্ছে বলে মনে করেন এই শিশু বিষেশজ্ঞ। বলেন, এডিস মশা দিনে কামড় দেয়। আর শিশুরাও সব সময় বাসায় থাকার কারণে ছোট ছোট পোশাকে থাকে। ফলে অনেক সময় মশা পায়ে কামড় দিলেও বোঝা যায় না।বিগত যে কোনো বছরের তুলনায় এবারের ডেঙ্গুর ধরন একেবারেই আলাদা- বলছেন চিকিৎসকরা।
শিশু হাসপাতালটিতে ভর্তি শিশুর ২৫ শতাংশেরই দরকার পড়ছে আইসিইউ। আর তাই বলা হচ্ছে, ডেঙ্গু শিশুদের জন্য কোভিডের থেকেও বিপজ্জনক।তিনি বলেন, ডেঙ্গুর ক্ল্যাসিক্যাল ফিভার নিয়ে যারা আসে তাদের বাসায় ট্রিটমেন্টের পরামর্শ দিয়ে দেই। বেশিরভাগ ভর্তি রাখা হয় যাদের অবস্থা বেশি খারাপ। আবার অনেক রোগী হাসপাতালে আসে না, ভর্তি করা হয় না। ফলে এই সংখ্যা অনেক বেশি।পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের জুন ও জুলাই মাসের তুলনায় ২০২১ সালের দুই মাসে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে ৯৯ গুণ।
এছাড়া, এ বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণ হচ্ছে ডেন-৩ এর মাধ্যমে। এ সেরোটাইপে আক্রান্ত রোগীদের হেমোরেজিক ফিবার হওয়ার আশঙ্কা বেশি।এ বিষয়ে ডা. আফসানা আলমগীর খান বলেন, এক বছর পর পরই পুরো বিশ্বেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। তাই এবার আগেই সার্ভে করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছিল। তারা হয়তো ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু লকডাউনে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের বাসা বন্ধ ছিল, যেটি ডেঙ্গুর উপযুক্ত বাসস্থান বলেই মনে করেন এই গবেষক।
ডেঙ্গু শিশুদের জন্য কোভিডের থেকেও বিপজ্জনক তার মতে, ওইসব বাসা থেকে ডেঙ্গু বেশি ছড়িয়েছে।শিশুর ডেঙ্গু জ্বর হালকা করে দেখার কিছু নেই জানিয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, শিশু আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। শিশুদের ডেঙ্গু থেকে বাঁচাতে ফুলহাতা জামা কাপড় পুরনো, সব সময় মশারি টাঙিয়ে ঘুমানোর পাশাপাশি বাড়িঘরের আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শও দিচ্ছেন তারা।