আরিফুল ইসলাম সুমন, নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও মহাজোটের মনোনয়নপ্রত্যাশী। পরিচ্ছন্ন ইমেজের এই জনপ্রতিনিধির স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে তার দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়টি এরই মধ্যে প্রায় নিশ্চিত বলে গুঞ্জন রয়েছে।
এদিকে এই আসনে আওয়ামীলীগের শক্তিশালী নারী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম আহবায়ক উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম (শিউলী আজাদ)। বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তার দলীয় মনোনয়ন চুড়ান্ত ছিল। তবে জোটের স্বার্থে দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে তিনি মহাজোট প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধার “লাঙ্গল” প্রতীকের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।
এইবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগের এখানকার শক্তিশালী নারী প্রার্থী। দীর্ঘ টানা পাঁচটি বছর তিনি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশায় পুরো নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে গেছেন দিনরাত। এলাকার ছোটবড় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নেতা-কর্মীদের নিয়ে শিউলী আজাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ারমতো।
অপরদিকে সরাইল উপজেলা যুবলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আশরাফ উদ্দিন মন্তু দলের মনোনয়ন প্রত্যাশায় এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যান কয়েকবছর যাবত। তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আওয়ামীলীগ সরকারের নানা উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেছেন জোরেশোরে।
আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক ও শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান অ্যাডভোকেট সৈয়দ তানভীর হোসেন কাউছার। তিনি আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করে বিগত দুইবছর যাবত এখানে সক্রিয়ভাবে গণসংযোগ চালিয়ে গেছেন বড়সড় আয়োজনে। তাকে রাজনীতির মাঠে পেয়ে এলাকার মানুষদের মাঝে ব্যাপক সাড়া লক্ষ্য করা গেছে।
এছাড়াও আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন পেতে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নাজমুল হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ রহমান, সাবেক সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবদুল হালিম, সাবেক সম্পাদক রফিক উদ্দিন ঠাকুর, ধানমণ্ডি আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. কামাল আহমেদ দুলাল, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক মহিলা এমপি অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পী, বেসরকারি শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু, বাংলাদেশ আইন সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান আনসারী, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি মঈন উদ্দিন মইন সহ কয়েকজন।
যারা মনোনয়ন প্রত্যাশায় এলাকায় নানা সময়ে গণসংযোগ চালানোর পাশাপাশি আওয়ামীলীগ সরকারের নানা সাফল্য জনসন্মূখে তুলে ধরেন এবং সাধারণ মানুষকে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা।
জনশ্রুতি আছে, অথচ শুধুমাত্র জোটের দাবি নিয়ে এই আসনে মহাজোটের মনোনয়ন অর্জনের লক্ষ্যে তৎপরতা চালাচ্ছেন কয়েকজন কথিত বহিরাগত প্রার্থী। যারা অতীতে কখনোই এখানকার সাধারণ মানুষের কাছে ভোটের দাবি নিয়ে আসেননি, এসব নেতা মূলত জনবিচ্ছিন্ন নেতা, এখন জোটের দোহাই দিয়ে এখানে তারা প্রার্থী হয়ে আসতে চাইছেন ; কিন্তু জনগণ তা মেনে নিবেন না। এমন দাবি করছেন এখানকার জোট-মহাজোটের বড় একটি অংশের নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা।
এদিকে এই আসনে এমপি পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীর ছড়াছড়ি বিএনপিতেও। তাদের মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক মন্ত্রী উকিল আবদুস সাত্তার ভূইঁয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানকার বড় দুই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজেদের প্রভাব বাড়াতে দলের নেতাকর্মীদের পক্ষে টানার লক্ষ্যে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন। তাদের ঘিরে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির স্থানীয় রাজনীতিতে বিভক্তি মাথাচাড়া দিয়েছে। নিজেদের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে গেল কয়েক মাস ধরেই চলছে তাদের দিনভর দৌড়ঝাঁপ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে কয়েকজনকে মনোনয়নের দৌড় থেকে ছিটকে ফেলতে ‘বহিরাগত’ আখ্যা দিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন তাদের প্রতিপক্ষরা। এখানে আওয়ামী লীগের চেয়ে ‘বহিরাগত’ প্রার্থী নিয়ে বেশি বেকায়দায় আছে বিএনপি।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় আছেন সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন, আশুগঞ্জ বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মোহাম্মদ শামীম ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি এসএন তরুণ দে।
এসব প্রার্থীদের মধ্যে যেকোন একজনকে দল মনোনয়ন দিবেন এবং তার পক্ষেই এখাকার বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে এমটাই চাউর রয়েছে বিএনপির এই নির্বাচনী মাঠে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২ আসন থেকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সরাইল উপজেলা যুবলীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আশরাফ উদ্দিন মন্তু এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, গত দুই টার্মে এই আসনে মহাজোট মনোনীত জাতীয় পাটির প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল । এর আগে বিএনপির হাতে দীর্ঘ অনেক যুগথাকা সরাইল ও আশুগঞ্জ এলাকার আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা অস্থিত্বহীন হয়ে আছে । এবারও যদি জনবান্ধব যোগ্য প্রার্থীর মাধ্যমে নৌকা না আসে তা‘ হলে এখানে আওয়ামীলীগের অস্থিত্বই বিলীন হয়ে যাবে । সরাইল আশুগঞ্জে আওয়ামীলীগ বলে কিছু থাকবে না।
এদিকে এখানে বহিরাগত প্রার্থীদের নির্বাচনী মাঠে প্রতিরোধ করতে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতা কর্মী সমর্থকরা সোশ্যাল মিডিয়াতে তাদের প্রতিবাদের ভাষা লিখে যাচ্ছেন কয়েকদিন যাবত। এছাড়াও তারা নানা মহলে এ নিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। স্থানীয় বিএনপির ত্যাগী নেতা মোঃ আবদুল জব্বার তার আইডির মাধ্যমে বহিরাগত নেতাদের প্রতিরোধ করতে সরাইল উপজেলাবাসীকে এক হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্যা সরাইল’।