চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে চাঁদাবাজ ও মামলাবাজ চক্রের নির্যাতনে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী সরকারের কঠোর নির্দেশনায় প্রশাসন অপরাধ চক্রের হোতাদের অনেকটা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হলেও কতিপয় অপরাধী সংঘবদ্ধ হয়ে প্রশাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নির্দ্ধিধায় তাদের অপরাধ মূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এমনই একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানাধীন ষোলশহর এলাকার ইয়াছিন হাজীর বাড়ীতে। এই চক্রের মূলহোতা হলো, রেহানা বেগম প্রকাশ ইয়াবা রেহানা।

রেহেনার এই অপকর্মের সিন্ডিকেটে তার স্বামী নূরুল বশর, ২ ছেলেসহ ১০-১২ জন রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, চান্দগাঁও থানা এলাকার ইয়াছিন হাজী বাড়ীতে মামলাবাজ রেহেনা বেগমের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী ও নানা অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে জড়িত ১০-১২ জন যুবকের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এই সিন্ডিকেটে রেহানার স্বামী নূরুল বশর এবং ২ ছেলে রাসেল ও টিপু রয়েছে। এছাড়া একই এলাকার সুলতান আলমের ছেলে ওয়াহিদুল আলম জিতু, ইউসুফের ছেলে মো: সাজ্জাদ এবং ইদ্রিস আলমের ছেলে তৌহিদুল আলম রাজুর নামও ওঠে এসেছে। চক্রের অন্যান্য সদস্যরা বহিরাগত বলে জানা যায়।
এই সংঘবদ্ধ চক্র নিরাপদ মানুষকে মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করে মোটা অংকের অর্থ আদায়, ছোট-বড় যেকোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও নির্মাণাধীন স্থাপনা থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায়, মাদক ব্যবসা, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে জড়িত। চক্রের সদস্য ও রেহানা বেগমের ২ ছেলে রাসেল এবং টিপু মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে। চক্রের টোকাই সদস্যদের মাধ্যমে বহদ্দারহাট এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ইয়াবা, ফেনসিডিল ও বাংলা মদ বিক্রি করা হয়।
এসব মাদক রাঙ্গামাটি ও কক্সবাজার থেকে এনে রেহানার বাসায় রাখা হয়। জানা যায়, চক্রের সদস্য সাজ্জাদ এবং রাজু চাঁদাবাজির নেতৃত্ব দেয়। এলাকায় ছোট-বড় যেকোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও নির্মাণাধীন স্থাপনা থেকে দলবল নিয়ে চাঁদা আদায়ে নেতৃত্ব দেয় এই ২ জন। কেউ চাঁদা প্রদানে রাজি না হলে তাদেরকে দেওয়া হয় অপহরণ করে গুম – খুনের হুমকি। তাই সাধারণ ব্যবসায়ী ও ভবন মালিকরা এই চক্রকে বাধ্য হয়ে চাঁদা প্রদান করে। চাহিত চাঁদা না পেলে তাদের উপর চলে নির্মম নির্যাতন। কারো সাথে সামান্য বিবাদে জড়ালেও তারা পিস্তল- কিরিচের মত ভয়ংকর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তেড়ে আসে।
কেউ যদি চাঁদা না দিয়ে পুলিশের আশ্রয় নিতে চায় তাহলে তাকে রেহানা বেগম ও তার স্বামী নূরুল বশর মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করে মীমাংসার মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থ আদায় করে।চক্রের অন্যতম সদস্য ওয়াহিদুল আলম জিতু ছিনতাইকারীদের গুরু হিসেবে পরিচিত। বহিরাগত ছিনতাইকারীরা সন্ধ্যা হলেই বহদ্দারহাট পুকুর পাড়, এক কিলোমিটার এলাকা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান নিয়ে সাধারণ পথচারীদের গতিরোধ করে মোবাইল এবং নগদ টাকা ছিনতাই করে।
চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে চাঁদাবাজ ও মামলাবাজ চক্রের নির্যাতনে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী ছিনতাইকৃত টাকা এবং পণ্যের ভাগ-বাটোয়ারা হয় গভীর রাতে।ছিনতাইকৃত টাকা এবং পণ্যের ৪০ ভাগ ছিনতাইকারীরা নিলেও ৬০ ভাগ জিতুকে দিতে হয়। কোন ছিনতাইকারী সাধারণ জনগণের হাতে ধরা পড়লে জিতু এলাকার বড় ভাই সেজে উক্ত ছিনতাইকারীকে পুলিশে দেওয়ার নাম করে কৌশলে ছাড়িয়ে নেয়। ছিনতাইয়ের টাকায় জিতু নারী নিয়ে আমোদ ফুর্তি করেন বলেও জানা যায়।
জানা যায়, রেহেনা বেগমের পরিবারের সকল সদস্য মিথ্যা মামলার সাথে সম্পৃক্ত। রেহানা বেগম মিথ্যা ধর্ষণ মামলার সাক্ষী হওয়ায় এলাকাবাসী তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে মহল্লা কমিটির প্যাডে গণস্বাক্ষর দিয়েছিল। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের উক্ত মামলা নং ৩৫৬/২০০৯। রেহেনা বাদী হয়ে সায়েম মুরাদ গং এর বিরুদ্ধে যুগ্ম মহানগর হাকীমের আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন, যার নং ২১৩/২০০৫।
সর্বশেষ গত ১৮/১২/২০২২ ইং তারিখে কামালের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় রেহানার ২ ছেলেকে আসামি করায় রেহানা বাদী হয়ে হাসান গং এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২১/১১/২০২২ ইং তারিখে একটি মামলা দায়ের করেন।রেহানার স্বামী নূরুল বশর ১৯৮৮ সালের চান্দগাঁও থানার মামলায় ৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাভোগ করলেও এখন তিনি মিথ্যা মামলা করায় পটু। তিনি নিরীহ মানুষকে ফাঁসাতে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।
যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, মুজিবুর রহমান গং এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম প্রথম সাব জজ আদালতের মামলা নং ১৮২/২০০৯, ২০১৫ সালের চান্দগাঁও থানার মিথ্যা মামলা নং ৫৩(২৫) ২০১৫, মোঃ শফি গং এর বিরুদ্ধে ১৪৫ ধারায় দায়েরকৃত মিছ মামলা নং ৯৭৯/২০০৮। এছাড়া রেহেনার ছেলে রাসেল বাদী হয়ে সেকান্দার গং এর বিরুদ্ধে চান্দগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যার নং- ২৮(০১)২০১৫।
থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চান্দগাঁও থানার পাশে কামাল উদ্দীনের মোটর সাইকেল সার্ভিসিংয়ের একটি দোকান রয়েছে। সেই দোকানে সংস্কার করতে গেলে চক্রের সদস্য জিতু সাজ্জাদ এবং রাজু চাঁদা দাবী করেন। কিন্তু কামাল তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালে তারা কামালকে দেখে নেওয়ার হুমকী দেয়। গত ১৮/১২/২০২২ ইং তারিখ বিকেলে কামাল মোটর সাইকেল সার্ভিসিংয়ের দোকান থেকে বাসায় ফেরার পথে এই সন্ত্রাসীরা তাঁর উপর হামলা চালায়। হামলায় কামালের মাথায় কিরিচের কোপ দিলে গুরুতর কাটা জখম হয়।
এসময় কামালের চিৎকারে তার ভাই ওসমান গণি মানিক এগিয়ে এলে তাকেও কিল ঘুষি মেরে তার সাথে থাকা ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। উক্ত ঘটনায় ওসমান গণি মানিক বাদী হয়ে ২০/১২/২০২২ ইং তারিখে সুলতান আলমের ছেলে ওয়াহিদুল আলম জিতু, নূরুল বশরের ছেলে মো: রাসেল ও মো: টিপু, ইউসুফের ছেলে মো: সাজ্জাদ এবং ইদ্রিস আলমের ছেলে তৌহিদুল আলম রাজুসহ অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে আসামী করে চান্দগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এই ব্যাপারে ওসমান গণি মানিক বলেন, রেহেনা বেগমের নেতৃত্বে এই সংঘবদ্ধ চক্রের অত্যচারে আমরা অতিষ্ঠ। তাদের এমন অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। কেউ প্রতিবাদ করলে তার উপর চালানো হয় চরম নির্যাতন। মিথ্যা মামলায় হয়রানির ভয়ে এলাকার অনেক মান্যগণ্য ব্যক্তিবর্গও তাদের এমন অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না। তাদের এমন অপকর্ম থেকে রেহাই পেতে প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, এই চক্র নিয়ে বলার কিছু নেই। এমন কোন অপকর্ম নেই যা এই চক্রের সদস্যরা করেনা।তারা নিরীহ ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন পেশাজীবির উপর কিরকম নির্যাতন করেন সেটা সবাই জানে। সবারই তো জীবনের ভয় রয়েছে তাই তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে কেউ বিপদে পড়তে চায় না। প্রশাসনই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ করে দিতে পারে।