২০২৩ সালকে বরণ করতে প্রস্তুত বিশ্বের ৮০০ কোটি মানুষ করোনা মহামারি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, পণ্যের দাম বৃদ্ধি আর ফুটবলের মহাতারকা লিওনেল মেসির বিশ্বকাপ অর্জন এসবের মাঝেই শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) শেষ হচ্ছে ইংরেজি নববর্ষ, ২০২২ সাল। পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছর, ২০২৩ সালকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বিশ্বের আটশ কোটি মানুষ।
করোনা মহামারির কারণে গত কয়েক বছর পানসে ছিল নববর্ষ উদযাপন। তবে লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এখন অনেকটাই শিথিল বিশ্বের অধিকাংশ দেশে। নতুন বছরে অনেকেই ভালোভাবে নববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি নিলেও আবারও করোনার নতুন ধরন ভয় জাগাচ্ছে।
২০২৩ সালকে বরণ করতে প্রস্তুত বিশ্বের ৮০০ কোটি মানুষ সিডনি নববর্ষ ২০২৩ উদযাপনের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে একটি যেটি গত দুই বছর ধরে লকডাউনের আওতায় ছিল। করোনার ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল শহরটিতে।
অস্ট্রেলিয়ার সীমান্ত আবার চালু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এবার সিডনিতে নববর্ষ উদযাপনে সামিল হবে অন্তত ১০ লাখ মানুষ। সিডনি কর্তৃপক্ষ আরও আশাবাদী প্রায় ৫০ লাখ মানুষ অনলাইন বা টেলিভিশনে নববর্ষ উদযাপনের আয়োজন উপভোগ করবে।
ফায়ার ওয়ার্কসের আয়োজক ফরচুনাটো ফোটি বলেন, ‘যদি আমরা সকলকে নববর্ষ উদযাপনে একত্রিত করতে পারি এবং নতুন করে আনন্দের সঙ্গে সামনের বছরের দিকে তাকাতে পারি, তাহলে আমরা এটিকে একটি ভালো কাজ হিসেবে দেখবো।’
২০২২ সাল কারও কাছে আনন্দের হলেও কারও কাছে বিষাদের। এই বছর ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেছেন। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল আইকন পেলে চলে গেলেন সম্প্রতি। একই সঙ্গে বিশ্বনেতাদের একজন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেও মারা গেছেন এ বছর।
অপরদিকে, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে গোটাবিশ্বে ব্যাপক গোলযোগের সৃষ্টি হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে ধস নামে। জ্বালানি তেলের বাজারও বছরজুড়ে ছিল অস্থিতিশীল। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের তথ্য বলছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ৩০০ দিনেরও বেশি সময় পার হয়েছে। এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৭ হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে আহত হয়েছেন আরও ১০ হাজার মানুষ। বহু ইউক্রেনীয় জীবন বাঁচাতে পাড়ি দিয়েছেন সীমান্ত। দেশটির ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন অন্য দেশে। রাশিয়ার মিসাইল হামলা এখনো অব্যাহত রয়েছে ইউক্রেনে।
অনেক ইউক্রেনীয় হয়তো মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে নতুন বছরকে স্বাগত জানাবেন। তবে এবারও অনাড়ম্বর হচ্ছে তাদের নববর্ষ উদযাপন।ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়াতেও, জমকালো নববর্ষ উদযাপনের তেমন আগ্রহ নেই অনেকের। মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন বাসিন্দাদের নববর্ষ কীভাবেেউদযাপন করবেন সে বিষয়ে ভোট দিতে বলার পর মস্কো তার ঐতিহ্যবাহী আতশবাজির প্রদর্শনী বাতিল করেছে।
কোভিড -১৯ ভ্যাকসিন কার্যক্রম বহু দেশে করোনায় মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে এনেছে। ঠিক এ সময়ে করোনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে চীনে। চীনের সরকার জিরো কোভিড পলিসি শিথিল করার পরপরই হাসপাতালগুলোতে রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। সুতরাং নববর্ষ উদযাপনের তেমন কোনো আভাস মিলছে না দেশটিতে। বাণিজ্যিক হাব সাংহাইয়ের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শহরের বিখ্যাত বান্ড ওয়াটারফ্রন্টে কোনও আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম হচ্ছে না এবার।
তবে বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশেই বর্ষবরণের প্রস্তুতি চলছে জোরোসোরে। বিশেষ করে আর্জেন্টাইনদের কাছে এবারের বর্ষবরণ উদযাপন একটু ভিন্ন রকম।
সূত্র: এএফপি, এনডিটিভি