পিরোজপুরে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান। কোনো প্রকারের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই বিভিন্ন অলিগলিতে গড়ে উঠেছে সিলিন্ডারের দোকান। এসব দোকানে একদিকে যেমন নেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা তেমনি নেই রক্ষণাবেক্ষণের কোনো যথাযথ পদক্ষেপ। এতে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি বাড়ছে দুর্ঘটনার। ফলে এসব এলাকার বসবাসকারীদের মনে বাড়ছে আতঙ্ক।
পিরোজপুরে গ্যাস সংযোগ না থাকায় গ্যাস ব্যবহারকারীদের এলপি গ্যাসের ওপর নির্ভরতা শতভাগ। ফলে তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজন মিটাতে ব্যবহার করেন সিলিন্ডার গ্যাস। একে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ২ হাজারেরও বেশি দোকান। আর এসব দোকানে প্রতি মাসে বিক্রি হয় প্রায় ৭০ হাজার সিলিন্ডার। ৩১টি কোম্পানির ১৮টির ডিলার রয়েছে এ জেলায়।
এলপি গ্যাস ব্যবসায়ীদের সংগঠনের হিসাব মতে পিরোজপুরে প্রায় ১২০০ থেকে ১৩০০ এর মতো খুচরা বিক্রেতা রয়েছে। এ ছাড়া বাকিগুলো অনুমোদনহীন দোকান। অর্থাৎ পান সিগারেট চা কিংবা মুদি দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন দোকানিরা। ফলে নির্ধারিত রিট্রেইলার না হওয়ায় সেসব দোকানে নেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, সহায়ক থাকে না পারিপার্শ্বিক পরিবেশও। এতে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি বাড়ছে দুর্ঘটনার। অন্যদিকে সিন্ডিকেটের কারণে অতিরিক্ত দামে গ্যাস কিনতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
পিরোজপুর পৌর শহরের শিকারপুর এলাকার বাসিন্দা ফরিদ খান বলেন, আমাদের এলাকার স্কুলের পাশে, বাসাবাড়ির নিচে এবং যত্রতত্র যেভাবে গ্যাস সিলিন্ডার মজুত করা হচ্ছে এবং বিক্রি হচ্ছে তাতে আমরা সবসময়ই আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছি। কারণ স্কুলের পাশে গোডাউন করে সিলিন্ডার মজুত করা ভয়ের কারণ, কখন কি দুর্ঘটনা ঘটে বলা যায় না। অন্যদিকে সরকার নির্ধারিত দামে কোনো দোকানে বিক্রি হয় না সিলিন্ডারের গ্যাস।
এদিকে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আবাসিক এলাকায় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে এলপি গ্যাসের গোডাউন তৈরি হওয়ায় আশপাশের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা থাকেন দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে। অন্যদিকে কোম্পানির কাছ থেকে ডিলারদের সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক দামে কেনার প্রভাব পড়ে গ্রাহক পর্যন্ত। তা ছাড়া ডিলাররা অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেমো ছাড়াই খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সিলিন্ডার সরবরাহ করে থাকেন। ফলে প্রশাসনিক জটিলতায় পড়েন রি-ট্রেইলাররা।
পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ রোডের গ্যাস ব্যবসায়ী মতিন হাওলাদার বলেন, ডিলারদের কাছ থেকে গ্যাসের সিলিন্ডার নিলে তারা কোনো প্রকার ভাউচার দেয় না। যার কারণে আমরা খুচরা ব্যবসায়ীরা মাঝে মাঝেই হয়রানির শিকার হই প্রশাসনের মাধ্যমে। অন্যদিকে গ্যাসের দাম নিয়ে কথা বললে ডিলাররা আমাদের খুচরা ব্যবসায়ীদের সিলিন্ডার দেয়া বন্ধ করে দেয়। কারণ তারা তাদের ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করে আমি এর প্রতিবাদ করায় ডিলাররা আমাকে ৬ মাস গ্যাস সিলিন্ডার দেয়া বন্ধ রেখেছিল। ব্যবসার খাতিরে এখন আমি সবকিছু চুপচাপ দেখি কোনো প্রতিবাদ করি না।
চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসাও বেড়েছে রুট লেবেল পর্যন্ত। ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না নীতিমালা। ফায়ার সার্ভিস বলছে নীতিমালা মানতে তারা মোটিভেশনাল ওয়ার্ক করছে। পাশাপাশি তাদেরকে আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা চলছে।
পিরোজপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক, একেএম শামসুজ্জোহা বলেন, আমরা মাঝে মাঝেই বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করি এবং ব্যবসায়ীদের সচেতন করার লক্ষ্যে মাঝে মাঝেই তাদের নিয়ে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান পালন করা হয় ।
২০২২ সাল থেকে এ পর্যন্ত পিরোজপুরে গ্যাস সংক্রান্ত মোট ৪৯টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে।