সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে আবারও সংঘর্ষের ব্যাপকতা বেড়েছে। প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে সীমান্ত এলাকা থেমে থেমে কেঁপে উঠছে। কখন গুলি এসে লাগে, কখন গোলা এসে পড়ে- এমন ভয়ে কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বাসিন্দারা দিন কাটাচ্ছেন। তাদের মনে কোনো স্বস্তি নেই। একই পরিস্থিতি বান্দরবানের ঘুমধুম ইউনিয়নেও।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সংঘাত তীব্র রূপ নিয়েছে। এরই মধ্যে রাখাইনে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির হামলায় টিকতে না পেরে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বিজিপির কয়েকশ সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জালাল আহমদ জানান, সোমবার দুপুরে ওপারে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায় এবং গুলির শব্দ শোনা যায়। তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার ভোর ৪টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সীমান্তের ওপারে বিকট শব্দ শোনা যায়।
বিকট শব্দের বিস্ফোরণ বলে দিচ্ছে ওপারে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। নানা মাধ্যমে তিনি খবর পেয়েছেন- মিয়ানমারের চাকমাকাটা, কোয়াংচিমন ও কুমিরখালী এলাকায় বিজিপির ঘাঁটি ঘিরে যুদ্ধ চলছে। জালাল আরও বলেন, ওপারে যুদ্ধ হোক তাতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এপারে কেন হতাহতের ঘটনা ঘটবে।
টেকনাফের শাহ পরিরদ্বীপ সীমান্তের নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের মংডুর আশপাশের এলাকায় ভোর ৪টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ব্যাপক গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়ার কথা জানান সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রেজাউল করিম।
হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ার জানান, নাফ নদীর ওপারে বিস্ফোরণের শব্দ সোমবারের চেয়ে বেড়েছে। এতে এপারে গুলি-মর্টারের গোলা এসে পড়ার শঙ্কার পাশাপাশি রোহিঙ্গাসহ দেশটির অন্য নাগরিকদের অনুপ্রবেশের ঝুঁকি বেড়েছে। এলাকার ব্যবসায়ী তোফায়েল হোসেন বলেন, বাংলাদেশ সীমান্তের ৩১ নম্বর পিলার থেকে ৫৬ নম্বর পিলারের প্রায় ৯২ কিলোমিটার সীমান্তের ওপারের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে উদ্বেগ বাড়ছে।
মধ্যরাতে ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ি সীমান্তের ওপারে বিস্ফোরণের বিকট আওয়াজ শোনা যায়। ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়া এলাকায় কখনো কালো ধোঁয়া আবার কখনো গুলি বা মর্টার শেলের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে এখানে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
এদিকে প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নজরদারি বাড়িয়েছেন। অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ঘুমধুম, তুমব্রু, জলপাইতলী, বাইশফাঁড়ি, হেডম্যান পাড়া, চাকমাপাড়া সীমান্ত এলাকাগুলোয় সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্যরা। টহলও জোরদার করা হয়েছে।