আবারও মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী রাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধে দাদামা। দখলদার ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিদের নির্মমভাবে হত্যা করছে। পুরো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছে। অবরুদ্ধ গাজায় সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় ৩৫ হাজার নিরিহ ফিলিস্তিনে বোমা মেরে হত্যা করেছে। এবার হাত বাড়িয়েছে পাশের রাষ্ট্রগুলোর প্রতি। এতে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে।
জানা যায়, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা এবং তেল আবিবকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার জন্য তেহরানের আহ্বান মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সংকটকে আরও তীব্রতর করে তুলেছে। দেশ দুটির মুখোমুখি অবস্থান তাদের সামরিক সক্ষমতা, নিজ নিজ অস্ত্রাগারের মজুদ এবং কৌশলগত দক্ষতার স্তর সম্পর্কে জানতে মানুষকে আগ্রহী করে তুলেছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এই অঞ্চলে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের মদদে তেহরানের অন্যতম প্রতিপক্ষ তেল আবিব যদি সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়ায় তবে জয়ী হবে কোন পক্ষ।
দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে ইসরায়েলি বিমান হামলার প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে তেহরান। এরইমধ্যে উপযুক্ত জবাব দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে পাল্টা হামলার প্রস্তুতি শুরু করেছে তেহরান। এ অবস্থায় রাইসি প্রশাসনের সামনে নেতানিয়াহু প্রশাসন কতক্ষণ টিকবে বিশ্বজুড়ে তা নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ।
ছয় মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধ ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই সোমবার (১ এপ্রিল) সিরিয়ায় ইরানি দূতাবাসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে নিহত হন ইসলামী বিপ্লবী গার্ডের শীর্ষ কমান্ডারসহ বেশ কয়েকজন। ইসরায়েলি বাহিনীর এই হামলাকে তেহরানের নেতারা নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করে এর কড়া জবাব দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
নিহত জেনারেলদের জানাজার নামাজে অংশ নেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। এ সময়, হত্যার কঠোর প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, এই হত্যার জন্য কঠিন পরিণতি অপেক্ষা করছে ইসরায়েলের জন্য।
কূটনৈতিক মিশনে হামলার ওই ঘটনায় নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি ইসরায়েল। তবে এরইমধ্যে অগ্নিগর্ভ হয়ে থাকা মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি এ ঘটনায় আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, পাল্টা জবাব দিতে ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান। তবে এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে তেহরান। বলা হয়েছে, নেতানিয়াহুর ফাঁদে পা না দিতে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েক বছর ধরেই নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়িয়েছে ইরান। আন্তর্জাতিক সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষণ ওয়েবসাইট গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্যমতে, ১৪৫টি দেশের মধ্যে ইরান ১৪তম আর ইসরায়েল রয়েছে ১৭তম অবস্থানে। ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, ইরানের ৬ লাখ ১০ হাজার নিয়মিত সেনা থাকলেও ইসরায়েলের রয়েছে মাত্র এক লাখ ৭০ হাজার সেনা। তবে রিজার্ভ সেনার দিক দিয়ে এগিয়ে আছে ইসরায়েল। তাদের সেনা রয়েছে চার লাখ ৬৫ হাজার। অন্যদিকে, তেহরানের রিজার্ভ সেনা হলো তিন লাখ ৫০ হাজার। আবার আধাসামরিক বাহিনীর দিক দিয়ে এগিয়ে রাইসি প্রশাসন। দেশটিতে ২ লাখ ২০ হাজার আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। বিপরীতে নেতানিয়াহু প্রশাসনের রয়েছে মাত্র ৩৫ হাজার।
এদিকে, বিমান বাহিনীর শক্তির তুলনামূলক বিবেচনায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে তেল আবিব। ৬১২টি সামরিক বিমান ও ২৪১টি যুদ্ধবিমান রয়েছে তেল আবিবের। আর তেহরানের সামরিক বিমানের সংখ্যা ৫৫১টি ও যুদ্ধবিমান ১১৬টি। পাশাপাশি হামলায় ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান ইসরাইলের ৩৯টি, আর ইরানের রয়েছে ২৩টি। আবার ৮৬টি পরিবহন বিমান রয়েছে তেহরানের, তেল আবিবের ১২টি। এছাড়া ইসরায়েলের ১৪৬টি এবং ইরানের ১২৯টি হেলিকপ্টার রয়েছে।
অন্যদিকে, ইরানের ট্যাংকের সংখ্যা এক হাজার ৯৯৬টি। বিপরীতে ইসরায়েলের এক হাজার ৩৭০টি ট্যাংক রয়েছে। সাঁজোয়া যানেও এগিয়ে রয়েছে তেহরান। দেশটির ৬৫ হাজার ৭৬৫টি সাঁজোয়া যান রয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের রয়েছে ৪৩ হাজার ৪৩টি। এছাড়া ইরানের সাবমেরিন রয়েছে ১৯টি, আর ইসরাইলের আছে ৫টি।
মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতাধর দু’দেশেরই রয়েছে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। বিশেষ করে ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাফল্য বেশ ঈর্ষণীয়। এছাড়া দুই দেশের হাতে রয়েছে দূর ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র।