চট্টগ্রামের ইতিহাস:ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক চট্টগ্রাম, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এই প্রাচীন শহরটি তার সমৃদ্ধ ইতিহাস, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বাণিজ্যিক গুরুত্বের জন্য বিখ্যাত। এশিয়া মহাদেশের অন্যতম প্রাচীন বন্দরনগরী হিসেবে চট্টগ্রামের ইতিহাস হাজার বছরের পুরনো। এই শহরের নামকরণ, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য নিয়ে রয়েছে নানা কাহিনী ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব।

**প্রাচীন ইতিহাস**
চট্টগ্রামের ইতিহাস প্রায় তিন হাজার বছরের পুরনো। প্রাচীনকালে এটি ‘চতুগ্রাম’ নামে পরিচিত ছিল। ধারণা করা হয়, বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারকগণ এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিলেন। পরবর্তীতে এটি আরব ও পারস্যের বণিকদের কাছে ‘সমুন্দরগিরি’ নামে পরিচিত হয়। মধ্যযুগে চট্টগ্রাম বাংলার স্বাধীন সুলতানদের অধীনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী হিসেবে গড়ে ওঠে।
**মুঘল ও ব্রিটিশ আমল**
১৬৬৬ সালে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সেনাপতি শায়েস্তা খান চট্টগ্রাম দখল করেন। মুঘল শাসনামলে চট্টগ্রাম বন্দর আরও উন্নত হয় এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৭৬০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চট্টগ্রাম দখল করে এবং এটি ব্রিটিশ ভারতের অংশ হয়ে ওঠে। ব্রিটিশ শাসনামলে চট্টগ্রাম রেলওয়ে ও বন্দর উন্নয়নের মাধ্যমে আরও প্রসার লাভ করে।
চট্টগ্রামের ইতিহাস: ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক **স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম**
চট্টগ্রাম বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৩০ সালে মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন বিপ্লব ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে একটি বড় প্রতিরোধ আন্দোলন হিসেবে ইতিহাসে স্থান পায়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের বন্দর ও রেলওয়ে স্টেশন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
**আধুনিক চট্টগ্রাম**
বর্তমানে চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং প্রধান বন্দরনগরী। এখানে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, যেমন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, ফয়েজ লেক এবং চন্দ্রনাথ পাহাড়। চট্টগ্রামের সংস্কৃতি, ভাষা এবং ঐতিহ্য বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে কিছুটা ভিন্ন, যা এটিকে একটি অনন্য পরিচয় দিয়েছে।
চট্টগ্রামের ইতিহাস শুধু একটি শহরের গল্প নয়, এটি বাংলাদেশের গৌরব, সংগ্রাম এবং উন্নয়নের প্রতীক। এই শহর তার অতীতকে ধারণ করে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে।