
আরিফুল ইসলাম সুমন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে।
। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের বর্তমান সাংসদ জিয়াউল হক মৃধা এখন অতীত ভুলের খেসারত দিচ্ছেন। বড় একটি ভুলের কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে তাঁর ত্যাগী কর্মী-সমর্থকদের নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হচ্ছে এখন পদে পদে। তাঁর ভুলের কারণে এই আসনে তারই প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন মেয়ের জামাই রেজাউল ইসলাম। এমনকি জামাই রেজাউল কৌশলে দলীয় মনোনয়ন থেকেও শ্বশুরকে বঞ্চিত করেন। শেষপর্যন্ত ভোটের মাঠে টিকে থাকতে সাংসদ জিয়াউল হক স্বতন্ত্রপ্রার্থী হন। সেখানেও মেয়ের জামাই তার পিছু ছাড়েননি। এদিকে জিয়াউল হকের কাছ থেকে অতীতে যারা নানা সুবিধা নিয়েছিলেন, এখন ভোটের মাঠে তারা কেউ কেউ প্রকাশ্যে বিরোধীতা করছে। এতোকিছুর পরও এমপি জিয়াউল হক মৃধা দাবি করছেন, তিনি কোনো ভুল করেননি। তিনি সবসময় সুবিধা বঞ্চিত মানুষের কথা ভেবেছেন। সাধারণ মানুষের উন্নয়নের চিন্তা করে প্রায় সকল কিছুই তিনি নিজের হাতে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। তবে অতি কাছের মানুষের দ্বারা তিনি এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তা তিনি কখনও ভাবেননি। যেই লোকটি টানা দশ বছর দাপুটের সাথে সংসদ সদস্য ছিলেন। এই দশ বছরে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নেই। সেই ক্লিন ইমেজের লোকটি আজ ভোটের মাঠে নানা প্রশ্নের শিকার হচ্ছেন – এসবের কারণ খুঁজতে “অজানা বাংলাদেশ” এর বিশেষ অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে অন্তরালের নানা কথা। সাংসদ জিয়াউল হকের পরিবার, রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠ ও ব্যক্তিগত সদস্যদের সাথে একান্ত আলোচনায় এবং এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, জিয়াউল হকের
সর্বশেষ বড় ভুলটি ছিল একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহুর্তে তাঁর বড় মেয়ের জামাই রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়ার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখা। যার খেসারত তিনি এখন হারে হারে টের পাচ্ছেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচন : জামাই রেজাউল ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসন থেকে নির্বাচন করবেন। আর শ্বশুর জিয়াউল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে। একসময় বুঝতে পারেন রেজাউল ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ এ নমিনেশন পাওয়া সম্ভব না। তখনই তিনি শ্বশুরের আসনে নজর দেন। বিষয়টি টের পেয়ে বিভিন্ন মহল সাংসদ জিয়াউল হককে অবহিত করলেও তিনি জামাইকে অবিশ্বাস করেননি। তিনি জোর গলায় জবাব দেন, এটা হতেই পারে না। সে আমার মেয়ের জামাই হলেও আমার সন্তান সমতুল্য। আমার এতোদিনের তৈরি মাঠ সে নষ্ট করতে আসবে না। একসময় বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে গণমাধ্যমকর্মীরা রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়ার সাথে যোগাযোগ করেন। তবে তিনিও তখন শ্বশুরের সুরে কথা বলেন। রেজাউল ইসলাম বলেন, আমি কি বাড়িঘর ছাড়া মানুষ। নিজের আসন ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি এলাকার আসনে নির্বাচন করতে যাবো। জিয়াউল হক আমার মুরুব্বি। তার গুছানো মাঠ আমি নষ্ট করতে যাব কেন। তাছাড়া আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি করা মানুষ, সরাইল-আশুগঞ্জের মতো জায়গায় গিয়ে আমাকে নির্বাচন করতে হবে, তা আমি কল্পনাও করি না। তবে শেষপর্যন্ত এমপি নির্বাচিত হওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে জামাই তার অঙ্গীকার ভুলে এখন শ্বশুরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন। টি.আর/কাবিখা-কাবিটা বন্টন : সাংসদ জিয়াউল হক মৃধার দশ বছরে বিভিন্ন উন্নয়ন বরাদ্দ তিনি নিজ হাতে বন্টন করেছেন। অপব্যবহার এড়াতে এসব বন্টনের দায়িত্ব কোন নেতাকর্মী হাতে দেননি। যার কারনে কিছু ঘনিষ্ঠ কর্মী তার ওপর নাখোশ। – (চলবে)