
নিউজ ডেস্ক
জীবন যুদ্ধ বড় কঠিন, সেই কঠিনের সাথে বন্ধুত্ব ছিল রাজনীতির দার্শনিক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। টানা ৩ মেয়াদে মন্ত্রী এবং ২২ বছর সংসদ সদস্য থাকার পরেও যে নেতার সম্পদ না বাড়ে বরং কমেছে ক্রমাগত কমেছে। দুঃখজনক হলে সত্য রাজনীতির এই দার্শনিকের চিকিৎসার ব্যয়বহন করার মত সামর্থ্য ছিল না। তার চিকিৎসার খরচ বহন করেছে রাষ্ট্র। মৃত্যুকালে পৈতৃক বাড়িটা ছাড়া আর কোন বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট কিছুই ছিল না। তার তার বন্ধু ও রণাঙ্গানের সহযোদ্ধা ময়মনসিংহ-তিন আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মত সৎ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ আমি আমার জীবনে কখনো দেখিনি। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মাজে মধ্যে প্রায় বলতেন কী হবে এত
ধন-সম্পদ দিয়ে? মানুষ শুধু শুধু ধন-সম্পদের পিছনে ছুটে কেন আমি জানিনা কাল আমি না তাকলে এ সম্পদের কি হবে!’বাপ দাদা ও উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া গুলশানে একটি বাড়ি ছিল সে বাড়ি বিক্রি করেন তার স্ত্রীর চিকিৎসার খরচের জন্যে। স্ত্রীকে লন্ডন থেকে জার্মানিতে চিকিৎসার জন্য টাকা যোগাড় করতে গিয়ে বিমানের টিকেট পিছাতে হয়েছিল ২ বার। তিনি সরকারি বরাদ্দের কোন প্লট নেইনি,নেইনি কোন শুল্কমুক্ত গাড়ির সুবিধা। অথচ অনেক এমপি, মন্ত্রীরা কোন রকম একবার এমপি মন্ত্রী হতে পারলে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে যায় নিজ নামে-ও অন্য বেনামে।টাকার মালিক করে দেন আত্মীয়-স্বজন ও স্ত্রীদের এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড.
মেসবাহ কামাল বলেন, ‘শত শত বছরে সৈয়দ আশরাফদের মত রাজনীতিবিদ কালেভদ্রেই আসেন এই ভূখন্ডে। যারা নিজের কর্মদ্বারা অন্যের অনুকরণীয় হয়ে উঠেন।’পুরো জাতির কাছে অবিস্মরণীয় সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। মহান এক নেতা, বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় চার নেতার এক নেতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের জেষ্ঠ্য সন্তান। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি মুক্তিযোদ্ধা। মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতির ছেলে হয়েও রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধকালীন রাষ্ট্রপতির ছেলে হয়েও শুকনো রুটি খেয়েছেন, স্টেনগান হাতে মাটিতে বুকে ভর দিয়ে যুদ্ধ করেছেন পাকিস্তানি হয়না শত্রুদের বিরুদ্ধে।তখন মিত্রবাহিনীর জেনারেল উবান স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে তার লেখা বইয়ে যে
ফিনফিনে পাতলা শরীর, শান্ত স্বভাব আর বুদ্ধিদীপ্ত তরুণ যোদ্ধা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কথা বলেছিলেন, তিনিই এই সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। যিনি আমাদের কাছে রাজনীতির দার্শনিক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনি খুব সাধারণ মানুষের মতো চলাফেরা করতেন সেই সৈয়দ আশরাফুলইসলাম ১৯৭৫ সালের তিন নভেম্বর জেলে বাবা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর লন্ডনে চলে যান। বৃটেনে লেবার পার্টির সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। অথচ হওয়ার কথা ছিল ব্রিটেনের লেবার পার্টির এমপি। সেই ইচ্ছা ত্যাগ করে ১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে আসেন এই জনপ্রিয় নেতা। জুন ১৯৯৬ সালের ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত টানা ২২ বছর জাতীয়
সংসদ সদস্য ছিলেন।তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ১/১১ এর সময় যখন আওয়ামী লীগ দিক বেদিক শূন্য ঠিক তখন দলটির হাল শক্ত হাতে যে দুই কান্ডারি ধরেছিলেন তাদের মাঝে প্রয়াত নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম অপরজন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। কিভাবে বিপর্যস্ত জিল্লুর রহমান বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানাকে দিয়ে অনুরোধ করিয়েছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে অনুরোধ করেছিলেন। সেই দিন, এই দুই কান্ডারির জন্য বেঁচে গিয়েছিল বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটির।খুব ভালবাসতেন এই রাজনীতির দার্শনিক। এ বিষয়ে একুশে পদক প্রাপ্ত লেখক ও কলামিস্ট অধ্যাপক যতীন সরকার বলেন, ‘সৈয়দ আশারাফুল ইসলামের পিতা শহীদ সৈয়দ
নজরুল ইসলামের সাথে আমার গভীর সম্পর্ক ছিল। তাই আমরা একই এলাকার মানুষ। সে কারণে তাদের বাসায় প্রায়ই যাওয়া আশা হতো। ওই সময় দেখতাম সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বই নিয়ে পড়তেন। আমার মনে হতো সারাক্ষণ বইয়ের মাঝে সে ডুবে থাকতো। তার এই বই পড়ার বিষয়টা আমার খুব ভাল লাগতো। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম খুব মৃদভাষী ছিলেন। এই গুণটাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে বলে আমি মনে করি।’ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলের সাধারণ সম্পাদক থাকার সময় কাজ ভাগ করে দিতেন তিন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের হাতে বলে জানান, দলে থাকা একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। একটি ধারণা পুরো জাতির কাছে দিতে
পেরেছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ক্যামেরার সামনে ফটো সেশনে বাইরেও সাধারণ সম্পাদকের আরও অনেক কাজ করতে হয় তা বুঝিয়ে গেছেন এ রাজনীতির দার্শানিক। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্মৃতিচারণ করে বর্তমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছিলেন একজন সৎ, পরিচ্ছন্ন, সফল রাজনীতিক। তিনি তার সততা, যোগ্যতা, দক্ষতা ও মেধা দিয়ে তা প্রমাণ করেছেন, আওয়ামী লীগের বাইরেও অনন্য অনন্য রাজনৈতিক দল গুলোতে ও সর্বস্তরের মানুষের মাঝে স্থান করে নিয়েছিলেন। যা সমসাময়িক কোন নেতা বাংলাদেশে কখনও নিতে পারবে কী না সন্দেহ আমি মনে করি সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মত আমরা একটা নেতা পেতে আমাদের
অনেক সময় লাগবে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের আরও বলেন
বাংলাদেশের মানুষ সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে শোকাহত আজ সারা বাংলাদেশ আমরা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এর অভাব কখনো পূরণ করতে পারবো কিনা জানিনা?আমরা মনে করি সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মতো আর কোনো নেতা পাব কিনা সন্দেহ? তবে তিনি খুব সৎ ব্যক্তি ছিলেন