আরিফুল ইসলাম সুমন, স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত থাকলেও এবং মন্ত্রী পরিষদ সভায় (একনেক) অনুমোদন দেয়া হলেও অজানা কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অধিক জনগুরুত্বপূর্ণ “মলাইশ-শাহজাদাপুর-নিয়ামত-ধাউরিয়া” সড়কের নির্মাণ কাজ এখনো শুরু করা হয়নি। বছরের পর বছর ধরে এই সড়কের নির্মাণ কাজ এবছর শুরু হবে, সেইবছর শুরু হবে; কৃষি প্রধান তিন গ্রামের মানুষদের শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েই যাচ্ছেন এখানকার শীর্ষ জনপ্রতিনিধি সহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ফলে এই সড়ক নির্মাণে কার্যত কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। এমনটাই জানিয়েছেন শাহজাদাপুর, নিয়ামতপুর ও ধাউরিয়া গ্রামের ক্ষুব্ধ ভূক্তভোগী মানুষেরা।
সরেজমিন জানা যায়, উপজেলার শাহজাদাপুর, নিয়ামতপুর ও ধাউরিয়া এই তিন গ্রামের বসবাসকারী সহ আশপাশ এলাকার অন্তত ৪৫ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র সড়ক এটি, যাতে বছরের পর বছর জরাজীর্ণ অবস্থার কারণে এ সড়কে চলাচলকারী মানুষদের নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয় প্রতিনিয়ত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সরকারের প্রতিনিধিরা এ সড়ক নির্মাণে নানা প্রতিশ্রুতি শুধু দিয়েই গেছেন।স্থানীয় লোকজন জানান, বিগত বিএনপির সরকারের আমলে তৎকালীন সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূইঁয়া এ সড়ক নির্মাণে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি এখানে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং একবার প্রতিমন্ত্রীও হন, বার বার তিনি প্রতিশ্রুতিই দিয়েছেন, তবে প্রতিফলনের
কিছুই হয়নি। পরবর্তীতে চারদলীয় জোট বিএনপি সরকার আমলে উপজেলার কালীকচ্ছে ‘বাংলাদেশ রাইফেলস’ মাঠে এক অনুষ্ঠানে এসেছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সেই অনুষ্ঠানে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনীর জোর দাবির মুখে এই সড়ক দ্রুত নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তবে কেউ-ই কথা রাখেননি। সর্বশেষ মহাজোট সরকারের আমলে বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা এই তিন গ্রামের মানুষের দীর্ঘ দিনের দুঃখ ও দুর্দশা লাগবে এই সড়ক নির্মাণ সহ এখাকোর গ্রামগুলোকে বিদ্যুতায়ন করার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে তিনি
প্রথমদিকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পাঁচ বছর পার করলেও এখানকার প্রতিশ্রুতির কোনটারই প্রতিফলন দেখাতে পারেননি। তবে এই জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির অগ্রাধিকার তালিকায় আছে এবং তা নির্মাণে একনেক এর সভায় অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ আসার সাথে সাথে এ সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে, এমন প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সাংসদ জিয়াউল হক দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে এইবারও পাঁচ বছরের শেষদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগমূহুর্তে তিনি শাহজাদাপুর, ধাউরিয়া ও নিয়ামতপুর এ তিন গ্রামে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিলেও সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেননি। গ্রামগুলোতে
বিদ্যুতায়ন কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।এদিকে স্বাধীনতাত্তোর দীর্ঘ ৪৮ বছর পর বিদ্যুতায়ন সুবিধা পেয়ে এখানকার তিন গ্রামের হাজারো মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করলেও এসব মানুষ বলছেন তাদের দীর্ঘ দিনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে জরুরি ভিত্তিতে এখানকার সড়কটি নির্মাণ করা ইউক।শাহজাদাপুর গ্রামের হাজী দৌলত খান জানান, এই সড়ক নির্মাণে ” ৩৬ বছর যাবত শুধু প্রতিশ্রুতিই শুনে যাচ্ছি, বাস্তবায়ন হবে কোন বছর”। দৌলত খান আক্ষেপ করে বলেন, মনে হচ্ছে মৃত্যুর আগে এই সড়কের নির্মাণ কাজ আর দেখে যাওয়া হবে না।
মোঃ শহীদুজ্জামান মাস্টার জানান, কৃষি প্রধান এলাকার এ সড়কটি অধিক জনগুরুত্বপূর্ণ। এ সড়ক নির্মাণে বিভিন্ন সময়ে জনপ্রতিনিধিরা শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়ে গেলেন, কিন্তু এর কোনো
প্রতিফলন নেই। স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহযোগিতায় আমরা অবশেষে বিদ্যুৎ পেয়েছি, আশা করি সড়কটি নির্মাণে সরকার ব্যবস্থা নিবেন।
হাজী শাহজাহান খাদেম বলেন, অতীতে জনপ্রতিনিধিরা এই সড়ক নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে আমাদের কাছ থেকে শুধু ভোট নিয়েছেন। কিন্তু তারা একটি কথাও রাখেনি। আমাদের বর্তমান এমপি এখন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই এই সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু করাবেন।
শাহজাদাপুর গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী মোঃ মামুন খান জানান, এ সড়কের জরাজীর্ণ অবস্থার কারণে এখানকার হাজার হাজার মানুষের দূর্ভোগের শেষ নেই। এই সমস্যাটি নিয়ে
বিভিন্ন মিডিয়ায় অতীতে বহু লেখালখি হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এখানকার নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণ এ সড়ক নির্মাণে গ্রামের মানুষদের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন প্রতিনিয়ত, তবে এসবের কোন বাস্তবায়ন নেই। এ সড়ক নির্মাণ প্রসঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা জানান, ইতিমধ্যে সেই গ্রামগুলোতে বিদ্যুতায়নের কাজ করা হয়েছে। আশা করি স্বল্পসময়ের মধ্যে যেকোনো সময়ে সেই সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।