আরিফুল ইসলাম সুমন, স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে জলমহাল ইজারায় সরকারি কোনো নিয়মনীতি মানছেন না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
উপজেলার “মোড়ল গজারিয়া কুড়ি” নামে বিলটির ইজারা দেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে এখানকার সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা এবং স্থানীয় মৎস্যজীবি সমিতির বিরুদ্ধে উঠেছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। এছাড়াও কয়েকজন অসাধু ব্যক্তির অনৈতিক কান্ডকারখানায় এখানে ভূয়া প্রকল্প দেখানো হচ্ছে। অবৈধ বাণিজ্যে একই বিলকে ইজারাও দেয়া হয়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সাব-লীজ দেয়া হয়েছে এ বিল। তবে এসব বিষয়ে রহস্যজনক কারণে উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তকর্তারা নীরব রয়েছেন।
এদিকে সাব লীজ নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন বিলটির মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া ‘তিতাস নদীতে’ একাধিক স্থানে বাঁধ দিয়েছেন। তারা নদীর বিভিন্ন অংশে পানি সেচ দিয়ে মৎস্য শিকার করছেন। এতে বিশাল হাওরের ইরি বোরো চাষে সেচ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অপরদিকে জলমহাল নীতিমালা অমান্যকারী এইসব মৎস্যজীবি সমিতিকে আবারো বিল ইজারা দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে স্থানীয় সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।জানা গেছে, উপজেলার কালীকচ্ছ মৌজার ধর্মতীর্থ এলাকায় ১০৫৭৬ দাগে প্রায় সাড়ে ৭১ একর জায়গা জুড়ে “মোড়ল গজারিয়া কুড়ি” নামে এ বিল। এখানে দীর্ঘ বছর যাবত এ বিল ইজারাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একাধিক সিন্ডিকেট। নিয়ম রক্ষার্থে অমৎস্যজীবি ব্যক্তিদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে একাধিক নামমাত্র মৎসজীবি সমিতি। এসব সমিতিতে সদস্য
হিসেবে প্রকৃত কোনো মৎস্যজীবি নেই। তারা সকলেই অন্যান্য পেশার সাথে সম্পৃক্ত। এইসব সমিতির পেছনে রয়েছে আবার রাজনৈতিক নেতা সহ প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও সমাজের মাতব্বর কিছিমের লোকজন। আর এই সুযোগে উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা ফায়দা লুটছে হরহামেশা। এদিকে উন্নয়ন প্রকল্পের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিল ইজারা নিয়ে বিগত ছয় বছরে কোনো প্রকার উন্নয়ন করা হয়নি। তবে উন্নয়ন করা হয়েছে, এমন মিথ্যা পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় মৎস্যজীবি সমিতি ও সংশ্লিস্ট বিভাগের কর্তা ব্যক্তিরা।
এসব অনিয়ম ও জলমহাল ইজারা নীতিমালা অমান্য করার একাধিক প্রমাণাদি লিখিতভাবে উল্লেখ করে স্থানীয় “ধর্মতীর্থ মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেড” এবং গলানিয়া মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেড” এই দুই সমিতির লোকজন কয়েকদিন আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন।এ বিষয়ে গলানিয়া মৎস্যজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ নবী হোসেন দাবি করেন, দূর্গাচরন দাস কোন মৎস্যজীবি নয়। তিনি পেশায় একজন বাউল শিল্পী। তার “ধর্মতীর্থ মৎস্যজীবি সমিতি” এ বিল ছয় বছরের জন্য ইজারা নিয়ে, স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির কাছে তারা সাব-লীজ দিয়েছে। যা জলমহাল নীতিমালা লঙ্ঘন, তারা এটি করেছে। তাছাড়া কোনো উন্নয়নও করতে পারেনি তারা। অনিয়মের অপরাধে এ সমিতি বাতিল করতে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত
আবেদন করা হয়েছে বলে নবী হোসেন জানান। অপরদিকে “ধর্মতীর্থ মৎস্যজীবি সমিতির” সাধারণ সম্পাদক দূর্গাচরন দাস দাবি করেন, তিনিই প্রকৃত মৎস্যজীবি পরিবারের সন্তান। নবী হোসেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক হলেও তিনি নিজেই তো মৎস্যজীবি না। একসময় এই বিল সাব-লীজ দিয়েছিলেন নবী হোসেন। তাছাড়া সমিতির ৪০ সদস্যের স্বাক্ষর জাল করেছে নবী হোসেন। তাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতাও পেয়েছে কর্তৃপক্ষ। নবী হোসেনের সমিতিও বাতিল হওয়া প্রয়োজন।
কালীকচ্ছ এলাকার “প্রত্যাশা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল দাস, রূপালী মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি মোঃ তাহের মিয়া ও নদ্দাপাড়া মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্রী নিবাস জানান, এখানে বিল ইজারা নিয়ে বারবার অনিয়ম হচ্ছে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এখানে সরকারি নীতিমালা মানছেন না উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা। বর্তমানে এই বিল ইজারাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। তবে খোলা দরপত্রের মাধ্যমে বিলটি ইজারার ব্যবস্থা করলে সরকার অধিক রাজস্ব পাবে। এলাকাতেও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে বলে তারা জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, সকল অভিযোগ সঠিক নয়। ছয় বছরের উন্নয়ন প্রকল্পের কোন প্রতিবেদন আমার পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। এসবের ভাউছার আছে কিনা তাও আমার জানা নেই। তবে অডিট হয়েছে। কিছু উন্নয়ন তো হয়েছেই। বিল ইজারা নিয়মভঙ্গ, বাঁধ ও সেচ দিয়ে মাছ শিকার ইত্যাদি বিধি বহির্ভূত কাজ সেখানে ঘটলেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ? এমন প্রশ্নের জবাবে সমবায় কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন কৌশলে পাশ কেটে যান।এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এ এস এম মোসা জানান, নীতিমালায় সাব-লীজ, বিলে বাঁধ ও সেচ দিয়ে মাছ ধরা সবই বে-আইনি কাজ। এসবের তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সরাইলে জলমহাল ইজারা নিয়ে বাণিজ্য : অমৎস্যজীবিদের দৌড়ঝাপ !