
আরিফুল ইসলাম সুমন, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে।
যেই বয়সে হাতে বই, খাতা ও কলম থাকার কথা, সেই বয়সে আটবছর বয়সী সুখীর হাতে সংসারের নিত্যচাহিদা মেটানোর বোঝা বইবার থলি (বাজারের ব্যাগ)।
সুখীর পিতা মোঃ জসিম মিয়া আরেকটি বিয়ে করে তাদের ফেলে অন্যত্র চলে গেছেন। এখন সংসারের ঘানি টানার দায়িত্ব পড়েছে সুখী ও তার মাতা হোসেনা বেগমের কাঁধে। ভূমিহীন পরিবার, অভাবের সংসার তাই-তো অসহায় মা ও মেয়ে ভাগাভাগি করে এ সংসার চালানোর দায়িত্ব নিয়েছে।
স্বামী পরিত্যক্তা হোসেনা বেগম দৈনিক দুইশত টাকা চুক্তিতে দিনমজুরী দিয়ে সংসারের চাল, ডাল ও পরিবারের অন্যান্য চাহিদা মেটান। আর সুখীর দায়িত্ব হলো পরিবারের সদস্যদের দু’মুঠো ভাতের তরকারি’র জোগান দেয়া। এই বয়সে কায়িকশ্রমে টাকা রোজগার সম্ভব নয়, তাই সুখী প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সদরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দু’হাত বিছিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি পেশা বেছে নিয়েছে। তরকারি’র জন্য “আলু ও পাঙ্গাস মাছ” কেনার টাকা জোগাড় না হওয়া পর্যন্ত সুখী বাজারে বাজারে বিভিন্ন মানুষের কাছে দুই হাত বিছিয়ে সাহায্য চাইতেই থাকে।
গত মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সরাইল উপজেলা সদরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল “সরাইল নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম” কার্যালয়ে এসে দু’হাত বিছিয়ে অর্থ সাহায্য চায় শিশু সুখী, সঙ্গে তার ছয় বছর বয়সী ছোট ভাই আমিন উল্লাহ। এসময় উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে খুলে বলে একজন সুখী’র বাস্তব জীবনের অজানা অসুখী’র সকল দুঃখ-বেদনার কথা।দু’চোখের কোণে অশ্রু জ্বলজ্বল করছিল আর সুখী বলছিল, তাদের বাড়ি উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের নন্দীপাড়া গ্রামের “বাবুর মন্দির” সংলগ্ন এলাকাতেই। পিতা জসিম মিয়া অন্যত্র বিয়ে করে চলে যাওয়ার পর থেকে তাদের কোনো খোঁজ খবর নেন না তিনি।
অভাব অনটনের সংসারে সুখী সহ তার অন্যান্য ছোট ভাই ও বোনের ভরণ-পোষনের একমাত্র অবলম্বন হচ্ছেন তাদের মা হোসেনা বেগম। এছাড়া তাদের এখন আত্মীয়-স্বজন বলতে তেমন কেউই নেই। নানা, নানী, মামা, খালা কেউই না থাকায় নানীর রেখে যাওয়া একটু জায়গায় একটি টিনশেড ঘরে তাদের বসবাস। সংসারের আর্থিক ব্যয়ভার বহনে প্রতিদিন মাটিকাটার কাজ করে দুইশত টাকা রোজগার করেন সুখীর মা। তা দিয়ে সংসার চলে না, তাই পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে মায়ের সাথে সংসারের হাল ধরেছে সুখী। সে তার মায়ের সম্মতিতেই বাজারের ব্যাগ নিয়ে প্রতিদিন সাহায্যের জন্য বেরিয়ে পড়ে। সারা দিন বিভিন্ন স্থানে ঘুরে অন্তত একশ’ টাকা হলেই ‘আলু আর ছোট পাঙ্গাস মাছ’ কেনা হয়ে যায়। প্রতিদিন মা বিকেলে কাজ থেকে ফিরে এসে ভাত রান্না করে রাখেন।
আর সুখী সন্ধ্যায় বাজার করে বাড়িতে ফিরলে, তরকারি রান্না শেষে তাদের খাওয়া-দাওয়া হয়। আবার পরদিন সকালে মা ও মেয়ে জীবনযুদ্ধে বেরিয়ে পড়ে। এভাবেই চলছে তাদের জীবনযাত্রা।জীবন সংগ্রামী সুখীর – চুমকী (৭), সুমাইয়া (৫) নামে দুই বোন ও আমিন উল্লাহ (৬) ও আব্দুল্লাহ (১) নামে দুই ভাই। তবে এদের মধ্যে ছোট বোন সুমাইয়াকে নিয়ে কিছুদিন আগে সুখী সাহায্য চাইতে বেরিয়ে ছিল। পথিমধ্যে সুমাইয়া সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। এই কথাটি বলতে গিয়ে সুখী কাঁদতে শুরু করে। এখন অভাবের তাড়নায় ছোট ভাই আমিন উল্লাহকে সঙ্গে নিয়েই আর্থিক সাহায্যের জন্য প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে সুখী। উপজেলা সদরের কালিকচ্ছ বাজার ও সরাইল সদর বাজারসহ আশপাশ এলাকায় ঘুরে বেড়ায় সুখী ও তার ছোট ভাই। দুপুরে রাস্তায় তাদের পুরি-
সিঙ্গারা খেয়েই দিন চলে যায়। সারাদিনে ১০০টাকার মত সাহায্য পেয়ে রাতে এশার নামাযের আযানের পরে বাড়ি ফিরে এই দুই ভাই-বোন।তাদের পড়ালেখা করার ইচ্ছে হয় কি না ? এমন প্রশ্নের জবাবে আবারো কাঁদতে শুরু করে সুখী। সে জানায়, লেখাপড়া করতে খুব ইচ্ছে হয় তার। সুখীর ইচ্ছে ছিল লেখাপড়া করে সে ডাক্তার হবে। এখন বেঁচে থাকার লড়াইয়ে প্রতিদিন ‘আলু আর পাঙ্গাস মাছ’ কিনতে পুরনো বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে সাহায্যের জন্যে দুই হাত বিছিয়ে চলেছে সুখী ও তার ভাই। জানিনা সুখী’র ডাক্তার হবার স্বপ্ন আদৌ পূরণ হবে কি না ? নাকি তার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে ! তবে এসব প্রশ্নের জবাব সময়ই বলে দিবে।
অভাব অনটনের সংসারে সুখী সহ তার অন্যান্য ছোট ভাই ও বোনের ভরণ-পোষনের একমাত্র অবলম্বন হচ্ছেন তাদের মা হোসেনা বেগম। এছাড়া তাদের এখন আত্মীয়-স্বজন বলতে তেমন কেউই নেই। নানা, নানী, মামা, খালা কেউই না থাকায় নানীর রেখে যাওয়া একটু জায়গায় একটি টিনশেড ঘরে তাদের বসবাস। সংসারের আর্থিক ব্যয়ভার বহনে প্রতিদিন মাটিকাটার কাজ করে দুইশত টাকা রোজগার করেন সুখীর মা। তা দিয়ে সংসার চলে না, তাই পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে মায়ের সাথে সংসারের হাল ধরেছে সুখী। সে তার মায়ের সম্মতিতেই বাজারের ব্যাগ নিয়ে প্রতিদিন সাহায্যের জন্য বেরিয়ে পড়ে। সারা দিন বিভিন্ন স্থানে ঘুরে অন্তত একশ’ টাকা হলেই ‘আলু আর ছোট পাঙ্গাস মাছ’ কেনা হয়ে যায়। প্রতিদিন মা বিকেলে কাজ থেকে ফিরে এসে ভাত রান্না করে রাখেন।