অজানা বাংলাদেশ ডেস্ক:
সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া চা-চক্র নেতাদের মিলন মেলায় রূপ নেয়। শনিবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের দক্ষিণ লনের সবুজ চত্বরে বিভিন্ন দল ও জোটের নেতাদের এ মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়।বাসস সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চা-চক্রে যোগদানকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃববৃন্দকে ধন্যবাদ জানান।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা শুধু কুশলই বিনিময় করিনি, আমরা শীতের পিঠা খেতে খেতে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ করে রাজনৈতিক বিষয়ে পরস্পরের সঙ্গে আমাদের অভিমত শেয়ার করেছি। আমি আশা করি প্রধানমন্ত্রীর এই শুভ উদ্যোগে সবাই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন।একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে (১-৭ নভেম্বর) বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ দেশের ৭৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা যায়, সংলাপে অংশ নেয়া ৫৪টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের চা চক্রে আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী। আমন্ত্রণ পেয়েও বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের কোনো শরিক দলের নেতারা এই চা-চক্রে অংশ গ্রহণ করেন নি। প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণের চিঠির জবাবে ফিরতি চিঠি দিয়ে চা-চক্রে না যাওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।চা-চক্রেরঅনুষ্ঠানস্থল সাজানো হয় আবহমান বাংলার বিভিন্ন ঐতিহ্য দিয়ে। অতিথিদের বসার জন্য গণভবনের সবুজ লনে চেয়ার, টেবিল, মোড়া ও মাদুরের ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি বাজানো হয় দেশের গান। অতিথিদের ফুচকা, চটপটি, পাটিসাপটা পিঠা, ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, পুলি পিঠা, জিলাপি, কাবাব-নান রুটি, বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফল, জুস, চা-কফিসহ বাঙালি ঐতিহ্যের নানা
খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনের সবুজ লনে প্রবেশ করেন বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে। তিনি লনে ঘুরে ঘুরে অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সন্ধ্যা পৌনে ৬টা পর্যন্ত অতিথিদের সঙ্গে অবস্থান করে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন তিনি।চা-চক্রে অংশ গ্রহণ শেষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের উপনেতা জিএম কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে আমরা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীও অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে আমাদের আপ্যায়িত করেছেন। এই ধরনের আয়োজন রাজনীতিবিদদের মধ্যে সৌহার্দ-সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় করে। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের মধ্যে অনেক সময় সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকে না। তবে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিপক্ষ হতে পারে, শত্রু নয়। এ ধরনের আয়োজন দলগুলোর
বিপরীত সম্পর্ক লাঘব করে।অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে গণ ভবনের গেটে ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া চা-চক্র অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। রাজনৈতিক দলের নেতারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। এই সময় প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সব রাজনৈতিক দলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া চা-চক্রে অংশ নেয়ায় তিনি (প্রধানমন্ত্রী) অত্যন্ত খুশি হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী পুরো মাঠ ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে কুশল ও শুভেচ্ছা বিনিময় করে কথা বলেছেন।
অনুষ্ঠানে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রীগণ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ ছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দলসহ ১৪ দলীয় জোট, মহাজোট ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ছিলেন- আমির হোসেন আমু, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, ওবায়দুল কাদের, ফারুক খান, আবদুল মতিন খসরু, আবদুর রাজ্জাক, দীপু মনি, শ ম রেজাউল করিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, হাছান মাহমুদ, ইকবালুর রহিম, দেলোয়ার হোসেন, আবদুস সোবহান গোলাপ, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, বাহাউদ্দিন নাছিম,
এনামুল হক শামীম, বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু, আবু হোসেন বাবলা প্রমুখ।
এছাড়া অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, শিরিন আখতার, জাসদের (আম্বিয়া) মাঈনুদ্দীন খান বাদল, নাজমুল হক প্রধান, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, ফজলে হোসেন বাদশা, বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা এমএ মান্নান, মাহী বি. চৌধুরী, শমসের মবিন চৌধুরী, ইসলামী ঐক্যজোটের সভাপতি মিজবাহুর রহমান চৌধুরী, তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, সাম্যবাদী দলের সভাপতি দিলীপ বড়ুয়া এবং বিএনএফ সভাপতি নাজমুল হুদা।