আরিফুল ইসলাম সুমন, নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে।
বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের মাঠ পর্যায়ের একজন চৌকস অফিসার মোঃ মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া। বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। এক সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ডিবি পুলিশের ওসি ছিলেন তিনি। বর্তমানে জেলার সরাইল থানায় অফিসার ইনচার্জ ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। পুলিশের চৌকস ওসি হিসেবে বিভিন্ন অপরাধ নির্মূলে পুরো জেলায় তাঁর আধিপত্য ছিল। জেলার আলোচিত বড় বড় ঘটে যাওয়া অপরাধের রহস্য তিনি উন্মোচন করেছেন রাত দিন বিরামহীন পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে। জীবন বাজি রেখে গ্রেফতার করেন তিনি সেইসব অপরাধীদের, যারা নানা প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘ দিন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিল। তবে অপরাধীদের যম বা আতংক হিসেবে পরিচিত ওসি মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া, একজন মানবতার ফেরিওয়ালাও বটে। সরাইল
উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কুচনি – বুড্ডা এলাকায় একটি প্রাইমারি স্কুলের দরিদ্র পরিবারের ২৬ শিক্ষার্থীকে তিনি স্কুল ড্রেস বানিয়ে দেন। এতে মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে স্বীকৃতি পান তিনি স্থানীয়ভাবে। আরো অসংখ্য গরীব দুস্থ মানুষকে তিনি নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। তাই পুলিশ প্রশাসনের অনেকের নাক সিটকানি সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। তবুও নিজ যোগ্যতায় ও কর্মফলে ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনবার পেয়েছিলেন “আইজিপি পদক”। এইবারও (২০১৮ সালের হিসেবে) ভালো কাজের পুরস্কার হিসেবে চতুর্থ বারের মতো ওসি মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া পেলেন ” আইজিপি পদক”। তবে তাঁর আশা ছিল, পেশাগত দায়িত্ব পালনে দীর্ঘ দিনের কর্মফল হিসেবে এইবার নিশ্চিত তিনি “প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল – সাহসিকতা (পিপিএম)” পদক পাবেন।
\কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে, অজানা কারণে তাঁর দীর্ঘ দিনের লালিত অর্জন হাতছাড়া হয়ে যায়। এতে তিনি মানসিক কষ্ট পেলেও বিষয়টিকে ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। আর এতে ঘাটের মরা ওসি মফিজ উদ্দিন। সরাইল থানায় কর্মরত একজন পুলিশ অফিসার জানান, ওসি মফিজ উদ্দিন ভূইঁয়া অপরাধ নিমূর্লে রাত দিন তাঁর কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। এইবার তিনি পিপিএম পদক পাচ্ছেন এটা প্রায় নিশ্চিত ছিল। কিন্তু শেষ মূহুর্তে কি হলো কেউ -ই বুঝে উঠতে পারছে না। আসলে তিনি এখন ঘাটের মরার মতোই।
এদিকে সরাইল থানা সূত্রে জানা যায়, চতুর্থ বারের মতো আইজিপি পদক পাচ্ছেন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মফিজ উদ্দিন ভূইঁয়া। বিগত ২০১৮ সালে সুদক্ষ কাজের জন্য এই আইজিপি পদক পাচ্ছেন তিনি। এখানে ওসি হিসেবে দায়িত্বরত অবস্থায় ছিনতাইকৃত ১৪১ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার, এনা পরিবহন পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় নিজে পানিতে নেমে পনের জনকে জীবিত উদ্ধার এবং তিনটি লাশ নিজ হাতে উদ্ধার, শাহবাজপুর এলাকায় ডাকাতি কালে ছয় ডাকাতকে হাতে নাতে আটক, মহাসড়কের বেড়তলা এলাকায় ট্রাক চালককে হত্যার পর ট্রাক ছিনতাই করে একদল ডাকাত। তারা হবিগঞ্জ জেলায় পালিয়ে যাবার কালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক ডাকাত দলের পিছু নেন ওসি মফিজ উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশ দল। হবিগঞ্জ থেকে ট্রাক, ছিনতাইকারী ট্রাক চালক ও
ট্রাকের মালামাল উদ্ধার করায় ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ অফিসার ইনচার্জ হিসেবে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় চতুর্থ বারের মত আইজিপি পদক লাভ করেন।এছাড়াও তিনি থানা এলাকার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে মূলতবী গ্রেফতারী পরোয়ানা নিষ্পত্তি রাখা, থানা এলাকায় মাদক বিরোধী ব্যাপক অভিযানের মাধ্যমে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা, জঙ্গী ও নাশকতা প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি সহ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা, র্যালী, সভা – সমাবেশের মাধ্যমে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম গতিশীল করার মাধ্যমে পুলিশি কার্যক্রমে জনগণের অংশ গ্রহণ বৃদ্ধি করা, মাদক, জঙ্গী ও সন্ত্রাস বিরোধী সভা সমাবেশের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি সহ মাদক, জঙ্গী, সন্ত্রাস ও ডাকাত নির্মূলে ভূমিকা পালন, ইভটিজিং, বাল্য বিয়ে
এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮ অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও আনন্দমূখর পরিবেশে অনুষ্ঠানের জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নেতৃত্ব প্রদান করেন। এজন্য জাতীয় পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষ্যে সরাইল থানার ওসিকে আইজিপি পদক প্রদানের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকাস্থ রাজারবাগ পুলিশ লাইন মাঠে আনুষ্ঠানিক ভাবে এ ব্যাচ পড়িয়ে দিবেন পুলিশের মহা-পরিদর্শক (আইজি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার)।
সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মফিজ উদ্দিন ভূইঁয়ার কাছে তার এই ভালো কাজের স্বীকৃতি পাওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার চাকুরী জীবনে আমি সব সময় কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি। পুলিশ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তফাৎ দূর করার চেষ্টা করেছি। যে কোন পুরস্কার কাজের আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। তবে এই বার আরো বড় ধরনের পুরস্কার আশা করেছিলাম, আসলে ভাগ্যেই নেই। এ পুরস্কার আমার কাজের গতি আরো বাড়াবে।