অজানা বাংলাদেশ ডেস্ক:
জাতীয় সংসদে গত ৩ মার্চ বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি,সাবেক মন্ত্রী এবং সাংসদ রাশেদ খান মেননের দেওয়া বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজত ইসলামের আমীর আল্লামা আহমদ শফী। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ দাবি করেন।বিবৃতিতে আল্লামা আহমদ শফী বলেন, ‘কওমী মাদরাসার সঙ্গে এ দেশের আপামর জনগণের আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। জনগণের আর্থিক সহযোগিতায় হাজারো কওমী মাদরাসা গড়ে উঠেছে । রাষ্ট্রীয় কোন সহযোগিতা ছাড়া দেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধি, দুর্নীতি, মাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মাণ
এবং একটি ধর্মপ্রাণ জাতি উপহার দিতে কওমী মাদরাসা অনন্য নজীর স্থাপন করেছে। যা দেশের ইতিহাসে বিরল।’তিনি আরো বলেন, ‘সৎ, যোগ্য ও ধর্মপ্রাণ নাগরিক তৈরির পবিত্র স্থান কওমী মাদরাসাকে রাশেদ খান মেনন ‘বিষবৃক্ষ’ বলে আলেম-উলামা, ছাত্র সমাজ ও কোটি মানুষের মনে আঘাত করেছেন। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বীকৃত কওমী মাদরাসাকে বিষবৃক্ষ বলে সম্বোধন করে তিনি রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। এজন্য অনতিবিলম্বে সাংসদ রাশেদ খান মেননকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘কাদিয়ানী সম্প্রদায় তথা আহমদিয়া মুসলিম জামায়াত ইসলামী শরিয়ত তথা কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক কাফের। খতমে নবুয়ত অস্বীকারকারী ও নবী রাসূলদের প্রতি কটূক্তিকারি মুসলমান থাকতে পারে না। তাদের কাফের ঘোষণা ঈমানের দাবি। শুধু পাকিস্তান নয় সৌদি আরব, মিসর মালয়েশিয়াসহ পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্র ও সংগঠন কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করেছে। রাশেদ খান মেনন ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ঈমানী আন্দোলনকে পাকিস্তানি যোগসাজশ দেখিয়ে মূলত অমুসলিম কাদিয়ানিদের পক্ষ নিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের কয়েক কোটি মুসলমানের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করেছেন।’
আল্লামা আহমদ শফী বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদা রক্ষার সংগ্রামে সর্ববৃহৎ ধর্মীয় সংগঠন। হেফাজতে ইসলামের কাজ হলো, মহান আল্লাহ তাআলা, মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. ও হযরাতে সাহাবায়ে কেরামের শান-মান মর্যাদা রক্ষা, নাস্তিক্যবাদী ইসলামবিদ্বেষী অপশক্তি এবং বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইহুদি খ্রিস্টান সাম্রাজ্যবাদী, রাম-বাম গোষ্ঠীর মুকাবেলায় সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। দেশি-বিদেশি কোন অপশক্তি ইসলামকে ফুৎকারে উড়িয়ে দেয়ার স্পর্ধা দেখালে দেশের তৌহিদী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিরোধ করা এবং যে কোন ধরণের
সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা। ইসলাম ধর্ম সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার কথা বলে। ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম দেশের কোথাও কোন সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করেছে এমন কোন নজীর নেই। তাছাড়া তাবলীগ জামাতের চলমান বিরোধ নিরসন এবং স্কুল সিলেবাসে বাদ দেওয়া অংশগুলো পুনঃস্থাপনের আন্দোলন গণমানুষের দাবি ছিলো। হেফাজতে ইসলাম সে দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে এসব ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘রাশেদ খান মেনন মূলত তার প্রদত্ত বক্তব্যের মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে ধর্মবিদ্বেষ মনোভাব প্রকাশ করেছেন। অনতিবিলম্বে তিনি যদি প্রকাশ্যে ক্ষমা না চান তাহলে তৌহিদি জনতা এসব কটূক্তি, অপ প্রচার ও ধর্মবিদ্বেষী বক্তব্যের সমুচিত জবাব দেবে।’এছাড়া রাশেদ খান মেননের এ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াত ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াতের সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা নুরুল ইসলাম বলেছেন, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান
মেনন সংসদে কাদিয়ানীদের পক্ষে এবং কওমী শিক্ষা ও আল্লামা শফী’র বিরুদ্ধে অশালীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বক্তব্য রেখেছেন। তিনি পঞ্চগড়েও কাদিয়ানীদের পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন। এসব কারণে মেনন আদৌ মুসলমান আছেন, না কাদিয়ানী হয়েছেন, এ নিয়ে মানুষ সন্দেহ পোষণ করেছেন।
সংসদে দেয়া বক্তব্যে তিনি তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াতকেও দোষারোপ করেছেন। তার জানা থাকা উচিত আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশ একটি অরাজনৈতিক ও
শান্তিপ্রিয় ধর্মীয় সংগঠন। এ সংগঠন শান্তিপূর্ণভাবে আল্লাহর নবীর মহান বৈশিষ্ট্য আকিদা-বিশ্বাসের হেফাজতের ব্যাপারে আন্দোলন করে যাচ্ছে। পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রে কাদিয়ানীদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম সংখ্যালঘু ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশে কাদিয়ানীদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম সংখ্যালঘু ঘোষণা করা হলে কাদিয়ানীরা অন্যান্য সংখ্যালঘু অমুসলিমদের মতো তাদের নাগরিক অধিকার নিয়ে দেশে বসবাস করতে পারবে, তাতে কোন আপত্তি থাকবে না। রাশেদ খান মেনন তার বক্তব্যে এ বিষয়ে অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন এবং দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আল্লামা শাহ
আহমদ শফী ও কওমী শিক্ষার প্রতি কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের অবমাননা করেছেন। রাশেদ খান মেনন তার মন্তব্য প্রত্যাহার না করলে তাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক প্রতিবাদ সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন, মাও. মুহিউদ্দিন রাব্বানী, মাও. আহমদ আলী কাসেমী, মাও. জহুরুল ইসলাম, মাও. আব্দুল মালেক, মাও. মাসউদ আহমদ সাহেব, মাও. রাশেদ বিন নুর, মুফতি মোরশেদ বিন নুর।
খেলাফত আন্দোলন : জাতীয় সংসদে রাশেদ খান মেননের লাগামহীন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ হাফেজ্জী। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে কাদিয়ানীদের দোসর রাশেদ খান মেনন কুরআন-সুন্নাহর বিধান ও ইসলামী অনুশাসনকে ‘মোল্লাতন্ত্র’ আখ্যায়িত করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে (সা.) অপমানিত করেছেন। তিনি আল্লামা আহমদ শফিকে কটাক্ষ করে শুধু আলেম সমাজ নয়, প্রধানমন্ত্রী, স্পীকারসহ গোটা সংসদকে অপমানিত করেছেন। তিনি আল্লাহ ও রাসূলকে (সা.) অবমাননা করায়
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মেননকে শাস্তি প্রদানের দাবি জানিয়েছেন।গতকাল মঙ্গলবার বিকালে আলেমগণের এক প্রতিবাদ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে আরো বক্তব্য রাখেন শায়খুল হাদিস ফারুক আহমদ, দলের মহাসচিব মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজী, নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দীন, মাওলানা সাইফুল ইসলাম সুনামগঞ্জী, মাওলানা সানাউল্লাহ ও মাওলানা সাজেদুর রহমান ফয়েজী প্রমুখ।