মাহমুদুল হাসান:টাঙ্গাইল প্রতিনিধি;
ভালোবাসা ও মমতা দিয়ে নিপুন হাতে কারু কাজের মাধ্যমে মাটি দিয়ে মৃৎ-শিল্পীরা তৈরি করে থাকেন নানা তৈজসপত্র।মাটিই হল তাদের জীবন জীবিকার হাতিয়ার। কিন্তু কালের বিবর্তনে তাদের ভালোবাসার জীবিকা ফিকে হতে বসেছে। দিন যতই যাচ্ছে, ততই বাড়ছে আধুনিকতা। আর এই আধুনিকতা বাড়ার সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে মাটির তৈরি শিল্পপণ্যগুলো।
মাটির তৈরি তৈজসপত্রের প্রচুর ব্যবহার ছিল এক সময়।এ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈরি তৈজসপত্র এখন মাটির তৈরি তৈজসত্রের স্থান দখল করে নিয়েছে।টেকসই এর কারনে দাম বেশি হলেও এ গুলোই এখন চলমান। তাই টাকা বেশি হলেও এ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈরি তৈজস পত্রই কিনে থাকে সাধারণ মানুষেরা।মাটির তৈরি ঐ জিনিসপত্র গুলো
প্রতিযোগীতামূলক ভাবে কাঁচ,প্লাস্টিক আর মেলামাইনের ভিড়ে এখন টিকেই থাকতে পাড়ছে না।মৃৎশিল্পের সাথে জড়িতের জীবন ধারনও কঠিন হয়ে পড়ছে। মানবেতর জীবন যাপন করছে প্রতিভাবান টাঙ্গাইলের মৃৎ-শিল্পীরা। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইলের মৃৎ শিল্প।সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাসাখানপুরে ৩০টি
পরিবার, সদর উপজেলার ছিলিমপুর ইনিয়নের গমজানীতে ২০ টি পরিবার,গোপালপুর থানার হেমনগর ইউনিয়নে ১০০ টি পরিবার এবং ভূঞাপুর উপজেলার ফলদা কুমার পাড়ায় ২০০ টি কুমার পরিবার বসবাস করছে।তারা দিন রাত একাকার করে মাটি দিয়ে তৈরি করছে বিভিন্ন মৃৎ-পণ্য।এই সব মৃৎ-শিল্পীরা মাটি দিয়ে তৈরি করছেন পুতুল, ফুলের টব, কুয়ার পাত, হাঁড়ি
পাতিল সহ বিভিন্ন নৃত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। পরে সেগুলোকে তারা শহরের দোকান এবং বাসা বাড়িতে বিক্রয় করে থাকেন কিন্তু এখন মৃৎ শিল্পের ব্যবহার তেমন এখন চোখেই পরে না।যানাযায়,আগে টাঙ্গাইলের মিষ্টি মাটির পাত্রে বিক্রি করা হত। বর্তমানে এক মাত্র দৈ ছাড়া অন্য কোন মিষ্টান্ন বিক্রির ক্ষেত্রে মাটির পাত্র ব্যবহার করা হয় না ।এখন সৌখিন জিনিসপত্র এবং
কুয়ার পাতই একমাত্র ভরসা।সঠিক দাম নাম পাওয়ায় আর বর্তমান অবস্থায় কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছে এ সকল কারিগররা।এখন এই আধুনিকতার যুগে গ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন উৎসব, মেলায় তৈরি খেলনা পুতুল ছাড়া অন্য কোন মৃৎ-শিল্পের গ্রাহক নেই বললেই চলে। অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক ও স্টিলের জিনিসপত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে মৃৎশিল্প আজ
বিলুপ্তির মুখে পড়েছে।মৃৎ-পেশায় জড়িত বিশেষ করে এটাই যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন তাদের জীবনযাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেরার ফলদা গ্রামের মাধব পাল বলেন, বর্তমানে এলুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের কারনে মাটির তৈরী জিনিস পত্র চলে না। ফলে আমাদের জীবন ধারন কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তবুও
দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জন্য আমরা এই কাজ করে যাচ্ছি। সরকার যদি সুদ মুক্ত ঋনের ব্যবস্থা করতো তা হলে বাপ-দাদার এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারতাম। পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে পারতাম।গোপালপুর উপজেলার হেমনগর গ্রামের,ননী কুমার বলেন,আমরা যারা মৃৎ-শিল্পের সাথে যারা কাজ করি তাদের পেটে ভাতে বাঁইচা থাকাই দায় হয়ে পরেছে।মৃৎ শিল্পের প্রতি
সরকারের শুদৃষ্টি আশাকরি।মৃৎ শিল্পে সরকারী সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে সহকারী মহাব্যবস্থাপক, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন, বিসিক টাঙ্গাইল এর শাহনাজ বেগম বলেন,কালের বির্বতনে মৃৎ-শিল্প আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। আমরা বিসিক থেকে সরকারী পৃষ্টপোষকতায় বিভিন্ন কারিগরী ও আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে থাকি।বাজারজাত করনে যে
অসুবিধা আছে আমাদের কাছে আসলে সঠিক দিক নির্দেশনা ও দক্ষ কারিগর তৈরী করতে বিসিক থেকে সহযোগিতা দেওয়া হবে।ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইলের এই মৃৎ-শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত বিসিক।