
চৌধুরী নজিব: ‘ডিম খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর’ কথাটি এখন ভুল। বহুদিন পর্যন্ত ডিমকে ‘শরীরের শত্রু’ বলে প্রচার করা হয়েছে। ডিম স্যালমোনেলা জীবাণুর উৎস। এটি শরীরে কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়, এমন খবর সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই এসেছে। বিজ্ঞানীরা এখন সে মতবাদ পাল্টে ফেলেছেন।
আমরা জানি ডিম একটি আমিষ জাতীয় খাদ্য। ডিমে আছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, বি এবং বি-টুয়েলভ। এছাড়াও ডিমে রয়েছে লুটেইন ও যিয়াস্যানথিন নামে দুটি প্রয়োজনীয় উপাদান যা বৃদ্ধ বয়সে চোখের ক্ষতি ঠেকাতে সাহায্য করে। এটি পাণীজ পোটিনের ভালো একটি উৎস। এতে রয়েছে অনেক পষ্টিগুন ক্ষমতা।
ফলিক এসিড,আয়রণ,পোটিন,ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম ও বিভিন্ন ধরনের মিনারেল। আরো রয়েছে প্রায় দুইশত ধরনের এন্টিবডি । একটি ডিমে এনার্জির পরিমাণ ১৪৩ ক্যালোরি। এবং কার্বোহাইড্রেড থাকে ০.৭২ গ্রাম, প্রোটিন ১২.৫৬ গ্রাম, ফ্যাট ৯.৫১ গ্রাম। এছাড়া ফসফরাস রয়েছে ১৯৮ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১৩৮ মিলিগ্রাম এবং জিংক ১.২৯ মিলিগ্রাম।
সম্প্রতি আমেরিকার মেডিকেল জার্নাল জে এ এম এ-র প্রকাশিত এক জরিপ রিপোর্টে বলা হয়েছে- প্রতিদিন মাত্র দুটি ডিম খেলেই হৃদযন্ত্রের ক্ষতি হয়, এবং অকালে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে। এ মর্মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর জনমনে নানা সংশয়ের সৃষ্টি হয়।
সম্প্রতি এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের- এনাটমি এন্ড হিস্টোলজি বিভাগের- অধ্যাপক ড.গোলাম কিবরিয়া সালেহের সাথে কথা বলে জানাগেছে, তিনি বলেন- এই ধরণের গবেষণা ভিত্তিহীন এবং অমূলক। ডিমের কুসুমে যে পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা মানবদেহের রক্তে ‘হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রটিন ‘ বাড়াতে সাহায্য
করে যা রক্তের জন্য খুবই উপকারী। এবং রক্তের ক্ষতিকারক চর্বি ‘লো ডেনসিটি লাইপোপ্রটিন’ কমাতে সাহায্য করে।
ডিমে রয়েছে ভিটামিন বি-টুয়েলভ যা খাবারকে শক্তিতে রুপান্তর করে। একমাত্র ডিমেই রয়েছে ভিটামিন ডি যা পেশির ব্যাথা কমায়। এর ভিটামিন-ই স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি শিশুদের মেধা বিকাশে ও শরীরের মাংসপেশি গঠনেও সাহায্য করে।
তিনি আরো বলেন- একটি ডিমে সাধারণত কোলেস্টেরলের পরিমাণ প্রায় ১৬০ মিলি গ্রাম থাকে, যাদের রক্তে এল ডি এইচ স্বাভাবিক তারা দৈনিক প্রায় ২৫০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল গ্রহণ করতে পারবে। সেই হিসেবে একজন সুস্থ মানুষ দিনে কমপক্ষে দুটি করে ডিম খেতে পারবে। সিদ্ধ ডিম খেলে ডিমের যে পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা স্বাভাবিক অবস্থায়
থাকে, তাই তিনি সিদ্ধ ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ডিম তেলে ভেজে খেলে বা চর্বিযুক্ত খাবারের সাথে খেলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার অতিরিক্ত ডিম খেলেও শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে বলেন তিনি। তাছাড়া অসুস্থ মুরগির ডিম খেলেও টাইফয়েড হতে পারে, তবে এর প্রভাব দীর্ঘদিন পরে লক্ষ্য করা যায়।অর্থাৎ প্রায় ছয়
মাস পর উপসর্গ দেখা যেতে পারে। মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি আরো বলেন- আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে আমেরিকায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত এক আসামিকে বলা হলো – তোমার মৃত্যুদন্ড সাপের দংশনের মাধ্যমে কার্যকর করা হবে, এবং মৃত্যুদন্ডের দিনটিও ধার্য করা হলো।
ফাঁশির মঞ্চে লোকটিকে আনার পর, চোখ দুটি বেঁধে সাপের পরিবর্তে দুটি সুচকে জীবানুমুক্ত করে সমান্তরাল করে লোকটির শরীরে পুশ করা হলো। কিছুক্ষণ পরে লোকটি মারা গেলো।
কারণ সাপের দংশনে কোন মানুষের রক্তে যে পরিমাণ প্রোটিন তৈরি হয়, ওই লোকটির রক্তেও সে পরিমাণ প্রোটিনের
উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অর্থাৎ এটা মনের জগতের একটি নেতিবাচক ধারণা যাকে মেডিকেল সাইন্সের ভাষায় প্লেসিবো বলে। আমাদের কেউ যদি মনের মধ্যে এই ধারণ রাখে যে, ডিম খেলে আমার সমস্যা হবে অর্থাৎ যদি নেতিবাচক বা সন্দেহ জাগে তবে তার ডিম না খাওয়ায় উচিৎ বলে মনে করছি।
ডিমের কোন ক্ষতিকারক দিক নেই। বরং এতে প্রচুর প্রোটিন রয়েছে । তাই প্রতিদিন সবাইকে অন্তত একটি করে হলেও ডিম খাওয়া উচিত। এতে দেহে কর্ম ক্ষমতা বাড়ে এবং মেজাজ প্রফুল্ল থাকে। অর্থাৎ ডিম খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর কথাটি গুজব মাত্র।
চৌধুরী নজিব: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা বিভাগ।
পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম।