
মো বছির আহমেদ মির্জাপুর টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে ইট বাটা চালু করার অভিযোগ উঠেছে এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী বিরুদ্ধে কয় দিন আগেও বহুরিয়ার ষাটঊর্ধো কৃষক রহম আলীর খেতে বাতাসে দোল খেত সোনালী ধানের শিষ। প্রহর গুনছিলেন কয়দিন পরে পাকা ধান ঘরে তুলার। কথা কিন্তু তার মুঠো ভর্তি সোনালী স্বপ্ন পুড়ে ছাই ! হয়ে গেল গত ২৭ এপ্রিল ইটভাটার ছেড়ে দেয়া আগুন ও বিষাক্ত গ্যাসে কারণে পুড়ে গেছে তার জমির সমস্ত ধান। সারাবছর পরিবারে জন্য খাদ্যের যোগান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। সন্তান হারানো শোকের মতোই ধানগাছ জড়িয়ে
ধরে শোকে বিলাপ করছেন । তার মতো একই অবস্থা ওই এলাকার কয়েএকশ কৃষক পরিবারের।টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের বহুরিয়া পূর্বপাড়া এলাকায় তিন ফসলি জমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠা এএনবি-২ নামের ইটভাটার আগুনে পুড়ে ও বিষাক্ত গ্যাসে ২০ একর জমির প্রায় ১০ লাখ টাকার বোরো ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়াও ভাটা এলাকার কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দেখা দিয়েছে পরিবেশের বিপর্যয়।জানা যায়,দুই বছর আগে আব্দুর রহিম ও রেজাউল নামের দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি এলাকাবাসীর বাধা স্বত্ত্বেও ৬ একর আবাদি জমি ভাড়া নিয়ে ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের
অনুমোদন ছাড়া ভাটাটি চালু করা হয়েছিল। চালুর পর থেকেই আবাদি জমির মাটি বিক্রি করতে চাপ দিতে থাকেন তারা। এতে স্থানীয়রা রাজী না হওয়ায় পরিকল্পিতভাবেই তাদের ফসল নষ্ট করা হয়েছে বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের।ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বদর মুন্সী, মোসলেম উদ্দিন, মামুন, কদম মিয়া, তারা মিয়া, রহম আলী, করিম সিকদার, ঠান্ডু মিয়াসহ একাধীক কৃষক জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বোরো ধানের আবাদ খুবই ভালো হয়েছিল। ১৫-২০ দিন পর ধান কাটাও শুরু হয়ে যাবে। কিন্ত এরই মধ্যে গত ২৭ এপ্রিল সকালে ইটভাটার কালো ধোঁয়া
ছাড়লে পুরো এলাকার জমির ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও ভাটার আশপাশের বাড়ির গাছের আম ও লিচু নষ্ট হয়ে গেছে। সারা বছরের আবাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের সংসারটা খুবই কষ্টে হবে বলে দাবি করেন তারা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পুড়ে যাওয়া ফসলের ক্ষতিপূরণ ও তিন ফসলি জমির ওপর স্থাপন করা ইটভাটা অপসারণের দাবি জানান তারা।
এবিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন জানান, ধানের যে ক্ষতি হয়েছে তা প্রাথমিক ভাবে ৮-১০ লাখ নির্ধারন করা হয়েছে। কৃষি বিভাগ ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতির
পরিমান নিরুপণ করলেও ক্ষতি পূরণ আদায়ে ও ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তাদের কোন ভূমিকা নেই বলে জানান তিনি।ইটভাটার মালিক আব্দুর রহিম জানান, ইটভাটা তৈরীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমাদের আছে। ধান পুড়ে নষ্ট হওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, যেহেতু অনিচ্ছাকৃত ভাবে এটি হয়েছে। কৃষি অফিসকে বলা হয়েছে ক্ষতি হওয়া ধানের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ার। আমরা সে অনুযায়ী কৃষকদের টাকা দিয়ে দিবো। বিষয়টি নিয়ে কৃষকদের সাথে মিমাংসার চেষ্টা চলছে বলে জানালেন তিনি।এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল মালেক মুস্তাকিম জানান,
বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ আমার কাছে কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে তদন্ত করে ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়াসহ কৃষকদের স্বার্থরক্ষায় সব রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন অপরাধী যতই প্রভাবশালী হোক না কেন আইনের উর্ধ্বে নয়