প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেছেন, মাস্টার দা সূর্য সেনের নেতৃত্বাধীন ঐতিহাসিক চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একটি সশস্ত্র বিপ্লবের স্ফুলিঙ্গ। প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার সেই স্ফুলিঙ্গের একটি অগ্নিশলাকা। সে-দিনের উচ্চশিক্ষিত এই তরুণী বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে পাহাড়তলীতে ইউরোপিয়ান ক্লাবে আক্রমণে নেতত্বই শুধু দেন নি, নিজে আত্মঘাতী হয়ে বিশ্বের বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে অমরত্ব অর্জন করেছেন। প্রীতিলতাকে আমরা শুধু একজন নারী হিসেবেই দেখি না, তাকে দেখি ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল
মুক্তির একজন বিপ্লবী হিসেবেই। আজ বিকেলে নগরীর জেলা শিশু একাডেমী মিলনায়তনে বীরকন্যা প্রীতিলতা জন্মোৎসব উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম আয়োজিত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। তিনি আরো বলেন, নারী সমাজ অবলা নয়। দেশপ্রেম নারীদেরকে পুরুষের মতই শৌর্য-বীর্যে প্রাণিত করতে পারে। প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার ও কল্পনা দত্তের পথ ধরে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধেও তারামন বিবি বীরপ্রতীকের মত অনেক নারী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন। তাই আজকের নারী সমাজের কাছে প্রীতিলতার মত নারীরা আইকন হয়ে চিরঞ্জীব হয়ে
আছেন। তিনি চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের তাৎপর্য ও মাহাতœ সম্পর্কে বলেন, মাস্টার দা সূর্য সেন বিট্রিশ বিরোধী সশস্ত্র লড়াইকে তৎকালীন সময়ে কংগ্রেস এমনকি বামপন্থীরা ঘৃণ্য চোখে দেখেছিলেন। কেউ কেউ মাস্টারদা এই সশস্ত্র লড়াইকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবেও অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু ঐতিহাসিক সত্য হলো ঔপনিবেশিক শৃঙ্খলমুক্তির লড়াইয়ে উদার নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি কখনো কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌছে না। তাই মাস্টারদা’র মত বিপ্লবী স্ফুলিঙ্গের আর্বিভাব ছিল প্রকৃত অর্থেই একটি জাতির সশস্ত্র স্বত্বাগ্রহের আকাক্সক্ষা। একইভাবে সুভাষ চন্দ্র বসুর আজাদহীন ফোর্স গঠন বিট্রিশ
বিরোধী ঐ সশস্ত্র বিপ্লবের আরেকটি ধারা। তিনি এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণতান্ত্রিক লড়াই সংগ্রামের দীর্ঘ ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে ৭১‘র ৭ই মার্চ ঐ বিপ্লবী চেতনায় বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে চূড়ান্ত পর্ব সশস্ত্র লড়াইয়ে ডাক দিয়ে গেছেন। তাই বঙ্গবন্ধু, সুভাষ বোস, সূর্য সেন, প্রীতিলতা প্রমুখ বিপ্লবীদের পরম্পরা। প্রধান আলোচকের বক্তব্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু. মাস্টার’দা সূর্য সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদের মত বিপ্লবীদের
আত্মত্যাগের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের সফল অর্জনের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটেছে বাংলাদেশ নামক একটি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের। এই বাংলাদেশ আজ বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলন এবং বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামের সুযোগ্য উত্তরাধিকারী বঙ্গবন্ধুর তনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত ন্যায় ও সাম্যভিত্তি সমাজ বির্নিমাণে। এ লক্ষ্য পূরণে সারা জাতি আজ শেখ হাসিনার পাশে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছে। আমাদেরকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ে আরো বেশি সচেতন থেকে
নিজেদের অবস্থান থেকেই রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে প্রীতিলতা জন্মোৎসব উদযাপন পরিষদের চেয়ারম্যান, আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সম্মানী সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদের মাস্টারদা সূর্য সেনের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে জীবনকে মাতৃমুক্তি পণে জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। আজ আমাদের নারী সমাজকে ধর্মীয় উগ্র জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে প্রীতিলতার মত দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুর্দ্ধ হওয়ার সময় এসেছে। বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদের
জন্মোৎসব উদযাপন পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী খোরশেদ আলমের স ালনায় অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জন্মোৎসব উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব সাংষ্কৃতিক সংগঠক অনুপ বিশ্বাস। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সমন্বয়ক সাবেক ছাত্রনেতা আবুল বশর। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য আবদুল মান্নান ফেরদৌস, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নারী নেত্রী আবিদা আজাদ, সংস্কৃতিকর্মী মাসুদ উদ্দিন হামেদ নওয়াজ, সরিৎ চৌধুরী সাজু, কবি সজল দাশ, আরিফুর রহমান প্রমুখ।
জন্মোৎসব উদযাপন পরিষদ আয়োজিত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শুরুতেই সকাল ৬টায় পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব চত্বরে বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদের প্রতিকৃতিতে ১০৮ তম জন্মদিনে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। আলাচনা সভা শেষে শিশু একাডেমীর শিল্পীরা সূর্য সেন-প্রীতিলতাসহ অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত উদ্দীপনামূলক সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী শীলা চৌধুরী, অনামিকা তালুকদার, সুতপা চৌধুরী, মৃত্তিকা চৌধুরী প্রমুখ।