
নিজস্ব প্রতিবেদক
গত ২৬ জুন বরগুনার আলোচিত রিফাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত সব আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে কিন্তু বারবার সামনে আসা মিন্নির এক ভিডিও এবং ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া কিছু ঘটনায় মিন্নির দিকে কিছুর ইঙ্গিত দেয় এবার নয়নের মা নিজে তার মুখে স্বীকার করলেন ঘটনার আগের দিন নয়নের সাথে দেখা করেছেন মিন্নি বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ ঘটনার আগের দিনও সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডের বাসায় গিয়েছিল রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। এ কথা জানিয়েছেন
প্রধান আসামি. নয়ন বন্ডের মা শাহিদা বেগম। তিনি বলেন, ‘রিফাত শরীফ ঘটনা ঘটে ২৬ জুন, বুধবার। এর আগের দিন মঙ্গলবারও মিন্নি আমাদের বাসায় এসে নয়নের সঙ্গে দেখা করে।’এসময় নয়নের মা বলেন আমার ছেলে তো আর বেঁচে নেই আমি মিথ্যা কথা কেন বলবো মিন্নি আগের দিন আমার ছেলের সাথে দেখা করেছে যে মঙ্গলবারও আমাদের বাসায় গিয়েছিল তা আমার প্রতিবেশীরাও দেখেছে আমার প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করলে তারা সাক্ষী দিবে যে মিন্নি আমাদের বাসায় এসেছিল।’নয়ন বন্ডের মা আরও বলেন, ঘটনার
আগের দিন মঙ্গলবারই নয়; রিফাত শরীফের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পরও মিন্নি নিয়মিত আমাদের বাসায় এসে নয়নের সঙ্গে দেখা করতো। মোটরসাইকেলে মিন্নিকে রিফাত শরীফ কলেজে নামিয়ে দিয়ে চলে যেত। এরপর মিন্নি আমাদের বাসায় চলে আসত। আবার কলেজের ক্লাস শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে মিন্নি আমাদের বাসা থেকে বের হয়ে কলেজে যেত।’রিফাত ঘটনার সঙ্গে মিন্নি জড়িত দাবি করে নয়নের মা শাহিদা বেগম বলেন, ‘রিফাতের সঙ্গে মিন্নির বিয়ের খবর পাওয়ার পর আমি আমার ছেলেকে অনেক নিষেধ করেছি, যোগাযোগ না রাখতে। কিন্তু
আমার ছেলে নয়ন কখনও আমার কথা শুনতো না। ওর মনে যা চাইতো ও তা-ই করতো। নয়ন যদি আমার কথা শুনতো তাহলে এরকম ঘটনা ঘটতো না।’রিফাতের সঙ্গে বিয়ের পরও নিয়মিত নয়ন বন্ডের বাসায় আসা-যাওয়া এবং ঘটনার আগের দিনও নয়ন বন্ডের বাসায় যাওয়ার বিষয়ে শনিবার সকালে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের ফোনে কল দিয়ে মিন্নির সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মিন্নি অসুস্থ। গতকাল তাকে ডাক্তার দেখানো হয়েছে। মিন্নি এখন ঘুমাচ্ছে। তাই মিন্নি কথা বলতে পারবে না।’এছাড়া মিন্নির সঙ্গে কথা বলতে
হলে বরগুনা জেলা পুলিশের অনুমতি লাগবে বলেও জানান তিনি।প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শত শত লোকের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে হত্যা করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। রিফাতকে কোপানোর ঘটনার একটি ভিডিও ওইদিনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়ে যায়। সারাদেশে মানুষের দাবি ছিল রিফাত শরীফ কে যারা হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই কিন্তু সে ঘটনায় নয়ন বন্ড পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেও পুরোপুরি ওই
ঘটনার রহস্য রয়ে গেল রিফাত শরীফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ৬নং বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তার বাবার নাম আ. হালিম দুলাল শরীফ। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন রিফাত শরীফ।ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ধারালো রাম দা দিয়ে রিফাতকে একের পর এক কোপা কোপি করতে থাকে দুই যুবক। ওই সময় রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি দুই যুবককে বারবার প্রতিহতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ঘটনাটি পুলিশের সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিল।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রিফাত শরীফকে
ভিডিওতে যে দুই যুবককে দেখা যায় তাদের একজনের নাম নয়ন বন্ড এবং আরেকজন রিফাত ফরাজী। তারা ছিনতাই ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে জড়িত। এসব ঘটনায় তারা একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন আবার তারা বেরিয়ে একই অপকর্ম করতে থাকে।গত শনিবার বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে থাকা একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে ভাইরাল হয়। সেখানে রিফাত। সংঘটিত হওয়ার আগে ও পরে মিন্নির আচরণে কিছুটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়।সে ভিডিও তো দেখা যায় মিন্নিকে রিফাত বাড়ি নিয়ে
যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেলে ওটাতে চাইলে মিন্নি মোটর সাইকেলে উঠে অসম্মতি জানায় এ সময় মিন্নি বারবার কলজের ভিতরে যেতে চায় এতে বার বার তাকে আটকে বাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে এতক্ষণ সময় দেয়নি ঘাতকরা পরে শরীফকে কলেজের গেটের সামনে থেকে মারতে মারতে নিয়ে যায় রিফাতকে পরের দিন অর্থাৎ ২৭ জুন মিন্নি গণমাধ্যমের কাছে কাঁদতে কাঁদতে দাবি করেন, আমার চোখের সামনেই আমার স্বামীকে.হত্যা করেছে তারা। অনেক চেষ্টা করেও স্বামীকে বাঁচাতে পারিনি আমি। আমি তাদের বিচার চাই।ভাইরাল হওয়া দ্বিতীয়
ভিডিওটি ৯ মিনিট ৩ সেকেন্ডের। ভিডিও ফুটেজটির ৫ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে দেখা যায়, নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ ১০-১২ জন রিফাতকে মারধর করতে করতে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে বের হচ্ছে। এদের মধ্যে একজন পেছন থেকে রিফাতকে ধরে রেখেছে। বাকি দুজন দুই হাত ধরেছে। ৫ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ফুটেজে মিন্নিকে দেখা যায়, তার বাম হাতে একটি পার্স ছিল। সে পার্স হাতে স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিল। একবার ডানেও তাকিয়েছেন কলেজের দিকে দেখেছিল।৫ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডে যখন নয়নের সঙ্গীরা রিফাতের মাথায় হাত দিয়ে
আঘাত করেন তখনও স্বাভাবিক ছিলেন মিন্নি। ৫ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডে যখন সব বন্ধুরা একসঙ্গে রিফাতের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন তখন প্রথমবারের মতো দৌড়ে যান মিন্নি। প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। তখন রিফাত ফরাজী এক জায়গা থেকে দূরে গিয়ে দুইটা দাম আনে একটা নয়নের হাতে দেয় আরেকটা রিফাত ফরাজীর হাতে রাখে তারপর থেকে শুরু হয় কোপাকুপি। এর পেছন থেকে মিন্নিকে প্রতিরোধ করতে দেখা যায়।ওই ঘটনার পর নয়নরা যখন ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যায় তখন একজন মিন্নিকে তার পার্সটি মাটি থেকে তুলে দেন। নয়নদের চলে যাওয়া দেখেন মিন্নি। এরপর স্বাভাবিকভাবে সামনের দিকে হাঁটতে থাকেন মিন্নি।ওই ঘটনার ৮ মিনিট পর একটি মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশের দুই কর্মকর্তা।নতুন এ ভিডিও
ভাইরাল হওয়ার পর নতুন করে আসে মিন্নির সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি। মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন ওই সময় সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত স্বচ্ছ ও সাবলীল করতে যা যা প্রয়োজন তাই করা হবে। সে এ মামলার একজন সাক্ষী, তদন্তের স্বার্থে একবার নয় প্রয়োজনে ১০ বার তার সঙ্গে কথা বলা হবে।এসপি আরও বলেন মামলার সত্যতা না পাওয়া পর্যন্ত আমরা সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করব এবং মিন্নিকেও জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হবে।