ছাতক প্রতিনিধি:
ছাতকে সেই অালোচিত কওমী মাদরাসার শিক্ষক ধর্ষক মাওলানা আব্দুল হকের পক্ষ নিয়ে এবার ধর্ষিতা এতিম কন্যার বড় ভাইকে মসজিদে বিচার বসিয়ে ‘পাঁচের বাদ’ দিয়ে একঘরে করে রেখেছে গ্রামের মাতব্বররা। শুক্রবার জুমঅা নামাযের পর গ্রামের মসজিদ প্রাঙ্গনে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ধর্ষক আব্দুল হকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে না নেওয়ায় পঞ্চায়েত এই সিন্ধান্ত নিয়েছে বলে অসহায় পরিবারটি জানিয়েছে। সামাজিকভাবে বয়কট করার আগে ঈদুল আজহার দিনেও হতদরিদ্র এই পরিবারটিকে কোরবানির কোন
প্রকার মাংসও দেয়নি গ্রাম্য মাতব্বররা।জানা যায়, ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের নয়া লম্বাহাটি গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের এক এতিম কিশোরীকে ধর্মীয়ভাবে মোহাচ্ছন্ন করে স্ত্রীর সহায়তায় ধর্ষন করে আসছিলো স্থানীয় হাসনাবাদ কওমী মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুল হক (৫৬)। বছর খানেক আগে স্থানীয় এক নিঃসন্তান প্রবাসী পুরুষের সাথে ওই এতিম কন্যাকে বিয়ে পরবর্তী শারিরিক সম্পর্ক রাখার শর্তে মধ্যস্ততা করে বিয়ে দেয় মাওলানা আব্দুল হক। বিয়ের পর ওই কিশোরী স্বামীর বাড়ি থেকে পিত্রালয়ে আসলে মাওলানা আব্দুল
হক আবারও কিশোরীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়াতে প্রস্তাব দেয়। এতে বেঁকে বসে কিশোরি। এক পর্যায়ে তাকে হুমকি ধামকি দিয়ে আবারও জোরপূর্বক ধর্ষণ করে অাব্দুল হক। কিশোরির শশুর বাড়ির মানুষজনও তাদের বধুর উপর এই যৌন নির্যাতনের বিষয়টি জানতে পেরে হতভম্ব হন। কিশোরীর স্বামী ঘটনা জানতে পেরে কওমী অালেম ওই ভন্ডের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আদেশ দেন নির্যাতিত স্ত্রীকে। এ ঘটনায় মামলা করতে চাইলে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে প্রভাবশালী মাওলানা আব্দুল হকের সমর্থক গ্রামের মাতব্বররা
দুই লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি তড়িগড়ি করে ধামা-চাঁপা দেয়ার চেষ্টা চালায়। আব্দুল হক ও তার সমর্থক মাতব্বররা এসময় গ্রামে ফতোয়া জারি করে এ বিষয়টি গোপন রাখার জন্য। এই দুষ্কর্মটি প্রকাশকারীকে পাপের ভার বহন করতে হবে এমন ফতোয়াও দেয় তারা। অবশেষে এ কওমী অালেম নামের জালেমের কূ-কর্মের বিস্তারিত প্রকাশ করে জাতীয় একটি দৈনিকে। তখন বিষয়টি অারো চারদিকে জানাজানি হলে ধামা-চাপা চেষ্টা ব্যর্থ হয় স্বার্থান্বেষী মহল।সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে যান সুনামগঞ্জ মহিলা পরিষদের নেতৃবৃন্দ। তদন্তে তারা
ঘটনার সত্যতা খুঁজে পান এবং নির্যাতিত তরুণীকে আইনী সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন। এদিকে মহিলা পরিষদের নেতবৃন্দরা ঘনাস্থল থেকে ফিরে আসার পর আব্দুল হকের সমর্থকরা কিশোরীর পরিবার ও তাকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠে। অবশেষে ৩০ অক্টোবর ধর্ষক মাওলানা আব্দুল হক ও তার স্ত্রী সাকেরা বেগম (৪৬) এর বিরুদ্ধে ছাতক থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন নির্যাতিত কিশোরি। মামলা দায়েরের পর গ্রাম্য মাতব্বররা তার পরিবারকে পাঁচেরবাদ করে একঘরে করার হুমকি দিয়ে আসছিল। গেল
৪ মার্চ আদালতে জামিন নিতে আসলে আদালত ধর্ষক মাওলানা আব্দুল হককে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। আব্দুল হক জেল হাজতে যাওয়ার পরও তার স্বজন ও মাতব্বররা নির্যাতিত কিশোরীর বড় ভাই আসাদ মিয়াকে মামলা তুলে নিতে বোনকে চাপ দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়ে আসছিল। কিন্তু অসহায় অাসাদ এ ঘটনায় তার কোন হাত নেই বলার পরও তাকে নানাভাবে সামাজিকভাবে লাঞ্চিত করে আসছিল আব্দুল হক সমর্থিতরা। সর্বশেষ গেল ১২ আগস্ট অনুষ্ঠিত ঈদুল আজহার দিনে কোরবানির মাংসও দেয়া হয়নি তার পরিবারকে।
গেল ১৬ আগস্ট জুমার নামাজের পরে এ নিয়ে গ্রামের মসজিদে বৈঠক করে গ্রাম্য মাতব্বররা তাকে আনুষ্ঠানিক বয়কটের ঘোষণা দেয়া হয়। এমনকি সরকারি সড়কে চলাফেরা করতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।সুনামগঞ্জ মহিলা পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রাশিদা সুলতানা বলেন, শুক্রবারই নির্যাতিত কিশোরী ও তার ভাই তাদেরকে বিষয়টি জানিয়েছেন। এতে তারা বাদী ও তার পরিবারকে আইনের মাধ্যমে সহায়তার কথা জানিয়েছি। ইউপি সদস্য আরশ আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আসাদ মিয়ার সঙ্গে
পঞ্চায়েতের একটি বিষয় ছিল। অাসাদ সেটি না মানায় তাকে সমাজের কোন কাজে মিশতে বারণ করা হয়েছে। তবে মসজিদের ভিতরে থাকায় তিনি আর কি কি সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটি শুনতে পারেননি বলে জানান। শালিসের অন্যতম সিদ্ধান্ত দাতা আমিনুল হক বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানিনা। কিছু জানার থাকলে এলাকায় গিয়ে জানতে বলেন। মাতব্বর আব্দুল হান্নানকে ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।তবে এ বিষয়ে ছাতক উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তাপস শীল বলেন, বিষয়টি কিছুক্ষণ আগে তিনি একজনের মুখ থেকে শুনেছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে তলব করে বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।