
মাহমুদুল হাসান:ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদী চরাঞ্চলে সম্প্রতি বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় চারদিকে জেগে উঠেছে বালু চর। এ চরাঞ্চলের বালু চরে বর্তমান সময়ে গুপ্তধন (বাদাম) চাষে বীজ বপনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কৃষকরা। উপজেলার গাবসারা, বলরামপুর, কুঠিবয়ড়া, বাসুদেবকোল, ভদ্রশিমুল, শুশুয়া, গোবিন্দপুর, নলছিয়া, চিতুলিয়াপাড়া,রেহাইগাবসারা, রুলীপাড়া, বেলটিয়াপাড়া, জুঙ্গীপুর, সরইপাড়া, রামপুর, কালিপুর ও ডিগ্রিচরসহ প্রায় অর্ধশত গ্রামের এসব এলাকায় বাদাম চাষ হচ্ছে।কালিপুর গ্রামের বাদাম চাষি মো. আলম মিয়া বলেন, বিগত বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পুরোদমে বীজ বপন ও বাদাম ক্ষেতের পরিচর্যা শুরু করেছি। অল্প খরচ, কম সময় ও পরিশ্রমে অধিক লাভবান হওয়া যায়। বাদাম চাষে বিঘা প্রতি খরচ হয় প্রায় ৩ হাজার ৫’শ থেকে ৪ হাজার
টাকা এবং বিঘা প্রতি ফলন পাওয়া যায় প্রায় ৭ থেকে ৮ মণ। হাট বাজারে বাদামের ভালো চাহিদা থাকায় খরচ বাবদ বিঘা প্রতি লাভ হয় প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। সরেজমিনে শনিবার ও রবিবার(১ ও ২ নভেম্বর)চরাঞ্চলের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাদাম চাষের জন্য কৃষকরা জমি প্রস্তুত করছে, কেউ বাদামের বীজ বপন করছে, কেউ লাঙল টানছে আবার অনেক চাষিরা বীজ রোপণ করা জমি পরিচর্যা করছে। অন্যদিক, চরাঞ্চলের গ্রামীণ নারীরাও বাদাম চাষে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। কাজ করছে স্কুল পড়–য়া ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাও। ভোরের সূর্য না উঠতেই সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি চাষিরা চরাঞ্চলের বালুর মাঠে গুপ্তধন বপনে ব্যস্ত সময়ই পাড় করছে।বাদাম চাষি মোসা:মারিয়ম বেগম বলেন, গত বছর আমি ৩ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ
করে ভালো ফলন এবং বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর প্রায় ৭ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি। ভূঞাপুর ইবরাহীম খাঁ সরকারি কলেজের শিক্ষক ও কৃষিবিদ প্রবাস কুমার চন্দ্র বাদাম চাষ বিষয়ে বলেন:যমুনা চরাঞ্চলে বাদাম ও অন্যান্য ফসল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তাই কৃষকরা তাদের বেলে মাটির জমিতে বাদাম চাষ করছেন। আশ্বিন-কার্তিক মাস বাদাম চাষের সঠিক সময়। আড়াই থেকে ৩ মাসের মধ্যে তা আবার কৃষকের ঘরে উঠে। তিনি বলেন, খরচ বিহীন এই ফসল কৃষককে দিচ্ছে প্রচুর অর্থ। সুস্বাদু, মুখোরচক ও ভিটামিনসমৃদ্ধ এই ফসল একদিকে যেমন খাদ্যে যোগান দিয়ে থাকে তেমনি তেলের চাহিদা পূরণ করে। বাদাম ক্ষেত থেকে কচি পাতা কেটে কৃষকরা তাদের
গরু-ছাগলের খাওয়ান। এতে গরু-ছাগল তাড়াতাড়ি স্বাস্থ্যবান হচ্ছে। তাছাড়া অন্য ফসলের মতো বাদামের জমিতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এস.এম রাশেদুল হাসান বলেন: ইতিমধ্যে যমুনা চরাঞ্চলে বাদাম চাষ শুরু হয়ে গেছে। অনেক চরগুলোতে বাদামের চারাও গুজিয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাদাম চাষি কৃষকদের সহযোগিতা করার জন্য হতদরিদ্র কৃষক পরিবারের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সরকারের বরাদ্দকৃত প্রণোদনা পেলে দ্রুত সময়ে কৃষকদের মাঝে তা বিতরণ করা হবে। অন্যদিকে এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এ বছর বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।