(সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা.
সূফী সাধনায় মারিফত হচ্ছে অন্যতম। তবে ইলমে তাসাউফের মর্মমূল হচ্ছে শরীয়ত। মধ্যযুগের মরমী কবিরা ছিলেন ভাবুক সচেতন। তাদের রচনায় রয়েছে ভাব, বিরহ ও আল্লাহর সাথে মিলনের আশা. মরমী গানের এক সমৃদ্ধ জনপদ সুনামগঞ্জ শিল্পনগরী ছাতক । এ উপজেলায় যুগ যুগ ধরে জন্ম নিয়েছেন অসংখ্য অগণিত অলি আউলিয়া.আউল, বাউল, মরমী ও সুফি সাধক । তাঁরা স্বীয় সাধনা বলে সৃষ্টি করে গেছেন লোক-সঙ্গীতের অফুরান্ত রতœ ভান্ডার ।তাদের মুল্যবান অমরতœ বানী কালে পরির্বতে হারিয়ে গেছে। অনেক খ্যাতিমান লেখকের গান চুরি করে আরেকজনের নামে প্রচার বা প্রকাশ করার হিড়িক পড়েছে। তেমনি একজন বহু প্রতিভার অধিকারি সুফি ও মুন্সীয়ানা ভাবের খনি,সৃষ্টিতত্ব,প্রেমতত্ব,কামতত্ব নুরতত্ব,দেহতত্বসহ অসংখ্যা গান
রচনা করেন। অসংখ্য হাওর-বাওর, নদীনালা, খালবিলে পরিবেষ্টিত জনপদ সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্ববিখ্যাত লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কারখানা অবস্থিত শিল্পনগরী নগরী উপজেলা ছাতক। এ জনপদে ঐতিহ্য সংস্কৃতি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের সরব উপাদান। ওলি আউলিয়া পীর ফকির.আউল-বাউল সুফি সাধকদের চারণভূমি ছাতকে গোবিন্দগঞ্জ এলাকায়। তাঁর ঐতিহ্যের ধারা থেকে আজও বিচ্যুত হয়নি। লোকসাহিত্যে পুথি. মুর্শেদী, মারেফতি ও জারি : বাংলা ভাষায় ধর্মীয় গানের ধারা সমৃদ্ধ করে গেছেন । তারা হচ্ছেন বাংলার খ্যতিমান ফকির
আফজল শাহ, দুরবীণ শাহ, আজর আলী, কালাশাহ, ছাবাল শাহ, মানউল্ল্যা,শাহ আছদ আলী, আজিম শাহ,গিয়াস উদ্দিন আহমদ,আশুশাহ,হাসিম আলী,সুরুজ আলী,আব্দুল আজিজ চৌধুরী,
আবুল বশর.এস.এম শরিয়ত উল্লাহ,আশিক আলী ভান্ডারী.কলমদরআলী.হিজরত আহমদ.মতিউর রহমান.সালাউদ্দন.মাহবুর রহমান.সৈয়দা রহিমা বেগম.শাহানা জালালি.জাকিরশাহ সহ অসংখ্য মরমী কবি এ মাটির সন্তান।তাদের উত্তরসুরি হিসেবে নিরবে কাজ শুরু করেন। একদিনমজুর কবি আব্দুর করিম। উপজেলাজুড়েই সবার কাছে ”নগর করিম” হিসেবে পরিচিত লাভ করেন। তার গান গুলোর মধ্যে রয়েছে সুফি ও মুন্সিয়ানা চমৎকার নমনীয় ভাবে মানুষের হৃদয় আসন দখল করে নিয়েছে অল্পদিনের মধ্যে দেশ-বিদেশে তার নাম ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তার গান দেশ-বিদেশে গানপ্রেমিকদের মাঝে আলোচনা সমালোচনার ও ব্যাপক জনপ্রিয় গানগুলো দেশে নামদামি সুরকার গীতিকার সুর দিচ্ছে। তার গানের সুরগুলো গ্রাম গঞ্জে কন্ঠশিল্পীরা
সঙ্গীতভুবন মাতিয়ে তোলেন। এতো কষ্ট ও অভাবে অনটনের সংসার ও তাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি। দিনে চা-দোকান পরিচালনা করেন,রাতে লেখা-লেখি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটান দিনমজুর কবি আব্দুল করিম।তার গান গেয়ে দর্শক-শ্রেুাতাদের আপ্লুত করে আসছে।তার গান রচনার ধরন ভঙ্গিতে মুগ্ধ হয়ে কলেজ পড়–য়া-ছাত্র ছাত্রীরা আব্দুল করিমকে ’নগরী করিম’অভিষিক্ত করেন।নতুন করিমে সাধনা পদ্ধতি পদাবলি তার গোপন-সাধনা করে যাচ্ছেন। তার রচনার তত্ত্বসমৃদ্ধ গানগুলি কেবল নিজেদের মাঝেই আলোচনায় সীমাবদ্ধ রাখেনি।ফলে গোপন-তত্ত্ব সমৃদ্ধ এসব পদাবলির ভাবার্থ শ্রেুাতাদের কেউ বুঝে. আবার কেউ বুঝেন না।তাকে কেউ বলে পাগলা,কেউ বলে পীর.অনেক বলে কবি। তার লেখার গুনগত মান উন্নত। তার প্রতি গান যেন সমাজ
সংস্কার পথ-প্রদশক বলে মনে করেন সচেতন মহল। তার কয়েকটি গান নি দেয়া হলো।
জীবন যৌবন ভাটি দিল.তনু হলো হীন রে.
নগরী করিম.পরবাসে পরেরঘরে থাকবে কত দিন।।
ও মনরে-সখের বাড়ি রঙ্গিন নারী সব হইবে মলিন.
হাঁটিতে চরণ চলেনা মাথায় মারে ঝিঁন রে।।
ও মনরে.জমাইলায় টাকা পয়সা হইবে পরাধীন.
পরান পাখি উড়াল দিলে আসবে তোমার ঘুম রে।
ও মনরে.আাসবে যেদিন সমন জারি বাসবে সবাই ভীন,
এই করিমের নাই কোন ধন,কাল কিয়ামতের দিন রে।।
একজন ভাবের মানুষ, সুরের মানুষ, গানের মানুষ হিসেবেই পরিচিত। মুন্সিয়ানা গানের ক্ষেত্রে তাঁর অবস্থান ছাতক উপজেলার আনাচে কানাচে শক্তিমান লেখক হয়ে উঠেছে ।ভাবজগতে তার গানের খোদার প্রেম- সৃষ্টিপ্রেম,দেহপ্রেম-কামপ্রেমসহ নানা বিষয়ে সঙ্গীত ভুবনে আব্দুল করিমের আবির্ভাব নতুন ঘটে। তার গোপন সাধনা তত্ত্ববাদ ভাবার্থ পর্দাবলি ফুটেছে।
করিম একজন প্রতিবাদী কন্ঠ সৈনিক ।তারসঙ্গীত রচনা ও পরিবেশনার মাধ্যমে গণজোয়ার সৃষ্টি করেছে ছাতকে।আব্দুল করিম ১৯৭৮ সালের ৪ মার্চ সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ সৈয়দ গাও ইউনিয়নের গোবিন্দনগর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন । তাঁর পিতার নাম মনোহর আলী ওরফে ছাবাল পীর, মাতার নাম খায়বুন নেছা। আব্দুল করিমের পিতা মনোহর আলী ছিলেন একজন পীর সুফি সাধক । সেই সুবাদে শৈশবে পিতার কাছে মুশেদি শরিষত মারেফত দেহতত্ত্ব সৃষ্টিতত্ত্ব সারি জারি গানের তালিম নিয়ে মৃত্যু পূর্ব পর্যন্ত সুফিবাদ ভাবার্থ নিয়ে তার বাবা সাধণা করে গেছেন ।সেই সাধনার সুত্রে ধরেই এ ভাবজগতে এসেছে তিনি। তার প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষায় তেমন নয়। তিনি বাংলা, আরবি গোবিন্দনগর ফজলিয়া আলীয়া মাদ্রাসায় নবম শ্রেনী পযর্ন্ত
লেখা-পড়া করছেন। দশম শ্রেনী লেখা-পড়ার থাকা অবস্থায় তার বাবা মারা যান। তখন পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে সংসারে হাল ধরতে গিয়ে তার লেখা-পড়া করা সম্ভব হয়নি। ভাই বোন ৬জন রেখে তার বাবা মারা গেছেন।দিনমজুর হিসেবে কাজ করে ১শ’৭০টাকার একটি চালান নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা বাজার বাজারে গিয়ে শুরু করে কঠোর পরিশ্রমে করে মাসহ ৭জনের সংসার হাল ধরেছেন তিনি। ৪বোনকে বিবাহ দেন এবং সে উপজেলার চরমহল্লা ইউনিয়নের জলসিচানপুর গ্রামে মৃত নিজাম উদ্দিনের কন্যা সোনারা বেগম বিবাহ করেন। তার ৪কন্যা ২পুত্র সহ ৬ সন্তানের জনক আব্দুল করিম। তার ছেলে ও মেয়েদের লেখা-পড়া করাচ্ছেন। অভাবে সংসার মধ্যে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ে সামনে অলডেইজ ক্যান্টিন নামে
একটি চা দোকান পরিচালনা করে আসছেন কবি আব্দুল করিম। চা দোকানের চালিয়ে সময়ে ফাকে খোদারপ্রেম-সৃষ্টিপ্রেম দেহপ্রেমসহ অসংখ্য গান নিরবে রচনা করছেন তিনি। মুন্সিয়ানা ভাবার্থ বিষয়ে গান রচনা করেন। তার খোদার সঙ্গে এশকেপ্রেম নিয়ে গান রচনা করেন।
তুমি আল্লাহ তুমি মাওলা তুমি মালিক সাই,
নগরী করিমে বলে মাওলা ত আর নাই।
এশকেতে আলিফ হইয়া লাছুরতে সৃষ্টি করিয়া
আলা নুরে সৃজিয়া প্রেমের শেষ নাই ।
আলিমুল গাইব তুমি.আল্লাহ আকবার জয় জোধা
মমিন গনের দয়াল তুমি,দয়ার সীমা নাই।
লা ছুরতে আহাদ নামটা ,একিন গাছে নুরের জোধা
ফল ধরেছে পাঁেচর গোঠা,সেই ফলেতে মালিক সাই।
আলিফ আর মীমের মাঝে মমিনরা মাওলাজি খোজে
পাকজাত আসলেই নিজে.আমি মাদ্দাদ চাই।
তার এ গানের মাঝে পাকজাত নুরতত্ব আলিফ মীমের মাঝে সে তার খোদাকে খোজে এশেকে প্রেম সৃষ্টি করেছেন।
হয়রত আল্লামা মোঃ আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র,)। তার প্রখ্যাত আলিম-উলামা.পীর.মাশায়েখ, মুল্যায়নধর্মী সে সিলেটের ফুলতলী গ্রাম নিয়ে চমৎকার একটি গজল
রচনা করেছেন। তার গজলটি উল্লেখ্য করি।
তুমি সুগন্ধি ফুল আল্লার মকবুল জকিগঞ্জ থানায়,
জন্ম নিলায় ফুলতলীতে সুগন্ধ ছড়ায়।
অলিউল্ল্যার নামে তুমি মানব বাগিছায়,
কোরআনেরি পথ দিশারি ফুলতলীর ওগায়।
ফুলের গন্ধে কত মানব দলে দলেয়ায়
সেই ঘ্রানের খোশবু বাংলার মাটিতে ছড়ায় ।
ক্বারি সাহেবরা গায় গুনগান আরাবি ভাষায়,
শুদ্ধ কোরআন হয় ভিলায়াত আপনার উছিলায়।
আছেন শুয়া ফুলতলী এই ফুলের বিছানায়,
নগরী করিম ফুল বাগিছার মালি হতে চায়।
তার রচনার ফুলতলীর ফুলের বাগানে মালি হতে আকুল আবেদন করে গেছেন কবি। কিন্তু সেই বাগানের বাগিছার সুগন্ধ স্থান পেয়েছেন কবি আব্দুল করিম। সাদা মনে একজন মানুষ নগরী করিম। সে দেহপ্রেম নিয়ে আধ্যাতিœক ভাবজগতে প্রবেশ করে মানবদেহ মধ্যে কয়টি ঘর তার রচিত একটি গানের চিত্র বাস্তবে ফুটে উঠেছে।মানুষের দেহের মাঝে ষোলজন প্রহরী ও ছয়টা ঘর রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ্য করেন তার গানের ভিতরে।
মাটির তৈরি ঘর আমার,পরান পাখির বাসা রে
অধরারে ধরতে চাইলে মহা পাগল সাজরে।
আমার ঘরটি চৌদ্দ তালা,নয় দরজা আছে খোলা,
হাড্ডি জুড়া চামড়ার বেড়া রগ টাঙ্গাইছে ঘর রে।
সাদা পানি মাটির জন্ম,লাল পানিতে ভাসে রে
নিরাকারে রুপমিশাইয়া ঘরের মুখটি নিমার্ন রে।
অট্রালিকা রঙ্গের মহল,সেই পাখিটার বাসারে
প্রহরি ষোলজনা ,ঘরে ছয়টা ছুরা রে।
নগরী করিম মরে গেলে,দেহ রইবে ধরায় রে
কলবপুরে আসন দিয়া ঘরের মালিক খুজরে।
মুর্শেদী, মারেফতি ও জারি : বাংলা ভাষায় ধর্মীয় গানের ধারায় এ জনপদ সমৃদ্ধ করে গেছেন এ অ লে ইসলাম প্রচারে অলি আউলিয়ার সুফিসাধক ভুমিকা পালন করছে। জীবন, জগত ও প্রকৃতি বিষয়ক বিবিধ মৌলিক প্রশ্নের উত্তর প্রদানে ইসলামের বিশিষ্টতা প্রাচ্যের ধর্মাবলম্বীদের ইসলামের প্রতি আগ্রহী করে তুলেছে। এর ধারাবাহিকতায় ইসলামকে কেন্দ্র করে শিল্প, সাহিত্য ও দর্শনসহ জীবনমুখী নানারকম কর্ম দানা বেঁধেছে। এতে ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, সামাজিক ও রাজনৈতিক জটিলতার বিশেষ প্রভাবে আরব ও পারসিয়ান ধারাবাহিত হিন্দুন্তানি শিল্পের চাইতে স্বতন্ত্র ধারার সৃষ্টি হয়েছে। উপনিবেশ আমলের অশিক্ষা ও ‘ধারাবাহিক’ অপপ্রচারে বাঙালি মুসলমানের মনে অতীত নিয়ে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে তার জীবন ও জগত হারিয়েছে অতীতের ঐতিহ্য ও
সিলসিলা। এর অংশ হিসেবে গান ও সংগীতের অঙ্গনেও এ অ লের ঐতিহাসিক সিলসিলার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মনে রাখা ভালো যে, বর্তমানে গান, কবিতা ও পদ্যের মধ্যে যে পার্থক্য করা হয়, সেটা খুব বেশি দিনের নয়। এখন কবিতা ‘পড়তে’ হয়, গাওয়া যায় না। মধ্যযুগে কবিতাও গাওয়া যেত। বরং প্রধানত গাওয়ার উপযোগী করেই কবিতা লেখা হতো। ফলে পদ্য, কবিতা ও গানের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য ছিল না। জটিল দার্শনিকতার চাইতে, তৎকালীন ইসলামি সামাজিক মূল্যবোধ, রাজনৈতিক অধিকার ও বীরত্ম-কেন্দ্রিক তৎপরতা প্রবল ছিল, ফলে, কেন্দ্রে ছিল মানুষ। চিন্তাত্যের সাথে তর্ক ও বাহাছে তাই স্বতন্ত্র শিল্পকর্মের ধারা জারি হয়। সে ধারা থেকে আরও কিছু উপধারা। উপধারাগুলোর মধ্যে বাংলা সংগীতের ধারার মধ্যে
মারেফতি, মুর্শিদি, জারি ও গান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একে সাধারণভাবে মারেফতি বা ফকিরালি গান হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়, যদিও এর ভেতরে অনেক শাখা, প্রশাখা ও জটিলতা আছে। তার গানে মাঝে রয়েছে মারেফতি বা ফকিরালি গানের পোশাকি নাম ‘মরমী সাহিত্য’। সাধারণ তত্ত্ব অতীত গভীর তাত্তি¦ক আলোচনাকে মরমিয়া বলে। যে কবি বা কবিতা মরমিয়া দর্শন নিয়ে আলোচনা করেন, তাকে বলা হয় মরমী। এই সুরময় ভুবনের দিগন্ত বিশাল হলেও দিনক্ষণ ঠিক করে এর গোড়াপত্তন হয়নি। কারো মতে মুসলিম সূফী-সাধকদের ইসলামের শাশ্বত পয়গাম ও কালজয়ী বাণী নিয়ে এ দেশে আগমনকাল থেকেই ‘ছামা সঙ্গীতের’ প্রচলন হয়েছে। সেখান থেকেই এর সূচনা হয়। উল্লেখ্য যে, মরমী সঙ্গীত ও বাউল গানকে অধুনা যুগে যদিও এক করে দেখা হয়,
মরমী সঙ্গীত হচ্ছে সূফীবাদের বহিঃপ্রকাশ। যা মূলত তাওহিদ (স্রষ্টার একত্ববাদ) ও রিসালতের উপর ভিত্তি করে রচিত এবং বাউল মতবাদ হচ্ছে স্রষ্টাই জীব জীবই স্রষ্টা ইত্যাদি বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত ।মরমী সংগীতকে বলা হয় মর্মবাদীদের হৃদয়ের আলাপন। নিছক ভোগ বিলাস, আহার-বিহারের দুনিয়াদারীর ঊর্ধ্বে উঠে মরমী কবিরা তাদের প্রাণের কথাকে গানে গেয়ে থাকে। তাই বলা হয়, অতিন্দ্রীয় অনুভূতির মর্মমূল থেকে উৎসারিত বাণী ও সুরই মরমী সংগীত। সঙ্গীত ব্যক্তি, সমাজ ও জাতির আত্মার পরিচয়ের নিশান বহন করে। সঙ্গীত মানুষের আত্মার গভীরের অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশের লোকসঙ্গীত, মুর্শিদী-মারফতি, জারি-সারি, পাঁচালী, পদাবলী, গজল, ভক্তিগীতি, ভজন-কীর্তন, কাওয়ালী প্রভৃতি সঙ্গীতের এক বিশাল ভান্ডারে সমৃদ্ধ
আমাদের সুরময় ভুবন। উল্লেখ্য, সংগীত হৃদয়ের ছন্দে ছন্দিত না হলে তা অন্য হৃদয়ে আসর বা প্রভাব রাখতে পারে না। আল্লামা ইকবাল বলেছেন–দীল ছে যো বাত নিকাল্তি হ্যায় আছর রাখতি হ্যায়।সাধক-ফকিরদের চেষ্টা-প্রচেষ্টার ফলে মানুষকে শিক্ষার মাধ্যমে গড়ে তুলতে রচিত হয় পুঁথি পুস্তক, রাগ ও মরমী সংগীত। যার প্রধান বিষয় বস্তুনামায, রোজা, হজ, যাকাত, ইসলামি ইতিহাস, ঐতিহ্য, কাহিনী ইত্যাদি। যার থেকে ধীরে ধীরে পীর আউলিয়ার নির্জন সাধনাগারে আধ্যাত্মিক ওয়াজ নসিহতসহ হৃদয় হতে উচ্চারণ হয় ছন্দের। পরে এটিই মুর্শিদি বা ফকিরালি গান বা মরমী সংগীত নামে খ্যাত হয়। এর সাথে সংযুক্ত হয় এই অ লের নদীপ্রাধান্য, গ্রামীণ প্রকৃতির ঐশ্বর্য ও আশেকি-বিরহের নানা অনুষঙ্গ। কালে সনাতন ও বাউল ধারার প্রভাবও এর মধ্যে পড়ে। এ নিয়ে শরিয়তি, মারেফতি ও সর্বধর্মবাদের বাহাছও বহুল চর্চিত হয়েছিল।