চট্টলবীর প্রয়াত আলহাজ্ব এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গত বছর আমার ছোট একটি লেখা চট্টগ্রামের স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশ করায় পত্রিকার শ্রদ্ধেয় সম্পাদক মহোদয় সহ পত্রিকা প্রকাশের সাথে যারা সহযোগিতা করে আমাকে কৃতার্থ করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি এবং উক্ত লেখা পড়ে যারা আমাকে সাহস যুগিয়েছেন তাদের প্রতি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা রইল। একইভাবে দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতেও তাঁকে নিয়ে কিছু লেখার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের অংহকার বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আলহাজ্ব এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা সূর্য সেনের জন্মস্থান রাউজান। ঠিক একই পূণ্যভূমি রাউজানে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম
আলহাজ্ব এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন কেটেছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তিন বারের সফল মেয়র হিসেবে কৃতিত্বের দাবিদার। কর্পোরেশনের মেয়র হওয়ার পরে তিনি অনুভব করলেন চট্টগ্রামে শিক্ষা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বের কারণে চট্টগ্রামে স্কুল, কলেজ ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে এবং ভর্তুকি প্রদান করে গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাক্ষেত্রে আমুল পরিবর্তন সাধন করেছেন। একইভাবে নগরীর অনগ্রসর গোষ্ঠীকে সুচিকিৎসা প্রদানে লক্ষ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে আরবান ক্লিনিক স্থাপন করে নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসা সেবা ও বিনামূল্যে ওষধ সরবরাহ করে সাধারণ মানুষের জন্য চিকিৎসা সেবার অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। আজকের চট্টগ্রামে যে উন্নয়নের
ছোঁয়া লেগেছে এই উন্নয়নের স্বপ্নের জনক প্রয়াত আলহাজ্ব এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। কর্ণফুলী নদী ভরাট ও অবৈধ দখলদারদের থেকে রক্ষার জন্য, কর্ণফুলীর সৌন্দর্য রক্ষার তাগিদে তিনি কর্ণফুলী নদীর নীচে টানেল নির্মাণ করার জন্য সরকারের কাছে পর্যায়ক্রমে দাবি করে গেছেন। সেই দাবির প্রেক্ষিতে নিজ দলের সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর স্বপ্নের টানেল নির্মাণের কাজে হাত দিয়েছেন একইভাবে এই টানেলের কাজ দ্রুততার সহিত এগিয়ে যাচ্ছে। কর্ণফুলী টানেলের উদ্বোধন করতে এসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বারবার এই প্রয়াতের নাম উচ্চারণ করে বারবার আবেগতাড়িত হয়েছেন এবং বলেছেন আজ যদি মহিউদ্দিন চৌধুরী বেঁচে থাকত সবচেয়ে তিনি বেশী খুশি হতেন। একই অনুষ্ঠানে তাঁর যোগ্যতম ছেলে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয়
আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিষ্টার জনাব মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও বাবার কথা স্মরণ করে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ এই চট্টগ্রামে তাঁর অনেক স্বপ্ন রচিত ছিল। অগণিত স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন এবং সাধ্যমত বাস্তবায়নও করে গেছেন। এই মানবতাবোধ সম্পন্ন ব্যক্তির সান্নিধ্য পাওয়ায় নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে করি। অনেক ক্ষমতাধর ও প্রভাব প্রতিপত্তি থাকা সত্ত্বেও প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চশমা হিলের টিন শেডের বাসায় দিন কাটিয়েছেন। নিরহংকারী ও অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্বের কারণে আপাময় মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। আজীবন অন্যায়, অত্যাচারের বিরুদ্ধেও তিনি সাধারণ মানুষের
পক্ষে ছিলেন। নশ্বর পৃথিবীতে মৃত্যুর চেয়ে অনিবার্য সত্য আর কিছু নেই। জন্ম নিলে প্রতিটা মানুষকে একদিন মৃত্যুর স্বাদ ভোগ করতেই হবে। এটাই বিধির বিধান। তবে ব্যক্তি বিশেষই এই মৃত্যুকে জয় করে মরেও বেঁচে থাকেন অনন্তকাল। এই বেঁচে থাকার একমাত্র উপলক্ষ হলো ব্যক্তির কর্ম। তিনি চট্টগ্রামবাসীর হৃদয়ে অনন্ত কাল বেঁচে থাকবেন। চট্টগ্রামের মানুষ যে কোন সমস্যায় পড়লে কথার ছলে ও উপমায় এখনো তাঁকে স্মরণ করেন এবং তাঁর পরিবারের প্রতি আস্থা রাখেন। তাঁর প্রাণপ্রিয় সহধর্মিনী চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের মহিলা সভাপতি আমার শ্রদ্ধেয়া চাচীমা হাসিনা মহিউদ্দিন নারী জাগরণে অগ্রদূত হিসেবে নারীদের অধিকার আদায়ে কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বিভিন্ন স্কুল,
কলেজ স্থাপন করে এলাকার মানুষের সুখে, দুঃখে সেবার হাত বাড়িয়ে দেন, ছোট ছেলে বোরহানুল ইসলাম চৌধুরী সালেহীন প্রতিনিয়ত এলাকার মানুষের পাশে থেকে মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। একমাত্র জামাতা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সেলিম চৌধুরীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী। তাঁরাও সাধ্যমত প্রয়াতের অপূর্ণ ইচ্ছা পূরণে সহযোদ্ধা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আমাদের হৃদয়ে, অনুভবে, অনুপ্রেরণায় বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল। আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি এই মহান মানুষটিকে। পরম করুণাময় তাঁকে জান্নাতবাসী করুন।