ইসলামের নামে বিকৃত মতাদর্শ প্রচার রোধ ও যুব সমাজের অবক্ষয়গামিতা প্রতিরোধে জাতীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান ইরাক, ফিলিস্তিন, সিরিয়া ও কাশ্মিরসহ দেশে দেশে চলমান সংঘাত-সহিংসতা প্রতিরোধে মুসলিম দেশগুলোকে পদক্ষেপ নেয়ার, মিয়নামারের রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আদালতে ওআইসির পক্ষে দায়েরকৃত মামলাকে সমর্থন জানিয়ে গাম্বিয়ার পাশে দাঁড়াতে সকল দেশকে এগিয়ে আসার, ইসলাম তথা সুন্নিয়ত পরিপন্থী ঈমান আক্বিদা বিরোধী যাবতীয় অপতৎপরতা রোধে বৃহত্তর সুন্নি ঐক্যের মজবুত বলয় গড়ে তোলা এবং নগ্ন আকাশ সংস্কৃতি ও মাদকপণ্যের অস্বাভাবিক বিস্তারের ফলে যুব-তরুণদের অবক্ষয়গামিতা রোধে জাতীয় সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার ডাক দিয়ে চট্টগ্রাম লালদীঘি ময়দানে তিনদিনব্যাপী
আন্তর্জাতিক সুন্নি সম্মেলন শেষ হয়েছে। আহলে সুন্নাত সম্মেলন সংস্থা ওএসি বাংলাদেশ এর আয়োজনে সুন্নি সম্মেলনের গতকাল ১৮ জানুয়ারি শনিবার শেষ দিনে সভাপতিত্ব করেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস শেরে মিল্লাত আল্লামা মুফতি ওবাইদুল হক নঈমী। গতকাল সুন্নি সম্মেলনের শেষ দিনে হাজারো সুন্নি ওলামা ছাত্র জনতার ঢল নামে। বিভিন্ন পরিবহনে চট্টগ্রামসহ দূর দূরান্ত থেকে আসা মানুষের অংশগ্রহণে লালদীঘি মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশ এলাকাও জনারণ্য হয়ে ওঠে। সমবেত হাজার হাজার জনতা স্লোগানে স্লোগানে দেশ ও সুন্নিয়ত পরিপন্থি অপশক্তিকে প্রতিহত করার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করেন।
ইসলামের নামে গর্জে ওঠা জঙ্গিবাদসহ নানা বিকৃত মতবাদ পোষণকারীদের আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করার শপথ নেন অগণিত সুন্নি জনতা। সম্মেলনে বিদেশি আলোচক ছিলেন আন্তর্জাতিক বক্তা আল্লামা মুহাম্মদ হোসাইন সিদ্দিকী আবুল হক্কানি (ভারত), আল্লামা হাফেজ এহসান ইকবাল কাদেরী (শ্রীলংকা)। আল্লামা আবুল হক্কানি বলেন, তাওহিদ রেসালত ও বেলায়তই হচ্ছে ইসলামের মূল নির্যাস। প্রিয় নবীর (দ.) প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন, আউলিয়ায়ে কেরামের পদাংক অনুসরণ এবং মজবুত ঈমান আক্বিদাই হচ্ছে একজন মুসলিমের ঈমানদারিতার পূর্বশর্ত। আল্লাহ পাককে সবাই মানেন ও স্বীকার করেন। কিন্তু শানে রেসালত ও বেলায়তই হচ্ছে ঈমানের ভূষণ। তা না মানলে ঈমানদার হওয়া যাবে না।
আল্লামা এহসান ইকবাল কাদেরী বলেন, মুসলিম বিশ্বে কোথাও আজ শান্তি নেই। অনৈক্য ও ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের ফলে মুসলিম বিশ্বে আজ অশান্তি অস্থিরতা জিইয়ে রয়েছে। কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা মেনে সামগ্রিক জীবন পরিচালনা করলে মুসলমানরা হারানো গৌরব ও মর্যাদা ফিরে পেতে পারে। আলস্য, কলহ ও জীর্ণতা ছেড়ে মুসলমানদেরকে ঈমান-আক্বিদার শক্তিতে জেগে উঠতে হবে। বিশেষ অতিথি মাওলানা এম.এ মতিন বলেন, সুন্নি মুসলমানরা আজ সাংগঠনিকভাবে পূর্বের চেয়ে আরো বেশি সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জঙ্গিবাদী ও নবী-ওলী বিদ্বেষীদের পরাভূত করা সম্ভব হবে। নারায়ে রেসালাতের স্লোগানকে ফালতু স্লোগান হিসেবে আখ্যা দিয়েছে এক মূর্খ বক্তা।
সুন্নি মুসলমানরা জেগে না উঠলে বাতিলদের এধরনের ঔদ্ধত্য বাধাহীনভাবে চলতেই থাকবে। তিনি সুন্নি উলামা ছাত্র জনতাকে এদেশে সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়ে সুন্নিয়তের প্রভাব বলয় গড়ে তোলার তাগিদ দেন। তিনি যুব সমাজের চরিত্র বিধ্বংসী ইয়াবাসহ মাদকপণ্যের প্রসারতা রোধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত বাংলাদেশ এর মুখপাত্র অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার বলেন, সুন্নিয়তই মানবমুক্তির অবিকল্প আদর্শিক প্লাটফরম। সুন্নিপন্থিদের অনৈক্য ও সংগঠনবিমুখতার সুযোগ নিচ্ছে বাতিল গোষ্ঠীগুলো। আজ নগ্ন আকাশ সংস্কৃতি ও মাদক যুব তরুণদের বিপথগামী করছে। তা দেখার যেন কেউ নেই।
ইসলামের নামে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা যাবতীয় বিকৃত মতবাদ, জঙ্গিবাদ, মাদক ও সাইবার ক্রাইম এসবকে থামাতে জাতীয় পদক্ষেপ নেয়ার সময় এসে গেছে। সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা মুফতি ওবাইদুল হক নঈমী বলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতই একমাত্র নাজাতপ্রাপ্ত দল। তিয়াত্তর দলের মধ্যে বাহাত্তর দলই পথভ্রষ্ট ও জাহান্নামি। আহলে সুন্নাতের পথে মতে যারা প্রতিষ্ঠিত থাকবে তাদের জন্য রয়েছে জাগতিক কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির সুসংবাদ। আল্লামা নঈমী সুন্নি উলামা ও ছাত্র জনতাকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আতের প্লাটফরমে আসার আহ্বান জানান।
সম্মেলনে জাতীয়, আন্তর্জাতিক, মুসলিম বিশ্বসহ বর্তমান সময়ে করণীয় নিয়ে ২০ দফা লালদীঘি ঘোষণার প্রস্তাব পাঠ করা হয়। সংগঠক মুহাম্মদ আবুল হোসাইনের স ালনায় সুন্নি সম্মেলনে আলোচক ও অতিথি ছিলেন পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চেয়ারম্যান আল্লামা এম.এ মান্নান, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক মাওলানা এম.এ মতিন, জামেয়া
আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার অধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান, ওএসি এর সভাপতি আল্লামা হাফেজ সোলাইমান আনসারী, ওএসি সাধারণ সম্পাদক আল্লামা কাযী, মুঈন উদ্দিন আশরাফী, আল্লামা হাফেজ আশরাফুজ্জামান আলকাদেরী, অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ, গাউসিয়া কমিটির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব পেয়ার মুহাম্মদ, আল্লামা শাহ নূর মোহাম্মদ আলকাদেরী, আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আতের মুখপাত্র এডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার, পীরে তরিক্বত আল্লামা গোলামুর রহমান আশরফ শাহ, অধ্যক্ষ আল্লামা আবুল ফরাহ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, পীরজাদা আল্লামা মাজহারুল ইসলাম নিজামী, আল্লামা রফিকুল ইসলাম পাটোয়ারী, উপাধ্যক্ষ আল্লামা জুলফিকার আলী চৌধুরী, অধ্যক্ষ আল্লামা তৈয়্যব আলী, পীরে তরিক্বত
আল্লামা কাজী শাহেদুর রহমান হাশেমী, অধ্যক্ষ আল্লামা আহমদ হোসাইন আলকাদেরী, আল্লামা গাজী শফিউল আলম নেজামী, উপাধ্যক্ষ আল্লামা আব্দুল ওয়াদুদ, গাউসিয়া কমিটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাহজাদ ইবনে দিদার, অধ্যক্ষ আল্লামা খলিলুর রহমান নেজামী, আল্লামা আনোয়ার হোসাইন, আল্লামা হাফেজ রুহুল আমিন, অধ্যক্ষ আল্লামা মুখতার আহমদ, অধ্যক্ষ আল্লামা বদিউল আলম রিজভী, আল্লামা হাফেজ আনিসুজ্জমান, অধ্যক্ষ আল্লামা আবুল কালাম আমিরি, উপাধ্যক্ষ আল্লামা তৈয়্যব খান, অধ্যক্ষ আবু তালেব বেলাল, অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ ইসমাইল নোমানী, আল্লামা মুহাম্মদ হাসান আযহারী, অধ্যক্ষ আল্লামা জামেউল আখতার আশরাফী, মাওলানা নুরুল আবছার আলকাদেরী, মাওলানা বশির উল্লাহ সিদ্দিকী,
মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, অধ্যক্ষ আল্লামা সৈয়দ খুরশিদ আলম, হাবিবুর রহমান সরদার, উপাধ্যক্ষ আল্লামা সৈয়দ নুরুল আমিন, আল্লামা আবুল আসাদ মুহাম্মদ জুবায়ের রিজভী, মাওলানা আবদুন নবী আলকাদেরী, শাহজাদা সৈয়দ তাহসিন আহমদ, মাওলানা হাফেজ আহমদ আলকাদেরী, পীরে তরিক্বত মাওলানা শামুনুর রশিদ আমিরি, মুহাম্মদ ছাদেক হোসেন পাপ্পু, অধ্যক্ষ আল্লামা আজিজুল হক কুতুবী, অধ্যাপক আবুল মনছুর দৌলতী, আল্লামা সৈয়দ ইউনুছ রিজভী, অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম জেহাদী, উপাধ্যক্ষ আল্লামা জসিম উদ্দিন আলকাদেরী, মাওলানা মীর হাসানুল করিম মুনিরী, মাওলানা মাহবুবু রহমান, আবু নাছের মুহাম্মদ তৈয়্যব আলী, উপাধ্যক্ষ মাওলানা মারেফাতুন নুর, মাওলানা আহমদুল্লাহ ফোরকান খান কাদেরী,
মুহাম্মদ এনামুল হক সিদ্দিকী, মুহাম্মদ এরশাদ খতিবী, সৈয়দ মুহাম্মদ আবু আজম, উপাধ্যক্ষ মাওলানা কাযী কামরুল আহসান, অধ্যাপক কাজী মাওলানা ইউনুছ, ইমরান হাসান কাদেরী, মাওলানা নঈমুল হক কাদেরী, মাওলানা মুখতার আহমদ রিজভী, মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী, মাওলানা সেকান্দর হোসাইন আলকাদেরী প্রমুখ। সালাত-সালাম শেষে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ, বিশ্বের নিপীড়িত মানবতার পরিত্রাণ এবং দেশবাসীর ওপর আল্লাহর রহমত কামনায় মুনাজাত করা হয়। যোহর-আসর-মাগরিব ও এশার নামাজ জামাত সহকারে আদায় করা হয় সুন্নি সম্মেলনে।