কক্সবাজার প্রতিনিধি;
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় সদর ইউনিয়নের লম্বরী এলাকায় সোহেল সিকদার নামে এক বাসিন্দার নিজ বাড়ি সংলগ্ন বাগানে সম্প্রতি পঙ্গপালের মতো একধরনের পোকা আক্রমণ করেছে । এই অজ্ঞাত পোকার দলের ফলে তার বাগানে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। বাগানমালিক সোহেল সিকদার জানান,গত শনিবার (১৮ এপ্রিল) পোকার আক্রমণের ফলে বাগানের বিভিন্ন ফলজ ও বড় বড় গাছের পাতাগুলোতে হাজার হাজার পোকা এসে খেয়ে ফেলছে লতাপাতা ও সবুজ গাছপালা। দিনের বেলায় এই পোকার আক্রমণ কম দেখা গেলেও রাতে আক্রমণের মাত্রা নাকি অনেক বেড়ে যায়। এমনকি এই পোকার ভয়ে সন্ধ্যার পরে ঘরের বাইরে উঠানে পর্যন্ত বের হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে ।
গত সোমবার সকালে টেকনাফ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় থেকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শফিউল আলম এসে পোকাগুলো দেখে গেছেন।মোঠোফোনে এবি টিভির প্রতিবেদক কে এস এম শাহজাহান (উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা)জানান, উনারা ইতিমধ্যেই দুইদিন কীটনাশক ছিটিয়েছেন। এটা পঙ্গপাল কিনা জানতে চাইলে উনি প্রশ্নের উত্তরে বলেন যদিও অনেক পত্রিকায় পঙ্গপালের সাথে তুলনা করে লেখা হয়েছে, তবে পঙ্গপালের শারীরিক ধরন ও বৈশিষ্টের সাথে কিছুটা মিল থাকলেও এটা আকারে এতো ছোট যে প্রায় মাছির শারীরিক গঠনের মতো।
তাই এস এম শাহজাহান প্রাথমিকভাবে বলে দিয়েছেন যে, যেহেতু দুইদিন স্প্রে করার ফলে এটা অনেকটাই কমে এসেছে এবং আকারেও ভিন্নতা আছে তাই এটা পঙ্গপাল না। পঙ্গপাল আকারে আরো বড় হয় এবং বড় পাখনাও থাকে কিন্তু এই পোকা পঙ্গপাল না। তবুও পোকার নমুনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে নিশ্চিত করলেই বলা যাবে এটি আসলে কী। আক্রান্ত বাগান পরিদর্শন শেষে তাদের ধারণা হচ্ছে, এই পোকার স্থায়িত্ব যদি বেশী থাকে তাহলে এটা গোটা এলাকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কৃষি অফিসার বলেন আক্রান্ত বাগানে কীটনাশক প্রয়োগের ফলে পোকা দমন হওয়া শুরু হয়েছে ।
আশা করা যায় একটা ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। প্রয়োজনে সরকারিভাবে পোকা দমনের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মন্তব্য করেন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা।
পঙ্গপাল কী? পঙ্গপাল মূলত এক প্রকার পতঙ্গ। এটি আর্কিডিডি পরিবারে ছোট শিংয়ের বিশেষ প্রজাতি যাদের জীবন একসাথে দল বা ঝাঁক বাঁধার পর্যায় থাকে। পতঙ্গগুলো সাধারণত একা থাকে। তবে বিশেষ অবস্থায় এরা একত্রে জড়ো হয়। তখন তাদের আচরণ ও অভ্যাস পরিবর্তিত হয়ে শষ্যলিপ্সু হয়ে পড়ে। পঙ্গপাল ও ঘাস ফড়িংয়ের মধ্যে কোন পার্থক্যগত শ্রেণীবিন্যাস নেই। বিশেষ অবস্থায় তাদের প্রজাতিগুলোর একত্রিত হওয়ার যে স্বতন্ত্র প্রবণতা দেখা যায় সেটাই মূল পার্থক্য।
নতুন ধরনের পঙ্গপালের ১০ লাখ পতঙ্গের একটি ঝাঁক একদিনে ৩৫ হাজার মানুষের খাবার খেয়ে ফেলতে পারে। এপ্রিলে এই পঙ্গপাল নতুন করে বংশবৃদ্ধি করে। এ সময়টিকে পঙ্গপালের বংশবৃদ্ধির সময় বলে বিবেচনা করা হয়। কতটা ভয়ঙ্কর এই পঙ্গপাল? ১৯৯৩ সালে ব্যাপক আকারে পঙ্গপালের আক্রমণের মুখে পড়ে পাকিস্তান। এই ধাপে ২০১৯ সালের মার্চে পাকিস্তানে প্রথম পঙ্গপালের আক্রমণ শনাক্ত হয়। পরে এটি সিন্ধু, দক্ষিণ পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনওয়া প্রদেশের ৯ লাখ হেক্টর এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কোটি কোটি রুপি মূল্যের ফসল ও গাছপালা।
ভারত-পাকিস্তানের বাইরে সৌদি আরবও পঙ্গপালের আক্রমণের মুখে পড়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, পতঙ্গটির আক্রমণ দেশটির কৃষি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। আফ্রিকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে ৭ কোটি ডলারের অনুদান চেয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। সংস্থাটির প্রধান মার্ক লোকক বলেন, আফ্রিকায় এই ভয়াবহ পঙ্গপাল উদ্বেগজনক হারে ফসলাদি ধ্বংস করছে। ইতোমধ্যেই খাদ্য স্বল্পতায় থাকা পরিবারগুলো তাই আরও বিপাকে পড়ছে।