নিউজ ডেস্কঃ
মাহে রমজানকে সামনে রেখে হঠাৎ অস্বাভাবিক হওয়া আদার দাম কমেছেও লাফিয়ে, ঢাকার বাজারে ২ দিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি আদার দাম কমেছে ১০০ টাকার উপরে। আজ শুক্রবার ঢাকার খুচরা বাজারে চীনা ও থাইল্যান্ডের আদা বিক্রি হচ্চে প্রতিকেজি ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকায়, যা গেল সপ্তাহে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছিল অস্বাভাবিকের বাজারকে স্বাভাবিক করার জন্য ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের বিশেষ অভিযান চালানো হয়। অস্বাভাবিক এই মূল্য বৃদ্ধি সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হওয়ার পর আদার দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে মাঠে নামে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
বাজার তদারকি করে তারা বলছিলেন, কারসাজি করে আদার দাম বাড়ানো হয়েছে, আমদানি মূল্যের ৪ গুণ দামে এই পণ্য পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। তাই এসব অপরাধে বিভিন্ন জায়গায় আড়তদার, দোকানিদের জরিমানাও করা হয়েছে। তারপরে আদার দাম কমতে শুরু করে। রামপুরার মসলা বিক্রেতা রাকিবুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় আদার দাম কিছুটা কমে এসেছে। প্রতিকেজি আদা ২০০ টাকা, রসুন প্রতি কেজি ১৬০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আদার দাম এক সপ্তাহ আগে ৩৫০ টাকায় উঠেছিল ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের অভিযানের পর আদার দাম কমে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা হয়ে গেছে।
একই এলাকার মার্জিয়া ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, লকডাউনের কারণে বেচাবিক্রি কমে যাওয়ায় আদা-পেঁয়াজ-রসুনসহ পঁচনশীল পণ্যগুলো রাখা বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি জনান, “আদার বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। দেখা যাচ্ছে প্রতিদিনই দাম বাড়ছে কমছে। এজন্য দোকানে আদা রাখছি না। তবে সম্প্রতি আদার দাম কিছুটা কমেছে, এবার দোকানে আধা রাখতে পারব।” সরবরাহ ঘাটতির অজুহাত দেখিয়ে গত ১০ এপ্রিলের পর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে আদার দাম। আমদানি মূল্য প্রতিকেজি ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকা হলেও খুচরায় আদার দাম উঠে যায় প্রতিকেজি ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায়।
দেশের প্রধান পাইকারি বাজার চট্টগ্রাম নগরীর খাতুনগঞ্জে সরকারি তদারকি অভিযানে দেখা যায়, আমদানিকারকরা সরবরাহ ঘাটতির সুযোগে নিজেদের লোকের মাঝে হাতবদলের মাধ্যমে প্রায় তিনগুণ বাড়িয়েছে আদার দাম। এর প্রভাব পড়ে সারা দেশে। আজ শুক্রবার ঢাকার শ্যামবাজারের পেঁয়াজ রসুন ও আদার পাইকারি বিক্রেতা ইউনুস হাওলাদার জানান, “পাইকারিতে আদার দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। প্রতিকেজি চীনা আদা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে। এছাড়া দেশি রসুন প্রতিকেজি ৯০ টাকা এবং পেঁয়াজ ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।” তবে খুচরায় এখনও সব জায়গায় আদার এই পড়তি দাম রাখা হচ্ছে না।
মিরপুরের পীরেরবাগের আল রাজ্জাক মুদি বিতানের দোকানি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তিনি প্রতি কেজি ৩০০ টাকা দরে যে আদা কিনেছিলেন তা এখনও বিক্রি করে শেষ করতে পারেননি। মাঝখানে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি করলেও এখন আবার কেনা দামে বিক্রি করা শুরু করেছেন। এতে তার লোকসান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই এলাকার দোকানি ঝন্টু বলেন, লকডাউনের কারণে বেচাবিক্রি একেবারেই কমে গেছে। সে কারণে তিনি আপাতত আদা রসুন বিক্রি করছেন না। প্রতি কেজি ৪৮ টাকা দরে কেনা পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৫০ টাকায়। আদা ছাড়া অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামে খুব একটা হেরফের হয়নি।
রামপুরার মারজিয়া স্টোরে প্রতিকেজি ছোলা ৮০ টাকা, বড় দানার মসুর ডাল ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকা, ফার্মের মুরগির ডিম প্রতিডজন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।ঢাকায় মার্চ মাসে ডিমের দাম প্রতি ডজন ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকার মধ্যে থাকলেও লকডাউনের কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায় দামও কমে গেছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা রিয়াজুল বাশার জানান, লকডাউন পরিস্থিতির কারণে বেশ কয়েক দিন তিনি বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো অনলাইনে অর্ডার করে নিয়ে আসছেন। সে কারণে আপাতত শাক-সবজি ও স্বল্প সময়ে পচনশীল পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। ডাল-আলুর মতো যেসব পণ্য অনেক দিন টিকে থাকে সেগুলো কিনছেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা সাজিদুল হক সাজু বলেন, মাহে রমজানের কথা বিবেচনা করলে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার ‘স্থিতিশীলই আছেন’।
তবে এবার গরুর মাংসের দাম বেঁধে দেওয়া হয়নি। প্রতি কেজি মাংস ৫৮০ টাকা থেকে ৫৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। “এর বাইরে বাজারে শাক সবজির দামও কিছুটা ঊর্ধমুখী। আমার বাসার কাছে একটি সুপরিচিত সুপারশপে কাঁচা পেঁপে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকায়। লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকায়। বাদবাকি পণ্যের দাম স্থিতিশীল মনে হয়েছে,” জানান সাজু। এবার থেকে পুরো রমজানজুড়ে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে বলে জানিয়েছেন ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর কর্মকর্তা