এম. সাদ্দাম হোসাইন সাজ্জাদঃ
গহিরার সাগরপাড়ের মানুষগুলোর দুঃখ চিরাচরিত। সেই ছোটকাল থেকেই একই সিনেমা দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে আনোয়ারা-বাঁশখালী উপকূলীয় অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ মারা যায়। গৃহহীন হয়ে পড়ে কয়েক লাখ পরিবার। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর গহিরার গণমানুষের একটি দাবি ছিল একটি স্থায়ী বেড়িবাঁধ। আজ ৩০ বছর গত হওয়ার পরেও তাদের সে দাবি আজ অবধি পূরণ হয়নি। বারবার বড় কোন ঝড় আসলে উপকূলবাসীর রূহ হাতে নিয়ে দৌঁড়াতে হয়।
জানা যায়, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বাজেট বাস্তবায়ন হলেও সে বাজেটের সুষ্ঠু প্রয়োগ না করার ফলে একটি স্থায়ী বেড়িবাঁধ আজও তারা পায়নি। যাদের হাতেই কাজ করার অনুমতি আসে তারা ঘোষিত টাকার কিছু অংশ ব্যবহার করে নামমাত্র কিছু কাজ করে। বাকি টাকা যায় তাদের ব্যাংক একাউন্টে। উপকূলবাসীকে সাগরের তীব্র জলোচ্ছ্বাস মোকাবেলা করতে দিতে নেতারা দুর্নীতির টাকায় শহরে কিংবা নগরে গড়ে তোলে স্বপ্নের এয়ার কন্ডিশন্ড আবাস।
এতোদিন উপকূলবাসীর দুঃখ কখন শেষ হবে সেটা তারা নিজেরাও জানতোনা। কিন্তু তাদের আশায় প্রদীপ জ্বেলে বসে গত ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় আনোয়ারা ও পতেঙ্গা উপকূল রক্ষায় জন্য ২৮০ কোটি টাকা অনুমোদন। যেখানে আনোয়ারা-কর্ণফুলীর জন্য বরাদ্দ ছিল ২৫০ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় আনোয়ারায় ১ হাজার ৫৪০ মিটার, কর্ণফুলী থানার শিকলবাহায় ৮০০ মিটার ও কৈয়গ্রামের পেশকারহাট এলাকায় ৪০০ মিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করার কথা ছিল।
পরিকল্পনা অনুযায়ী উপকূলীয় বাঁধ রক্ষায় কিছু স্থানে সিমেন্ট ও কংক্রিটের ব্লক (সিসি ব্লক) বসানো, কোথাও জিও ব্যাগ স্থাপন আবার কোথাও মাটি ভরাটের কথা রয়েছে। তবে বেশির ভাগ এলাকায় কাজের অগ্রগতি এখনো অদৃশ্যমান। ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রকল্পের কার্যাদেশের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। যার ফলে বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড় এসে উপকূলবাসীর স্বপ্নকে বারবার ধূলিসাৎ করে দেয়। গহিরার উপকূলবাসী আশা করছিল, এবার বুঝি তারা পাবে একটি স্থায়ী বেড়িবাঁধ, একটি সোনালী সুদিন। কিন্তু না, তাদের আশা আবারও ভেঙে চুরমার করে দেয় তাদেরই এলাকার কিছু লেবাজধারী নেতা। যারা ইতোমধ্যে ২৫০ কোটি থেকে কিছু টাকা খরচ করে নামমাত্র কিছু কাজ দেখিয়েছে।
২৫০ কোটি টাকার বাজেট হয় ২০১৬ সালে। কিন্তু ৫ বছর পরে এসেও যে লাউ সেই কদু।এদিকে ঘুর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা গ্রামের কয়েক শতাধিক পরিবার, শতাধিক দোকানপাট, নষ্ট হয়েছে ফসলি জমি। এছাড়া প্লাবিত হয়েছে কয়েকটি মসজিদ ও হেফজখানা।স্থানীয় এক ইউপি সদস্য আমির হোসেন জানান, বেড়িবাঁধের কাজ বর্ষার আগে সম্পন্ন করার কথা কিন্তু বেড়িবাঁধের কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে জানানো হলেও বার আউলিয়ার এদিকে বেড়িবাঁধ দেখাও যাচ্ছেনা। তিনি আরো জানায় একদিকে করোনা অন্যদিকে ঘুর্ণিঝড় আম্পান, আমাদের জীবনযাপন এখন দূর্বিষহ।
এদিকে এলাকাবাসী দাবি করেন, সরকারি বরাদ্দের টাকা দিয়ে যদি সুষ্ঠুভাবে বেড়িবাঁধের কাজ করা হতো, তাহলে তাদের বারবার এ অবস্থায় পড়তে হতোনা। তারা আরো জানান, সরকার বরাদ্দ করে ঠিক, কিন্তু সে বরাদ্দ উঠিয়ে দেওয়া হয় রাঘববোয়ালদের হাতে। তারা বরাদ্দের কিছু টাকা থেকে কাজ দেখিয়ে বাকি টাকা মেরে দেয়। কাজের সাথে সম্পৃক্ত কয়েকটি টিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও এলাকার কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তারা বলেন, সরকারের বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে স্থায়ী বেড়িবাঁধ না করা হলে এ সমস্ত দুর্নীতিবাজদের মাশুল দিতে হবে।গহিরা গ্রামের মাওলানা শায়ের এনামুল হক এনাম মনে করেন, এই দাবিটি আমি সহ পুরো ইউনিয়নবাসীর দাবি যে,
ভূমিমন্ত্রী আলহাজ্ব সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ সরকার ঘোষিত বাজেটের কাজ যদি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে করা হয়, তাহলে তারা স্থায়ী বেড়িবাঁধ পাবে, না হয় প্রতিবারের মত একটি বালির বাঁধ ছাড়া আর কিছুই পাবে না। রায়পুর ইউপি চেয়ারম্যান জানে আলম বলেন, পানিতে ডুবে গেছে বার আউলিয়া বাজার, কবির মিয়ার বাড়ি, ইসমাইল মিয়াজির বাড়ি, বাইন্না পাড়া, মাওলানা আমীর হামজার বাড়ি, সিকদার বাড়ি, হাজি কেরামত আলী জামে মসজিদ, এবং পার্শ্ববর্তী হেফজখানা সহ পুরো এলাকায় জুড়ে জোয়ারের পানি উঠানামা করছে। এছাড়া উত্তর পরুয়া পাড়ার বাঁধ ভেঙে কাল বা পরশু পানি ঢোকার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি দাবি করেন, বেড়িবাঁধ এভাবে অরক্ষিত থেকে গেলে আগামী বর্ষায় গহিরা তথা রায়পুরকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।এদিকে উপজেলার জুঁইদন্ডি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটা এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ খোলা হওয়ার ফলে ৪০/৫০টি পরিবারের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয় বলে জানান চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন খোকা। তিনি বলেন, তিন বছর আগে বেড়িবাঁধের কাজ আরম্ভ হবার পরেও টিকাদারদের গাফলতির কারণে এখনো কাজ শেষ না হওয়ায় এই অবস্থা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, আম্পানের দাপটে উপকূলীয় অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাস হয়। গহিরার বেড়িবাঁধ খোলা থাকায় দক্ষিণ গহিরা দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে। এতে করে বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি নষ্ট হয়। শীঘ্রই তাদেরকে সরকারিভাবে সহায়তা পৌঁছানোর চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।