নিউজ ডেস্কঃ
চট্টগ্রামে বিএসআরএমের কারখানায় গতকাল শনিবার (৬ জুন) কাজ করার সময় লোহার গলিত সিসায় দগ্ধ হয়ে ৩ শ্রমিকের মৃত্যু হওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলা জনিত অপরাধে মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে কারখানার ফ্লোর ইনচার্জকে আসামি করে মামলা করা হয়।আজ রবিবার দুপুরে কারখানেতেই দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া আবুল কাশেমের শ্যালক আবদুর রহিম জোরারগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। সত্যতা নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া।
তিনি জানান, ‘নিহত শ্রমিক কাশেমের শালা আজকে দুপুরে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। সেখানে কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলা জনিত অপরাধে মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে কারখানার ফ্লোর ইনচার্জকে আসামি করা হয়েছে। আমরা মামলা হিসেবে তা এন্ট্রি করেছি। এখন তদন্তে উঠে আসবে দুর্ঘটনার কারণ কি।’গতকাল শনিবার বিকেলে সংগঠিত দুর্ঘটনায় ৫ জন শ্রমিক গুরুতরভাবে দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে কাশেম নামে এক শ্রমিক৷ গতকাল শনিবার রাতে দগ্ধ ৪ শ্রমিককে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে আইসিইউ সুবিধা সম্বলিত অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রওনা দেয় বিএসআরএম কর্তৃপক্ষ।
এরমধ্যে মধ্যরাতে কুমিল্লায় যখন তাদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছে তখনই মৃত্যুর কাছে হার মানেন নজরুল ইসলাম (২৪), গিয়াস উদ্দিন ২৪ নামে দুই শ্রমিক।এরআগে দুর্ঘটনাস্থলেই শনিবার বিকেলে মৃত্যু হয় আবুল কাশেম (২৭) নামে অপর শ্রমিক। তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভোর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হয় নুর হোসেন (৩০), মহিউদ্দিন (২৮) নামের অপর দুই শ্রমিককে।গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চমেকের বার্ন ইউনিটের ডা. মিথুন পালিত বলেছিলেন,
‘ অগ্নিদগ্ধদের অনেকের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গিয়াস উদ্দিন ৯৮ শতাংশ ইনহেলেশন ইনজুরিতে জ্বলছে, নজরুল ইসলাম ১০০ শতাংশ, মহিউদ্দিন ৮০শতাংশ এবং নুর হোসেন ৬০ শতাংশ ইনহলেশন ইনজুরিতে জ্বলছে।’ এদের মধ্যে গিয়াস আর নজরুল দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যান।দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, বিএসআরএম কারখানায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে চুল্লি থেকে তরল তপ্ত লোহা উপচে পড়ে নিচে কর্মরত শ্রমিকদের ওপর। গুরুতর আহত অবস্থায় ৫ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আপাতত কারখানায় কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা কারখানা পরিদর্শনে এসেছি।
বিএসআরএম এর এসিসটেন্ট ম্যানেজার (পিআর এন্ড কমিউনিকেশন) ওমর সোহাইব বলেন, অপ্র্যাশিত এই পরিস্থিতি ও দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএসআরএম কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে এবং হতাহতদের প্রয়োজনীয় সহায়তার প্রতিশ্রুতি জানিয়েছে।কোন কলকারখানায় দুর্ঘটনা হলেই নিয়ম অনুযায়ী দ্রুত পরিদর্শন করে সরকারি প্রতিষ্ঠান কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর। কিন্তু বিএসএম কারখানায় দুর্ঘটনায় তিনজন শ্রমিক মারা গেলেও ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির চট্টগ্রামের উপ-মহাপরিদর্শক মো. আল আমিন সিভয়েসকে বলেন, দুর্ঘটনার বিষয়টি কারখানা থেকে আমাদের জানানো হয়। এরপর আমি ওখানকার কারখানা পরিদর্শককে রিপোর্ট দেওয়া কথা বলেছি। সে কেন যায়নি আমি জানিনা। হয়তো করেনাকালে আজ যেতে পারেনি কাল যাবে আরকি।তবে দুর্ঘটনার পর কারখানায় ফায়ার সার্ভিসের টিম গেলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ সব কিছু নিয়ন্ত্রণে এনেছে বলে জানিয়েছে তাদের আর কারখানায় প্রবেশ করতে দেয়নি বলে জানা গেছে।
বিএসআরএমের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) তপন দাশ গুপ্তা সিভয়েসকেবলেন, ‘চমেক হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে দগ্ধ চারজনকেই অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় রাত ৮টার দিকে। তবে দুজন পথেই মারা যান। অন্য দুজনকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে আইসিইউ সাপোর্ট। তাদের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয় কোম্পানি বহন করবে। এছাড়া নিহত শ্রমিক শ্রমিকদের পরিবারকে নিয়ম মেনে সহায়তা করা হবে।’