পেটে ভাত না জুটলে ও যিনি খুব দায়িত্ব নিয়ে খড় কুটা কুড়ানো জন্য নিয়মিত ঘর থেকে বের হতেন তিনি হলেন বাসন্তী। কুড়িগ্রাম জেলা থেকে ৩০ কি.মি. দুরে চিলমারী, চিলমারী সদর থেকে ৫কি.মি. দুরে বাবা কন্দুরাম দাস ও মাতা শুটকি বালা ঘরে ১৯৪৬ সালে জন্মগ্রহন করেন বাসন্তী। প্রতিটি বাবা মা স্বপ্ন দেখেন তাদের সন্তান যেন জন্মের পর সুন্দর একটি পৃথিবী দেখুক আর সে যেন শারীরিকভাবে সুস্ত থাকেন কিন্তু এদিকে বাসন্তী সুন্দর একটি পৃথিবী দেখলে জন্মের পর হয়েছেন বাকপ্রতিবন্ধী।
জন্মের পর নিজে যখন ঠিক ভাবে চলাফেরা করতে পারেন নি ঠিক ভাবে সবার সাথে মিশতে পারেন নি, সেখানে তার এক মাত্র চলার সাথী ছিলো বাবা মা। আর সেই বাসন্তী কি না সেই চলার সাথী ও সাহস যোগানোর মতো মা বাবা হারিয়ে ফেলেন দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে। তখন থেকে তার জীবন যাপন চলে ভাইদের সাথে থেকে। ঠিক মতো ভাত কপালে না জুটলে ও জুটুছে প্রতিদিনের কাজের রুটিন খড়ি কুড়ানো ও নতুন কাউকে দেখলে তাহার দিকে তাকিয়ে ফিলফিল করে হাসাতে থাকা।
বিয়ে হয়েছিলো বাসন্তীর বাবুরামের সাথে, কিন্তু কপালে জুটলো না স্বামীর সংসার একই গ্রামের একটি মেয়ে সাথে প্রেমে লিপ্ত হয়ে তাকে নিয়ে পাড়ি জমান ভারতে বাবুরাম। নেমে আসে বাসন্তী জীবনে কালবৈশাখী ঝড়।দিন চলতে থাকে বাসন্তী দুঃখ কষ্টের সাথে। দেখা দেয় দেশে বন্যা ও দুর্ভিক্ষ, তাই না খেয়ে মারা যেতে হয় অনেক মানুষকে। সেই সময় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সাংবাদিক আফতাব উদ্দিন তাকে স্বাধীনতা বিরোধী জেলা প্রসাশকের সঙ্গে আসা একজন কৌশলে ডেকে নিয়ে কুপরামর্শ দেন।
জেলা প্রসাশক রুহুল আমিন মজুমদারকে রমনা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আনসার আলী বিষয়টি সম্পের্কে অবগত করলে তিনি বুঝে উঠতে পারেন নি কি করবেন।এসময় সাংবাদিক তিনি আনসার আলীকে ডেকে নিয়ে দু জনের একটি নাটক তৈরির জন্য চলে যান জেলে পল্লীতে । বাসন্তীকে জাল পরিয়ে লজ্জা নিবারনের মিথ্যা সান্তনা বুকে নিয়ে কলা গাছের ভেলা চড়ে কলা গাছের মান্জা ও পাতা সংগ্রহ করছেন আরেক তিনি ভেলাটাকে নিয়ন্ত্রন করছেন।এই ফটোটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
এতে করে মুজিব সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট হয়।এই দুর্ভিক্ষ দেখে বিশ্ব মানবতার সংগঠন বাংলাদেশকে সহায়তা হাত বাড়িয়ে দেন। সরকারের পক্ষ থেকে নিঃস্ব জেলে গুলোকে পুনর্বাসন করে, জাল, দড়ি ও আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করেন।সরকারের পক্ষ থেকে সিন্ধান্ত নেওয়া হয় ২০৪ টি পরিবারকে বাসন্তী গ্রাম কারার,পরবর্তীতে ২০৪ টি পরিবারকে বাসন্তী গ্রাম বানানো হয়। ১৯৯৬ সালে বাসন্তীর গ্রামকে সরকারী ভারে সুদ ছাড়া ২০৪ টি পরিবারকে ৬লাখ১২ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয় কিন্তু সেই নামের তালিকায় বাসন্তীর নাম ছিলো না।পরে কারিতাস নামে একটি এনজিও বাসন্তীকে একটি ঘর সাথে পুরো গ্রামটিকে ঘর দেন।
কিন্তু নদী ভাঙ্গনের সময় তারা ঘর গুলো বিক্রি করেন ক্ষুধার জ্বালায়। সাথে ভেঙ্গে যায় বাসন্তীর গ্রামটি । এখন বাসন্তীর নামে দেওয়া হয়েছে বয়স্ক ভাতা। প্রতি মাসে যা টাকা পায় সেই টাকা ভাইদেরকে দিয়ে তাদের সংসারে খেয়ে পুড়ে জীবন যাপন করেন। বাসন্তীর ভাবী বলেছিলো যদি তার ভাতিজিদের কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হতো তাহলে তাদের অভাবের সংসার টি একটু ভালো ভাবে চলতো। জেলা প্রসাশক সুলতানা বেগমের উদ্দেগে বাসন্তীকে একটি ঘর দেওয়া হয়, কিন্তু ভাগ্যের কি পরিনাম সেই ঘরটিতে থাকতে হচ্ছে তাদের পরিবারের কয়েক জন সদস্যকে তাদের ঘর না থাকায়। কবে তাদের এই কষ্ট থেকে মুক্তি মিলবে হয়তো সেই আশার আলো দেখতেছেন বাসন্তী ও তার পরিবারের লোকেরা।
মোঃ নু আলম ইসলাম রাঙ্গা, চিলমারী, কুড়িগ্রাম।