আরিফুল ইসলাম সুমন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে থাকলেও শুধুমাত্র নিজেদের মধ্যে ঐক্য সংকটের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগ পিছিয়ে আছে এমনটাই দাবি করেছেন দলটির তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে থাকলেও এখানকার আওয়ামীলীগের প্রথমসারির নেতাদের মধ্যে মিলমিশ নেই। নেতারা যার যার মতো দলীয় কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন- এমন দাবিও দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের।
এদিকে অনেক সময়ে আওয়ামীলীগের নেতারা মুখে ঐক্যের আহবান জানালেও, বাস্তবে নেতায় নেতায় দ্বন্দের কারণে এখানকার ক্ষমতাসীন দলটিতে সহসাই ঐক্য গড়ে উঠছে না। উপরন্তু এখানে আগামি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঐক্যের পরিবর্তে আওয়ামীলীগে এখন বিভাজনের মাত্রাই বেশী দেখা যাচ্ছে।
আর এমনটাই যদি চলতে থাকে তাহলে এখানে ‘নৌকার’ বিজয় কষ্টদায়ক হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাই বিভেদ ভুলিয়ে শীঘ্রই সরাইল আওয়ামীলীগে নেতাদের মধ্যে ঐক্যের সূচনা গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। কারন হিসেবে তৃণমূল নেতৃবৃন্দ জানান, এখানে নেতায় নেতায় দ্বন্দের কারণে অনুগামী হয়ে এখন তারাও বিভক্ত হয়ে পড়ছেন। যার প্রভাব ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) সংসদীয় আসনে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রথম যুগ্ম আহবায়ক উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলী আজাদ এর অনুসারী এখানকার আওয়ামীলীগের একটি বড় অংশ। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম এর নেতৃত্বে রয়েছে আওয়ামীলীগের একটি অংশ। অপরদিকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব রফিক উদ্দিন ঠাকুরের নেতৃত্বে রয়েছে আওয়ামীলীগের আরেকটি অংশ। এই ত্রি-ধারায় রয়েছে এখানকার আওয়ামীলীগ। যার ফলে এখানকার ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগসহ অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের উপজেলা ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে দ্বিধা বিভক্তি দৃশ্যমান রয়েছে।
যদিও বিভিন্ন সময়ে জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর নেতৃত্বে জেলার প্রথমসারির নেতৃবৃন্দ একাধিকবার এখানকার একাধিক গ্রুপের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে দলের বৃহৎ স্বার্থে তাদের মাঝে ঐক্য গড়ার আহবান জানানো হলেও বাস্তবে এখানকার কয়েকজন নেতার অসহযোগিতার কারণে এর সুফল পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
এদিকে দলটির ত্যাগী নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের শক্ত অবস্থান থাকলেও সাংগঠনিক ভাবে পিছিয়ে রয়েছে তারা। সংগঠনের ভেতরের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসণের মধ্য দিয়ে সরাইল আওয়ামীলীগ আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগেই নিজেদের সুসংগঠিত করে ঐক্য ফিরিয়ে আনতে সক্ষম বলে আশাবাদ প্রত্যয় করেছেন দলের শীর্ষ ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে শীর্ষ ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বর্তমানে এখানে দলকে সংগঠিত করার কোনো কার্যক্রম নেই। উপরন্তু চলছে নানাভাবে নিজেদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যাবাণে জর্জরিত করার প্রতিযোগিতা। নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসানের বদলে চলছে শক্তি প্রদর্শনের মহরা। বর্তমানে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ধরাশায়ী বা কোনঠাসা করার কসরতে লিপ্ত।
আর এ নিয়ে এখন সংশয়ে ভুগছেন জেলার আওয়ামী ঘরানার রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল। অপরদিকে সংগঠনকে অগোছালো অবস্থায় রেখে নির্বাচনী বৈতরণী পাড় হওয়ার ব্যাপারেও সন্দিহান হয়ে উঠেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাঁদের পর্যবেক্ষণী অভিমত হচ্ছে, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এতটাই বিপদজ্জনক অবস্থায় রয়েছে যে, যেকোনো মুহুর্তে দলটির ভেতরের দ্বন্দ্ব আরো প্রকট হয়ে উঠতে পারে। ফলে দলটির অভ্যন্তরে ফাটল স্থায়ী রূপ নিতে পারে বলে তাদের ধারণা।
ইতিমধ্যে সংগঠনের মাঝে বিভাজনের দিকটি জনসমক্ষে স্পষ্ট করে তুলেছেন কেউ কেউ। অনেকেই একছত্র আধিপত্য জানান দিতে গিয়ে করছেন বৈরিতা। যার কারণে প্রকৃতপক্ষে কার নির্দেশনায় সরাইল আওয়ামীলীগ সুপরিচালিত হয়ে সু-সংগঠিত হবে তা এখন প্রায় অনিশ্চিত। দলের এমন স্থবির ও অচলাবস্থায় তৃণমূল নেতৃত্ব একটি বিব্রতকর অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। এই সমস্যা কাটিয়ে উঠার কোন নির্দেশনাও নেই তাঁদের কাছে। ফলে হতাশ হয়ে যেনতেন প্রকারে দলের কর্মীরা চলছেন। অনেকটা মাঝি বিহীন নৌকার মতই।