আরিফুল ইসলাম সুমন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশায় এমপি প্রার্থী হয়েছেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকায় তিনি অনেকটা এগিয়ে, এমন খবরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে স্থানীয় তৃণমূল বিএনপি’র ত্যাগী নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
তাদের দাবি, এখানকার তৃণমূল নেতা-কর্মীরা যাকে চিনেন না, এমনকি তৃণমূলের সঙ্গে যার কোনো সম্পর্ক নেই- এমন প্রার্থী তারা চায় না।
দলীয় সূত্র জানায়, এ নির্বাচনে কেন্দ্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন আলোচনায় অনেকটা এগিয়ে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তিনিও এ আসন থেকে “ধানের শীষ” প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চান।
প্রয়াত ভাষা সৈনিক অলি আহাদের মেয়ে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) নির্বাচনী আসনের বিজয়নগর উপজেলার ইসলামপুর এলাকায়।
স্থানীয় বিএনপির ত্যাগী নেতা, কর্মী ও সমর্থকেরা দাবি করেছেন, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা একজন জনবিচ্ছিন্ন নেতা। তৃণমূলের সঙ্গে তার কোনো দলীয় সম্পর্ক নেই। কিছু নেতা-কর্মী তাকে শুধু নামেই চিনেন। এখানে দলের কোনো কর্মকাণ্ডে তাকে কখনো কেউই পায়নি। যার কারণে রুমিন ফারহানাকে এখানকার এমপি প্রার্থী হিসেবে মানতে তারা নারাজ।
বিএনপির ত্যাগী নেতা-কর্মীরা জানান, এই আসন বিএনপির ঘাঁটি এবংদলটির ভোট ব্যাংক। এখানেই এমপি হিসেবে যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন বেশকয়েকজন। যারা দলের দুর্দিনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নিয়মিত খোঁজ -খবর রেখেছেন। নেতাকর্মীদের সাহস দিয়ে গেছেন তারা বিভিন্ন সময়ে।
উদাহরণ দিতে গিয়ে দলটির এখানকার ত্যাগী নেতাকর্মীরা জানান, উকিল আবদুস সাত্তার ভূইঁয়া বিএনপি প্রার্থী হিসেবে এখান থেকে পাঁচবার এমপি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে দলের বৃহৎ স্বার্থে ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী “ধানের শীষ” প্রতীক নিয়ে এখান থেকে বিজয়ী হন, উকিল আবদুস সাত্তার ভূইঁয়ার ত্যাগের কারণেই।
এখানকার আরেক নির্যাতিত ত্যাগী নেতা সরাইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেন মাস্টার। যিনি বিগত এক-এগারো আমলে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করায় যৌথ বাহিনী তাকে গ্রেফতার করেছিল। সেই সময়ে তিনি বহুদিন কারাভোগ করেন।
সরাইল বিএনপির সভাপতি আবদুর রহমান, যিনি দলের ক্রান্তিকালেও আওয়ামীলীগ সরকারের আমল বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের ব্যানারে “ধানের শীষ” প্রতীক নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত “নৌকা” প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করে সরাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, যা সেই সময়ে দলের জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক ব্যাপার ছিলো।
এছাড়াও এখানে অনেক ত্যাগী যোগ্য নেতা আছেন যারা এমপি নির্বাচিত হলে এখানকার মাটি ও মানুষের উন্নয়নে নিবেদিত প্রাণ হিসেবে তারা কাজ করবেন।
এসবের দিকে খেয়াল না দিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা তাদের মনগড়া সিদ্ধান্তে যাকে খুশি তাকেই মনোনয়ন দিয়ে তৃণমূলের ঘাড়ে চাপিয়ে দেন, যা সত্যিই কষ্টদায়ক। তবে এইবার তৃণমূলের কথা ভেবে “বহিরাগত” প্রার্থীকে মনোনয়ন না দিতে এখানকার দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুরোধ জানান।
সরাইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমি ৩২ বছর যাবত বিএনপি রাজনীতি করি। ২৮ বছর সরাইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি। রুমিন ফারহানার নাম শুনেছি, সরাসরি দেখিনি। তিনি জীবনে কখনও এই এলাকায় এসেছেন বলে মনে হয় না। এমন একজনকে তৃণমূল ভালভাবে নেবে না, এটা হাই-কমান্ডেরও বোঝা উচিত।’
আবদুর রহমান জানান, এ আসনে তিনিও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সাংবাদিকদের বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির নেতাদের সাথে আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনায় আমি সেখানে প্রার্থী হয়েছি। তাছাড়া আমার বাবা এই জনপদের মাটি ও মানুষের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আমার বাবা এ আসন থেকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। সেই হিসেবে সরাইল কিন্তু আমারও। যদিও পরে সীমানা পুনঃনির্ধারণে ইসলামপুর এলাকাটি বিজয়নগর উপজেলার অধীনে চলে গেছে।
তৃণমূলের সাথে সম্পর্ক নেই, এর জবাবে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) নির্দেশে বেশিরভাগ সময় আমাকে দেশের বাইরে থাকতে হয়েছে। দেশেও প্রত্যেক দিন টিভি চ্যানেলে দলের হয়ে কথা বলছি। সরাইলে থাকলে যেটি সম্ভব হতো না।’
তিনি দাবি করেন, ‘দীর্ঘদিন বিএনপি, আওয়ামী লীগ সরকারের কারণে কোণঠাসা।
দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছি।দল মনোনয়ন দিলে তৃণমূলে যোগাযোগ বাড়বে, তখন সব ভুল বোঝাবুঝি দূর হবে। সবাই ধানের শীষকে বিজয়ী করতে কাজ করবে।’
এদিকে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মোহাম্মদ শামীম, ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি এসএন তরুণ দে, জাভেদ হাসান স্বাধীন, আহসান উদ্দিন খান শিপন, আশুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু আসিফ আহমেদ, সরাইল উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান এবং সরাইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মাস্টার।