
মাহমুদুল হাসান:
কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাহ ইউনিয়নের ভোমরিয়া ঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী “রাফিয়া আলম জেবা” এবং
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার বাউসাইদ গ্রামের সিএনজি চালক ইউনুস মিয়ার মেয়ে “মুন্নি আক্তার”।তারা চলমান পিইসি (প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী) পরীক্ষার্থী। অদম্য মনোবল তাদের।এরা হার নামানা শিশু।
কক্সবাজার:
নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবেনা। জেবা’র দূ’টি হাতই নেই। পায়ে লেখা শিখেছে। কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁহ আদর্শ কেজি স্কুল পিইসি পরীক্ষা কেন্দ্রে সম্পূর্ণ পায়ে লিখে পিইসি পরীক্ষা দিচ্ছে।এদের ইচ্ছা শক্তি অনেক।ঈদগাঁহ ইউনিয়নের পশ্চিম ভোমারিয়া ঘোনা গ্রামের নিম্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের কৃষক শাহ আলম ও গৃহিনী ছফুরা আক্তারের কণ্যা রাফিয়া আলম জেবা।২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর জেবা’র জন্ম।
জেবার ইস্কুলের ও ভোমারিয়া ঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাব্বির আহামদ জানান, জেবা’র পড়া-লেখার প্রতি খুব আগ্রহ। এবারের সরকারি চুড়ান্ত মডেল টেষ্ট পরীক্ষায় জেবা পায়ে লিখে জিপিএ “এ” পেয়েছে।
জেবা একজন জন্মগতভাবে পূর্ণ প্রতিবন্ধী হলেও কোন প্রতিবন্ধী ভাতা পায়না। সরেজমিনে প্রতিবন্ধী জরীপ করে তালিকাভুক্ত করা সমাজসেবা অফিসের নিয়মিত রুটিন কাজ হলেও কক্সবাজার সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসে পূর্ণ প্রতিবন্ধী রাফিয়া আলম জেবা’র কোন তথ্য নেই।তবে বিদ্যালয়ের অন্যান্য স্বাভাবিক শিক্ষার্থীর মতো জেবাও বিদ্যালয় থেকে নিয়মিত উপবৃত্তি পায়।
উপজেলা কক্সবাজার সদর সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ বেলাল হোসাইন জানান, প্রতিবন্ধী হিসাবে বিধি মোতাবেক রাফিয়া আলম জেবাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রত্যেক পরীক্ষায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৩০ মিনিট সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়। প্রাথমিক শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও পশ্চিম চৌফলদন্ডী হাকিমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দ্বীন মুহাম্মদ জানান, রাফিয়া আলম জেবা’র মতো শিক্ষার্থীরা সরকারি ও বিত্তশালীদের পৃষ্টপোষকতা পেলে শিক্ষায় অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবে। অথচ আমাদের সমাজে এ ধরনের নাগরিকদের প্রতি প্রায়শ উদাসীনতা দেখানো হয়।জেবা জিপিএ-৫ পেয়ে পিইসি উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য সকলের দোয়া ছেয়েছেন। রাফিয়া আলম জেবাকে দেখলে মনে হয়, জেবাই অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ। সাবাশ জেবা! পেছনে থাকাবনা। এগিয়ে যাও দূরন্ত গতিতে। সমস্ত প্রতিকূলতা হার মানুক, তোমার অদম্য সাহস, শক্তি, ইচ্ছা আর মনোবলের কাছে। অজস্র ভালোবাসা তোমার জন্য
টাঙ্গাইল:দেলদুয়ারের বাউসাইদ গ্রামের মন্নি আক্তার হাত দিয়ে নয় বরং পা দিয়ে লিখেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছে। তার এমন প্রতিভা তাক লাগিয়েছে অন্যান্য পরীক্ষাদের। শিক্ষকরাও তার পড়াশোনার প্রতি এমন আগ্রহ দেখে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ক্ষুদে এই শিক্ষার্থীকে।মুন্নী শশীনারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাত্রী। অনেকটাই মনের জোরেই পরীক্ষা দিচ্ছে সে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পা দিয়ে লিখেই লেখাপড়াসহ যাবতীয় কাজকর্ম চলে মুন্নী আক্তারের। এবার সে উপজেলার লাউহাটি উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছে। দুই ভাইবোনের মধ্যে সে ছোট। জন্ম থেকেই দুটি হাত নেই তার। পা দিয়েই চলে খাওয়া-দাওয়া লেখাপড়াসহ যাবতীয় কাজ।কষ্ট হলেও পড়ালিখা চালিয়ে যেতে চায় মুন্নি।
মুন্নির বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমএ জলিল জানান, পা দিয়ে লিখেই মুন্নী কৃতিত্বের সঙ্গে পাঁচটি ক্লাস অতিক্রম করেছে। পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইউসুব হোসেন জানান, পা দিয়ে লিখলেও মুন্নী নামের মেয়েটির লেখাগুলো সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন।এক কথায় অসাধারন প্রতিভা।